বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা, সীমান্তে তখন বিডিআর, বিএসএফের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল। তখন আমাদের ক্যাডেট কলেজ থেকে একটা পিকনিকে জাফলং যাওয়ার কথা। কলেজ থেকে জানানো হলো এবার খাকি পোশাক পরে নয়, সবাই সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরে যাবে। কারণ হিসেবে বলা হলো, খাকি পোশাক পরলে পাশের সীমান্তে থাকা বিএসএফ আমাদের বাংলাদেশের পুলিশ মনে করে গুলি করে বসতে পারে। ক্যাডেট কলেজে নির্ধারিত পোশাক ছাড়া অন্য পোশাক পরা দূরে থাক সেসব রুমেও রাখা যেত না। সাহসী দু-একজন সাহস প্রমাণের জন্য মাঝে মাঝে রুমে ইউনিফর্ম ছাড়া পোশাক পরত, অবশ্য ধরা পড়লে শাস্তিও পেতে হতো।
ওই পিকনিকের দিনও আমাদের এক বীর বন্ধু তানিম পিকনিকে গিয়ে ব্যাগে লুকিয়ে রাখা একটা টি-শার্ট বের করে পরল। দুর্ভাগ্য তার, কিছুক্ষণ পরই ডিউটি স্টাফের কাছে সে ধরা পড়ল। স্টাফ সবাইকে ডাকলেন, সঙ্গে তানিমকেও। ততক্ষণে সে আবার পোশাক বদলে ফেলেছে। স্টাফ বললেন, ‘তানিম, তুমি এত সাহস কোথায় পেলে? আদেশ অমান্য করে তুমি সাদা শার্ট খুলে অন্য টি-শার্ট কেন পরেছিলে?’ তানিম বলল, ‘স্টাফ, সাদা পোশাক পরা পুলিশ মনে করেও তো বিএসএফ গুলি করে বসতে পারে, সেই ভয়ে।’
রমিত আজাদ ভাইদের ব্যাচের ঘটনা। হাবিলদার জাহিদ নামে একজন এনসিও স্টাফ ছিলেন। একদিন বিকেলে ক্রিকেট মাঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তোমরা খারাপ হইয়া গেছ।’ রমিত ভাই বললেন, ‘কী হলো আবার?’ উনি বললেন, ‘তোমাদের একজনের রুমে সিগারেটের বাক্স পাওয়া গেছে।’ রমিত ভাই তখন চুপ মেরে গেলেন, তাঁর পাশে দাঁড়ানো ফজলু ভাই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘সিগারেটের বাক্স পাওয়া গেছে, এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না। সে তো সিগারেটের বাক্সের মধ্যে বিস্কুট রাইখাও খাইতে পারে।’
হাবিলদার জাহিদ ভ্যাবাচেকা খেলেও জবাব দিতে দেরি করলেন না, ‘কিন্তু ওই রুমে একটা ম্যাচও তো ধরা পড়েছে।’ ফজলু ভাইও থামলেন না, ‘বিস্কুট ঠান্ডা হয়ে গেলে গরম করে খেতে হবে না?’
আমাদের হাউসের দায়িত্বে থাকা একজন স্টাফ ছিলেন, নাম হাবিলদার এনায়েত। আন্তহাউস ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আমাদের খেলার সময় তিনি সারাক্ষণ উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলতেন, ‘আবুল, ঠেকাইয়া খেল, রান আসবে। কাউসার, ঠেকাইয়া খেল, রান কোনো বিষয় না। মুবিন, ঠেকাইয়া খেল, আমরাই জিতব।’
একবার সেমিফাইনালের এক ম্যাচে শেষ এক বলে আমাদের ৫ রান দরকার ছিল। সবাই ছক্কা ছক্কা বলে চিৎকার করছিলাম। ব্যাটসম্যান তখন সাব্বির, প্রচণ্ড নার্ভাস সে। হাবিলদার এনায়েত স্টাফ তাকে উৎসাহ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে চিৎকার করে উঠলেন, ‘সাব্বির, ঠেকাইয়া খেল, ছক্কা হবেই!’
