Wednesday, June 5, 2013

মানিক মিয়াকে লেখা বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত চিঠি

মানিক মিয়াকে লেখা বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত চিঠি

মানিক মিয়াকে লেখা বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত চিঠি
[১২-০৯-১৯৫১ তারিখে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার নিকট নিরাপত্তাবন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বহস্তে লিখিত চিঠি। এই চিঠিটি শামসুল হক (সেক্রেটারি, পূর্বপাকিস্তান মুসলিম আওয়ামীল লীগ)-এর চিঠির সাথে একই খামে করে দিয়েছিলেন। শামসুল হকের চিঠির সাথে চিঠিটাও গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ বাজেয়াপ্ত করে।]

মানিক ভাই 

আমার ছালাম নিবেন। আমার মনে হয় আপনার সকলে আমার জন্য একটু ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চিন্তার কোনো কারণ নাই। আমি জেল হাসপাতালে ভর্তি আছি। চিকিত্সার চেষ্টা খুবই হইতেছে। হাসপাতালে কিছুদিন থাকতে হবে বলে মনে হয় কারণ শরীরের অবস্থা এখনও উন্নতির দিকে যায় নাই।

আতাউর রহমান সাহেব দেখা করতে এসেছিলেন। ফেডারেল কোর্ট করা যায় কি না আর করিবে কি না? জনাব সুরাওয়ার্দ্দি সাহেব তো পিন্ডি মামলা নিয়ে ব্যস্ত। কে মামলা পরিচালনা করবেন? আপনি সুরাওয়ার্দ্দি সাহেবের কাছে চিঠি লেখে জানুন তিনি করতে পারবেন কি না আর তাহা না হলে অন্য কাহাকে দিয়া মামলা করার কোনো অর্থ হবে বলে আমার মনে হয় না। আপনারা বাহিরে আছেন, ছালাম সাহেব, আতাউর রহমান সাহেব ও অন্যান্য সকলের সাথে পরামর্শ করে যাহা ভালো বোঝেন তাহাই করিবেন। আমার কিছু বলার নাই। 

শুনে সুখী হবেন, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি কারণ আর কতদিন বাবার পয়সার সর্বনাশ করা যায়। আর শরীরের অবস্থাও ভালো না কারণ হঠাত্ ঢাকা জেলে আসার পর থুথুর সাথে পর পর তিনদিন কিছু রক্ত পড়ে তবে সে রক্ত সর্দি শুকাইয়াও হোতে পারে আবার হাঁচি খুব বেশি হয় বলে অনেক সময় গলা থেকেও রক্ত পড়তে পারে আর কাশের সাথেও হতে পারে তাই নিজের থেকেই হুঁশিয়ার হয়ে যাওয়া ভালো। কতকাল থাকতে হয় ঠিকতো নাই। X-ray করার কথা বলেছি। তবে সরকারের কাছে সকল সময়ই খুব সময় লাগে। কবে X-ray করে বলা যায় না। তবে যাহাতে তাড়াতাড়ি হয় তাহার চেষ্টা করিব।

ঢাকা জেলার সুপার সাহেব খুব ভালো ডাক্তার তাই শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবো বলে আশা করি। চিন্তার কোনই কারণ নাই। জেলখানায়ও যদি মরতে হয় তবে মিথ্যার কাছে কোনো দিন মাথা নত করব না। আমি একলা জেলে থাকাতে আপনাদের কোনো অসুবিধা হবে না। কাজ করে যান খোদা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। আমার জন্য কিছুই পাঠাবেন না। আমার কোনো কিছুরই দরকার নাই। নূতন চীনের কিছু বই যদি পাওয়া যায় তবে আমাকে পাঠাবেন। চক্ষু পরীক্ষার পর আপনাকে খবর দিবো কারণ চশমা কিনতে হইবে। নিজেই দরখাস্ত করে আপনার সাথে দেখা করতে চেষ্টা করব। 

আপনার ছোটভাই

মুজিব 

[১৩-০৬-১৯৫২ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ৯ হাটখোলা রোড, ঢাকার ঠিকানায় লাহোর থেকে লিখিত, ১৭-০৬-১৯৫২ তারিখে ওয়ারী ঢাকা পোস্ট অফিস থেকে আটককৃত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠির অনুলিপি।]

