1 / 6
কথায় আছে-- নিজের রুচিতে খাও আর পরের রুচিতে পরো। এ দেশের ফ্যাশনজগতে চলছে এই রকমই অবস্থা। দেশীয় ঢংয়ের সঙ্গে পাশ্চাত্য নকশার মিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি হচ্ছে পোশাক। আবার ভারতীয় টিভি বা চলচ্চিত্রের পাত্রপাত্রীদের পরনের পোশাক এ দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি থেকে সরে এসে বাঙালি কৃষ্টির সঙ্গে মিলিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক তৈরি করে যাচ্ছে।
ছেলেদের থেকে মেয়েদের পোশাকে বৈচিত্র্য বেশি। বয়স আর পারিবারিক ঐতিহ্যের রেশ ধরে কেউ পরছেন সালোয়ার কামিজ, কেউ-বা পরছেন জিন্স-শার্ট। আবার মাথায় হিজাবও পরছেন অনেকে।
এসব দিক লক্ষ রেখে দেশের অন্যতম পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান আড়ং এ বছর তাদের ‘তাগা’য় নিয়ে এসেছে পরিবর্তন। ‘ব্রেক ফ্রি’ শ্লোগান যুক্ত করে বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে তাদের এই পোশাক।
এ ব্যাপারে আড়ংয়ের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা তাসনিন হোসেন বলেন, “আমরা আসলে ‘ব্রেক ফ্রি’ বলতে বুঝিয়েছি আত্মবিশ্বাসী। একজন মেয়ে যে বয়সেরই হোক না কেন, নিজের উপর আস্থা থাকলে সে সব কাজই করতে পারবে। ভেতর থেকে নিজের উপর হবে আস্থাশীল।”
তাসনিন আরও জানান, ‘তাগা’ পোশাকটি তরুণীদের উপযোগী করে তৈরি করা। তারপরও স্বচ্ছন্দবোধ করলে যে কোনো বয়সের মেয়েই এই পোশাক পরতে পারেন।
নকশিকাঁথা বুননের অন্যতম একটি পদ্ধতির নাম হচ্ছে তাগা। সেটিকেই ফতুয়া ও পশ্চিমা ধাঁচের টপসের মিশ্রণে তুলে এনে ‘তাগা’ নাম দিয়ে ২০০৩ সাল থেকে বাজারজাত করতে শুরু করে আড়ং।
এ বছর ‘তাগা’র ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে পোশাকটি। এবারই প্রথম তাগার সঙ্গে মিলিয়ে চোঙা প্যান্ট, স্কার্ফ, ব্যাগ, জুতা-স্যান্ডেলসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করা হয়েছে। পছন্দ অনুযায়ী যে কেউ সেট হিসেবে কিনতে পারবেন। আবার ইচ্ছে হলে শুধু তাগাও কিনতে পারবেন।
তাসনিন বলেন, “এদেশে ওয়েস্টার্ন পোশাক অনেকেই পরছেন। আমাদের চেষ্টা ছিল বাংলাদেশি মোটিফের সঙ্গে পশ্চিমা ধাঁচের মিশেলে নতুন পোশাক তৈরি করা। সেই ধারণা থেকেই এই তাগা পোশাকের সৃষ্টি। যার মাধ্যমে আমরা তুলে ধরি-- নারী তুমি স্বাধীন। অর্থাৎ মন-মানসিকতায় কোনো মেয়ে যেন কারও নিচে না থাকে।”
এদেশে ধর্মিয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকে মেয়েই পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরতে পারেন না। তাদের পোশাকে দেখা যায় আরব সংস্কৃতি। বোরখা ছাড়াও হিজাবের প্রচলন এ দেশে অনেক আগে থেকেই ছিল। মাঝে রাজনৈতির পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে এই আশঙ্কায় অনেক প্রতিষ্ঠানই হিজাব ফ্যাশনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
নগরদোলা দেশীয় পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। কয়েক মাস আগে তাদের একটি বিলবোর্ড বিজ্ঞাপনে দেখা যায়-- একটি মেয়ে হিজাব পরে দাঁড়িয়ে আছেন, আর স্লোগান হিসেবে ব্যবহার হয়েছে ‘মডেস্টি’ শব্দটি। অনেক ক্রেতাই এই কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, তাহলে যারা জিন্স ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ পরছেন তাদের চালচলন কি সংযত নয়!
তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রতিটি পোশাকের রয়েছে বিভিন্ন বিভাগ। দাম অনুযায়ী সেসব বিভাগের নামগুলো হল এ রকম-- লাবণ্য, ত্রয়ী।
সেভাবেই স্কার্ফকে হিজাবের মতো করে পরার বিষয়টি আমরা উল্লেখ করেছি ‘মডেস্টি’ হিসেবে। তাই বলে এই নয়, যে হাতাকাটা পোশাক পরবে সে মডেস্ট নয়।”
আফজাল আরও জানান, এসব নিয়ে অভিযোগ পেয়ে পরে তারাও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পোশাক পরার বিষয়টা যার যার উপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
নগরদোলার এসব স্কার্ফের দাম ৫শ’ টাকার মধ্যে। কাপড় হিসেবে ব্যবহার হয়েছে শিফন ও জর্জেট।
আড়ংয়ের তাসনিন মনে করেন, পোশাক কে কীভাবে পরবে সেটা নির্ভর করে মানসিকতার উপর।একইভাবে নারীর স্বাধীনতা ফুটে ওঠে তার পোশাকেই।
আবার আফজালের কথায়, “স্কার্ফ, হিজাব, জিন্স বা সালোয়ার কামিজ যে ধরনের পোশাকই পরা হোক না কেন ভেতরের মানুষটাই সব। সংযতভাবে থাকতে জানলে যে কোনো পোশাকেই সেই মানুষকে সুন্দর লাগবে।”
এর কারণ হিসেবে জান্নাতুল বলেন, “যখন আমি হিজাব পরে বাইরে যাই, তখন মনে হয় আলাদা একটা সম্মান পাই। আগে কোনো সময় পরতাম, কোনো সময় পরতাম না। তবে এখন নিয়মিত পরি। এতে একটা আবরণ তৈরি হয়ে থাকে। যা থেকে মনে হয় আমি নিরাপদ আছি। আমার প্রতি অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম হতে পারে না এই আব্রুর কারণে। অন্তত আমি তাই মনে করি।”
তবে জান্নাতুল এটাও বিশ্বাস করেন, অনেক কিছুই নির্ভর করে আচরণের উপর। যারা হিজাব ব্যবহার করেন না, তারা যে সংযত আচরণ থেকে দূরে আছেন সেটাও সবসময় ঠিক নয় বলে জানান তিনি।
মানুষের চাহিদার উপর নির্ভর করেই নকশাকাররা বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করছেন। নগরদোলার আফজাল বলেন, “আমাদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে হাতাকাটা জামার সঙ্গে হাতাটাও দিয়ে দেওয়া হয়। যে যেভাবে পরতে আরাম পায় সে সেভাবেই পোশাক পরবে।”
এভাবেই বিভিন্ন ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পোশাকে আসে পরিবর্তন। নতুন মাত্রা যোগ হয়ে তৈরি হয় নতুন ধরনের পোশাক। আর বেশিরভাগ সময়ই পরিবর্তনের জায়গাটা নির্ভর করে মানুষের চাহিদার উপর।
No comments:
Post a Comment