আশিক ক্লাসে ঘুমাচ্ছিল দেখে স্যার এসে ওকে ধমক দিয়ে দাঁড় করালেন, ‘এই ছেলে, তুমি ক্লাসে ঘুমাচ্ছিলে কেন?’
: স্যার, গত কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি।
স্যার বললেন, ‘একজন সুস্থ ক্যাডেট কী করে কয়েক রাত না ঘুমিয়ে থাকতে পারে? আমি অথরিটিকে আজই বিষয়টা জানাব।’
আশিক বলল, ‘না স্যার, আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না, আপনার ক্লাসের ঘুমটুকুতেই আমার হয়ে যায়!’
একদিন এক সিনিয়র ক্যাডেট আমাকে সামান্য অপরাধে অনেক পেটালেন। হঠাৎ আমার নাক দিয়ে কিঞ্চিৎ রক্ত বের হয়ে গেল। সেটা দেখে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন, কারণ আমি যদি এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই তাহলে তার বড় ধরনের শাস্তি হয়ে যাবে। তিনি আমাকে ম্যানেজ করার জন্য বলতে শুরু করলেন, ‘আমি তোমার ভাইয়ের মতো, তোমার ভালো চাই বলেই তো মাঝে মাঝে মারি।’
আমার তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘ভাইয়া, আমিও আপনার ভালো চাই, কিন্তু ছোট বলে সেটা প্রকাশ করতে পারছি না।’
দুদিন পর আমাদের পাক্ষিক পরীক্ষা। অথচ কৌশিকের পড়াশোনার নামগন্ধ নেই। কলেজ প্যারেডের ফাঁকে ফাঁকে সে সারাক্ষণ হাবিজাবি করে বেড়াচ্ছে। সেটা বুঝতে পেরে তার হাউসের অধিনায়ক মাহবুব ভাই তাকে ডেকে বললেন, ‘কৌশিক, তোমার না দুদিন পর পরীক্ষা! পড়াশোনা না করে নবাবের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন?’
কৌশিক বলে বসল, ‘ভাই, পরীক্ষার এত চাপ যে পড়ারই সময় পাচ্ছি না!’
আসল মজাটা ওখানে না; দুদিন পর নোটিশ বোর্ডে সেই সপ্তাহে যারা বিশেষ শাস্তি পাবে, তাদের নাম ঝোলানো হয়েছে। অপরাধীদের তালিকায় কৌশিকের নামও ছিল, আর তার নামের পাশে লেখা ছিল, ‘তার অপরাধ: পরীক্ষার আগে নবাবের মতো ঘুরে বেড়ানো।’
ওই পিকনিকের দিনও আমাদের এক বীর বন্ধু তানিম পিকনিকে গিয়ে ব্যাগে লুকিয়ে রাখা একটা টি-শার্ট বের করে পরল। দুর্ভাগ্য তার, কিছুক্ষণ পরই ডিউটি স্টাফের কাছে সে ধরা পড়ল। স্টাফ সবাইকে ডাকলেন, সঙ্গে তানিমকেও। ততক্ষণে সে আবার পোশাক বদলে ফেলেছে। স্টাফ বললেন, ‘তানিম, তুমি এত সাহস কোথায় পেলে? আদেশ অমান্য করে তুমি সাদা শার্ট খুলে অন্য টি-শার্ট কেন পরেছিলে?’ তানিম বলল, ‘স্টাফ, সাদা পোশাক পরা পুলিশ মনে করেও তো বিএসএফ গুলি করে বসতে পারে, সেই ভয়ে।’
রমিত আজাদ ভাইদের ব্যাচের ঘটনা। হাবিলদার জাহিদ নামে একজন এনসিও স্টাফ ছিলেন। একদিন বিকেলে ক্রিকেট মাঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তোমরা খারাপ হইয়া গেছ।’ রমিত ভাই বললেন, ‘কী হলো আবার?’ উনি বললেন, ‘তোমাদের একজনের রুমে সিগারেটের বাক্স পাওয়া গেছে।’ রমিত ভাই তখন চুপ মেরে গেলেন, তাঁর পাশে দাঁড়ানো ফজলু ভাই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, ‘সিগারেটের বাক্স পাওয়া গেছে, এতে কিছুই প্রমাণিত হয় না। সে তো সিগারেটের বাক্সের মধ্যে বিস্কুট রাইখাও খাইতে পারে।’
হাবিলদার জাহিদ ভ্যাবাচেকা খেলেও জবাব দিতে দেরি করলেন না, ‘কিন্তু ওই রুমে একটা ম্যাচও তো ধরা পড়েছে।’ ফজলু ভাইও থামলেন না, ‘বিস্কুট ঠান্ডা হয়ে গেলে গরম করে খেতে হবে না?’