মানিক ভাই, 

আমার ভক্তিপূর্ণ সালাম গ্রহণ করিবেন। করাচি হতে আসার সময় আপনার ২ খানা চিঠি জনাব সুরাওয়ার্দ্দি সাহেব আমাকে দেন। চিঠি পেতে দেরি হওয়ার কারণ শহিদ সাহেব ক্লিপটনের বাসা ছেড়ে ১৩ নম্বর কাচারু রোডে আসিয়াছেন। আপনার বিপদের কথা আমি অনুভব করতে পারি। কিন্তু কি করব? আর এক বিপদে পড়িয়াছি। লাহোর এসেই টিকটি করতে যাই কিন্তু ২৪ তারিখের পূর্বে কোনো টিকিট পাওয়া গেল না। সপ্তাহে মাত্র ২ বার এরোপ্লেন ঢাকা যায়। এত ভিড় যাহা কল্পনা করা যায় না। ২৪ তারিখে ঈদ আর আমাকে সেদিনই রওয়ানা হতে হবে। কি করব, ভেবিছিলাম বাড়িতে ঈদ করবে। তাহা আর হলো না। যাহা হউক গরীবের আবার ঈদের কাজ কি? জেলখানায় মাওলানা ভাসানী ও বন্ধু-বান্ধবদের কি অবস্থায় দিন কাটছে বুঝতে পারছি না। দয়া করে আমাকে এই ঠিকানায় চিঠি দিবেন। নূরুল হুদা করাচি বা লোহার নাই। ফজলুল হক ও রউফের কোনো সংবাদ পেয়েছেন কি? প্রফেসর সাহেবকে ও রফিককে অফিসে বসে কিছু কাজ করতে বলবেন। আমি জানি আপনার পক্ষে সম্ভব নহে। আতাউর রহমান সাহেব ও অন্যান্য সকলকে ছালাম দিবেন। কাজ কিছু করতে পেরেছি। পশ্চিম পাকিস্তানের লোকের ভুল অনেকটা ভাঙাতে পেরেছি বলে মনে হয়। দোয়া করবেন, টাকা-পয়সা নাই যে আবার করাচি যেয়ে তাড়াতাড়ি ঢাকা পৌঁছাব। Advertisement কিছু পাব। তবে অনেকদিন দেরি করতে হবে। আমি চেষ্টার ত্রুটি করি নাই। আপনার শরীরে প্রতি যত্ন নিবেন। মোটেই চিন্তা করবেন না। খোদা হাফেজ। 

আপনার ছোট ভাই 

স্বা. মুজিব

[করাচি থেকে দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে লিখিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠির অনুলিপি। চিঠিতে তারিখ উল্লেখ না থাকলেও চিঠির বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে চিঠিটি ১৫-০৬-১৯৫২ তারিখে লিখেছিলেন। কারণ এর আগের দিন অর্থাত্ ১৪-০৬-১৯৫২ তারিখে বঙ্গবন্ধু করাচিতে প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন।]

মানিক ভাই, 

আমার সালাম নিবেন। বোধহয় আমার চিঠি পেয়ে থাকবেন। গতকল্য প্রেস কন্ফারেন্স করছি। খুব ভালো কন্ফারেন্স হইয়াছে। রিপোর্ট পাঠাইলাম, আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করিয়াছি। ৭০ মিনিট নানা বিষয় নিয়া আলাপ হইয়াছে। দেখা হলে সকল জানতে পারবেন। রিপোর্ট পাঠাইলাম। দিনকাল কাজের ভিতর দিয়া চলছে। সুরাওয়ার্দ্দি সাহেবের সাথে আজও দেখা হয় নাই। হায়দেরাবাদ যেয়ে ফিরে এসেছি। কারণ তিনি লাহোর যাচ্ছেন। ২/১ দিনের মধ্যে হায়দেরাবাদ ফিরে আসবেন। তাহার সাথে দেখা করিয়া লাহোর হইয়া আসছি ফিরে জানাবো। ইত্তেফাক পাঠাইবেন। Advertisement ২/১টা পাব বলে আশা করি। অফিসের দিকে নজর রাখবেন। রফিককে চিঠিপত্রের উত্তর দিতে বলবেন। বেশ ভালো আছি। এখানকার কর্মীরা খুব সাহায্য করেছে। মাওলানা সাহেব ও সহকর্মীরা জেলে আছে সেটাই শুধু দুঃখ। সকলকে সালাম দিবেন। 

ইতি আপনার 

মুজিব

[২৮-০৩-১৯৫২ তারিখে টুঙ্গীপাড়া, ফরিদপুর থেকে তফাজ্জল হোসেন, বি.এ, সম্পাদক 'ইত্তেফাক', ৯ হাটখোলা রোড, ঢাকার ঠিকানায় ইংরেজিতে লেখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি। চিঠিটি ০১-০৪-১৯৫২ তারিখে জিপিও ঢাকা থেকে আটক করা হয়। গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ চিঠিটি অনুলিপি করে রাখে।]

My dear Manik Bhai

My best Salams attend you. Just now I have received your post card, Really Manik Bhai I can feel your difficulties. When I was thinking to start for Dacca, I was attecked with blood dysentery. I am much imporved by the grace of Allah. My body is a home of deases. Anyhow I must arrive Dacca on or before 16th positively. I require thorough treatment. Please arrange an accommodation for me. Please continue with the paper anyhow until and unless I go. Please write me. Convey my salam to Ataur Rahman Sahib. 

I am very anxious to know the condition of Wadood who was ill in time of arrest. How are you?

Your affectionately, 

sd/-Mujib.

No comments:

Post a Comment