Sunday, June 23, 2013

নেকে ধরেই নিয়েছিল, বাংলাদেশে কবিতার দিন শেষ। আবৃত্তি করা তো বহুদূরের ব্যাপার, কেউ কবিতাই পড়ে না—এমন ধারণাও ছিল অনেকের। কিন্তু কবিতার দিন ফুরিয়ে গেছে—এই ধারণা উড়িয়ে দিয়ে জাতীয় সংসদে কবিতা আবৃত্তি করেছেন বিরোধী দলের এক সাংসদ। সংসদে কবিতা পড়ে সেই সাংসদ প্রমাণ করেছেন, কবিতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ঘরে, বাইরে, চায়ের দোকানে, এমনকি সংসদেও কবিতা পাঠ করা যায়। আহা, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দরা বেঁচে থাকলে আজ কতই-না খুশি হতেন! তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন গোপাল ভাঁড়। কারণ তাঁর যুগে রাজ্য পরিচালনা করে রাজা-মন্ত্রীদের জীবন যখন তামাতামা হয়ে যেত তখন একটু নির্মল বিনোদনের জন্য দরবারে কাব্যরসিকদের আসর বসত। কবিতা আবৃত্তি হতো, গান হতো, নাচ হতো, গোপাল ভাঁড় একের পর এক কৌতুক পরিবেশন করে দরবারে হালকা আমেজ নিয়ে আসতেন। এখন আবার ফিরে আসছে সেই স্বর্ণযুগ। সংসদে আমাদের মন্ত্রী-সাংসদেরা যখন আমাদের উন্নয়ন-ভাবনা করতে করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছেন তখন তাঁদের জীবনে একটু বিনোদন দিতে অনেক সাংসদ ‘চুদুর বুদুর’ মার্কা কথা বলছেন, অজানা বংশলতিকা ধরে টান মারছেন, কবিতা আবৃত্তি করছেন। তাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তাই তাঁদের বিনোদনও একটু প্রাপ্তবয়স্ক মার্কা। এদিকে গোপাল ভাঁড় যে দরবারের জন্য কৌতুক পরিবেশন করতেন সেখানেও সবাই ছিলেন প্রাপ্তবয়স্ক। কী অদ্ভুত মিল! আমরা আনন্দিত। এক গোপাল ভাঁড় নেই তো কী হয়েছে, আমাদের কিছু সাংসদ গোপাল ভাঁড়ের সেই অভাব বুঝতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। 
এছাড়া আমাদের কবিতার প্রতি এত টান যে শিক্ষাসচিব পাঠ্যপুস্তকে দুই বিখ্যাত কবির কবিতা বাদ দিয়ে নিজের কবিতা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বিরোধী দলের সাংসদ সংসদে কবিতা আবৃত্তি করেছেন। আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বর্তমান সাংসদ তো প্রতিষ্ঠিত কবি। প্রতিটি অধিবেশনে কবিতা পাঠের পর্ব রাখা যায় কি না তা ভেবে দেখা উচিত। সাংসদেরা যদি কবিতার মাধ্যমে বক্তব্য দেন, তাহলে বিশ্বের ইতিহাসে তা এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ‘এই সরকার স্বৈরাচারী-দুর্নীতিবাজ-টাউট, তাই আমরা এই মুহুর্তে করিতেছি ওয়াকআউট’ বলে ওয়াকআউট করলে কতই-না সুন্দর হতো। এই কবিতার সঙ্গে অচিরেই গান আর নাচ যুক্ত হলে তো কোনো কথাই নেই। আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

No comments:

Post a Comment