আমাদের হাউসের দায়িত্বে থাকা একজন স্টাফ ছিলেন, নাম হাবিলদার এনায়েত। আন্তহাউস ক্রিকেট টুর্নামেন্টে আমাদের খেলার সময় তিনি সারাক্ষণ উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলতেন, ‘আবুল, ঠেকাইয়া খেল, রান আসবে। কাউসার, ঠেকাইয়া খেল, রান কোনো বিষয় না। মুবিন, ঠেকাইয়া খেল, আমরাই জিতব।’
একবার সেমিফাইনালের এক ম্যাচে শেষ এক বলে আমাদের ৫ রান দরকার ছিল। সবাই ছক্কা ছক্কা বলে চিৎকার করছিলাম। ব্যাটসম্যান তখন সাব্বির, প্রচণ্ড নার্ভাস সে। হাবিলদার এনায়েত স্টাফ তাকে উৎসাহ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে চিৎকার করে উঠলেন, ‘সাব্বির, ঠেকাইয়া খেল, ছক্কা হবেই!’
আশিক ক্লাসে ঘুমাচ্ছিল দেখে স্যার এসে ওকে ধমক দিয়ে দাঁড় করালেন, ‘এই ছেলে, তুমি ক্লাসে ঘুমাচ্ছিলে কেন?’
: স্যার, গত কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি।
স্যার বললেন, ‘একজন সুস্থ ক্যাডেট কী করে কয়েক রাত না ঘুমিয়ে থাকতে পারে? আমি অথরিটিকে আজই বিষয়টা জানাব।’
আশিক বলল, ‘না স্যার, আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না, আপনার ক্লাসের ঘুমটুকুতেই আমার হয়ে যায়!’
একদিন এক সিনিয়র ক্যাডেট আমাকে সামান্য অপরাধে অনেক পেটালেন। হঠাৎ আমার নাক দিয়ে কিঞ্চিৎ রক্ত বের হয়ে গেল। সেটা দেখে তিনি ভয় পেয়ে গেলেন, কারণ আমি যদি এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই তাহলে তার বড় ধরনের শাস্তি হয়ে যাবে। তিনি আমাকে ম্যানেজ করার জন্য বলতে শুরু করলেন, ‘আমি তোমার ভাইয়ের মতো, তোমার ভালো চাই বলেই তো মাঝে মাঝে মারি।’
আমার তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘ভাইয়া, আমিও আপনার ভালো চাই, কিন্তু ছোট বলে সেটা প্রকাশ করতে পারছি না।’
দুদিন পর আমাদের পাক্ষিক পরীক্ষা। অথচ কৌশিকের পড়াশোনার নামগন্ধ নেই। কলেজ প্যারেডের ফাঁকে ফাঁকে সে সারাক্ষণ হাবিজাবি করে বেড়াচ্ছে। সেটা বুঝতে পেরে তার হাউসের অধিনায়ক মাহবুব ভাই তাকে ডেকে বললেন, ‘কৌশিক, তোমার না দুদিন পর পরীক্ষা! পড়াশোনা না করে নবাবের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন?’
কৌশিক বলে বসল, ‘ভাই, পরীক্ষার এত চাপ যে পড়ারই সময় পাচ্ছি না!’
আসল মজাটা ওখানে না; দুদিন পর নোটিশ বোর্ডে সেই সপ্তাহে যারা বিশেষ শাস্তি পাবে, তাদের নাম ঝোলানো হয়েছে। অপরাধীদের তালিকায় কৌশিকের নামও ছিল, আর তার নামের পাশে লেখা ছিল, ‘তার অপরাধ: পরীক্ষার আগে নবাবের মতো ঘুরে বেড়ানো।’
No comments:
Post a Comment