Saturday, June 15, 2013

আমার সংগ্রহে আছে অনেক মেড ইন বাংলাদেশ জামা। যখনই শপিং করতে যাই, খুঁজি মেড ইন বাংলাদেশ। জেনিফার ও প্রিমার্কের মতো সস্তা ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে ভেরো মোডা, টপ শপ, নিউ লুক, নেক্সট, এইচ অ্যান্ড এম, ম্যাংগো, এপি, মার্কস স্পেনসার।
নতুন পোশাকের একটা সুন্দর গন্ধ আছে, কিন্তু আমাদের দেশে বানানো পোশাকের গন্ধটা যেন একেবারেই আলাদা। যে গন্ধ বোধ হয় বাঙালি ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবে না। নতুনের গন্ধ ছাপিয়ে শ্যামলা-কালো হাতের ছোঁয়া মাখা, সোঁদা মাটির গন্ধ জড়ানো চেনা গন্ধের একটু নাগাল যদি পাই, এই আশায় অনেকক্ষণ জামার ভেতর নাক ডুবিয়ে থাকি।
আমার দেশে বানানো টি-শার্ট, টপস ও জিনস গায়ে দিলে অন্য ধরনের আনন্দ হয়। এ আনন্দ আমি একা একা অনুভব করি। এগুলো গায়ে জড়ালে মনে হয়, দেশটাকেই যেন গায়ে মেখে আছি। এই যে অনুভূতির কথা বললাম, তা শুধু আমার একার নয়, প্যারিসে থাকা হাজারো বাঙালির অনুভূতি। কমবেশি একই রকম।
বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের গুণগাথা পড়ানো হয় পশ্চিমা বিশ্বের পাঠ্যবইয়ে। আর ওরা জানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা। এর বাইরে তাদের কাছে বাংলাদেশ মানে পরিবেশদূষণ, দারিদ্র্য, দুর্যোগ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও বিপুল জনসংখ্যার দেশ। একটা জিনিসও নেই ইতিবাচক!
বাংলাদেশে পোশাক কারখানায় কাজ করা ৯০ শতাংশই হতদরিদ্র ঘরের মেয়ে। কখনো কখনো সংসারের হাল ধরা একমাত্র উপর্জনক্ষম নারী! এ হাতগুলো পৃথিবীর বুকে শক্ত করে ধরে রেখেছে আমার মানচিত্র। এর মাধ্যমেই বিশ্বে আমাদের বেশি পরিচিতি। কিন্তু পোশাক কারখানার সেই হাতগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে দুমড়ে-মুচড়ে দিল আমার সোনার বাংলাদেশের কিছু লোভী মানুষ! তারা হাতগুলোকেই মোচড়ায়নি, আমাদের জাতীয পতাকাকেও মুচড়ে দিয়েছে।

No comments:

Post a Comment