Saturday, June 15, 2013

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছে। চারদিক অন্ধকারে ঢাকা। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ ব্যতীত আর কিছুই কানে আসছে না। একটু আগেও ঝলমলে রোদ ছিল। আমবাগানের পাশের মাঠে আমরা ক্রিকেট খেলায় মত্ত ছিলাম। ঝড় আরম্ভ হওয়ায় বল, ব্যাট ও স্ট্যাম্প নিয়ে সবাই বাগানের দিকে দৌড়। উদ্দেশ্য, আম কুড়ানো। আমাদের মতো আরও অনেকেই আম কুড়াতে বাগানে ছুটে আসছে। 
বাতাসের বেগ বেশি থাকায় বাগানের গাছগুলো থেকে টুপটাপ শব্দে আম ঝরে পড়ছে। সবাই মজা করে আম কুড়াচ্ছে। কখনো আবার বাহুর জোর খাটিয়ে একটি আম নিয়ে কয়েকজন কাড়াকাড়ি করছে। কেউ কেউ পাত্র নিয়ে আম কুড়াতে এসেছে। অন্যরা নিজের পরনের শার্ট বা টি-শার্ট খুলে আম রাখার পাত্র তৈরি করেছে। এমন সময় মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হলো। বৃষ্টি যেন আম কুড়ানোর মাঝে নতুন এক মাত্রা যোগ করল।
হঠাৎ বিকট একটা শব্দ শুনতে পেলাম। পেছন ফিরে দেখি, একটু দূরে আমগাছের বড় একটি ডাল ভেঙে মাটিতে পড়েছে। ডালটিতে অনেক আম রয়েছে। সবাই সেদিকে ছুট। কাছে গিয়ে দেখলাম ডালটির নিচে চাপা পড়ে আছে একজন। খুব দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। নড়াচড়া করতে পারছিল না। মাথায়ও বেশ আঘাত পেয়েছে। অবস্থা দেখে খুব গুরুতর মনে হচ্ছিল। বড় ভাইয়েরা দ্রুত ডালটি সরিয়ে তাকে বাগানের মাচার ওপর নিয়ে যায়। অন্যদিকে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে কয়েকজন দৌড়াচ্ছে। অবাক কাণ্ড এই, একটু আগেও যারা সামান্য একটি আমের জন্য কাড়াকাড়ি-মারামারি করছিল, তাদের এখন ভাঙা ডালটিতে থাকা শত আমের দিকে চোখ নেই। খেয়াল নেই তাদের নিজ পাত্রে থাকা আমের দিকেও। 
পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, দ্রুত অপারেশন করতে হবে। তার মেরুদণ্ডের কোমরের অংশ ভেঙে গেছে। সৌভাগ্যক্রমে সে বেঁচে গেছে। 
দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে শরীরে বয়ে বেড়াতে হয় সেই দুঃখস্মৃতির চিহ্ন। 
এমন ঘটনার পর থেকে আর কখনো বাগানে আম কুড়াতে যাওয়া হয়নি। 
 যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ

No comments:

Post a Comment