একটা লোক আছে শীতঅলা আর একটা লোক আছে বৃষ্টিঅলা। শীত নিয়ে আসে শীতঅলা লোকটা আর বৃষ্টি নিয়ে আসে বৃষ্টিঅলা লোকটা। কোথায় নিয়ে আসে?
কোথায় আবার? পৃথিবীতে।
না হলে কি বৃষ্টি হতো এত? না এত শীত পড়ত কখনো?
কথা হলো কি, অনেক দিন আগে, অনেক অনেক অনেক দিন আগে, একটা নিয়ম ছিল এ রকম, শীতঅলা লোকটা যখন পৃথিবীতে আসবে, বৃষ্টিঅলা লোকটা তখন আসবে না। আর বৃষ্টিঅলা লোকটা যখন পৃথিবীতে আসবে, শীতঅলা লোকটা তখন আসবে না। দুই লোকই নিয়মটা মানত। এ জন্য অনেক দিন পৃথিবীতে শীতকালে শুধু শীতই পড়ত, আর বৃষ্টির সময় হলে বৃষ্টি।
নিয়ম নিয়মের মতো চলছিল। গন্ডগোল কিছু কখনো হয়নি। কিন্তু যা কখনো হয়নি, তা কখনো হবে না, তা তো নয়। হলো একবার। কয়েক মাস ধরে জমানো ঠান্ডা আলখাল্লার পকেটে নিয়ে তখন পৃথিবীতে এসেছে শীতঅলা লোকটা। এ সময় বৃষ্টিঅলা লোকটার আসার কথা নয়। তা-ও তাকে হঠাৎ দেখা গেল একদিন, আনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওদিকে। হয়েছে কী, লোকটা তো কবি কবি একটু, বৃষ্টিঅলা লোকটা, তার একদম মনেই নেই যে এ সময় পৃথিবীতে তার আসার কথা নয়। ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু ভুল হোক আর শুদ্ধ, শীতঅলা লোকটা কেন এটা মানবে? বৃষ্টিঅলা লোকটাকে দেখেই খেপে গেল সে, ‘অ্যাই, তুই এখন এখানে কেন রে?’
তুই-তোকারি করে বলল! অত্যন্ত অপমানজনক আচরণ। বৃষ্টিঅলা লোকটা প্রথমে থতমত খেয়ে গেল একটু। থতমত খেয়ে তারপর বলল, ‘ভুল হয়ে গেছে রে, ভাই।’
‘ভুল হয়ে গেছে? কেন? কেন? ভুল হয়ে গেছে কেন, শুনি?’ আরও খেপে গেল শীতঅলা লোকটা, ‘ইয়ার্কি, হ্যাঁ? ইয়ার্কি! ইয়ার্কি! তুই আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছিস?’
এ তো মহা রগচটা লোক। বৃষ্টিঅলা লোকটা একটুও না খেপে বলল, ‘বললাম তো ভাই, ভুল হয়ে গেছে। তুমি এ রকম করছ কেন? তুই-তোকারি কেন করছ?’
‘তুই-তোকারি কেন করছি? কেন করছি, হ্যাঁ?’ রগচটা শীতঅলা লোকটা বলল, ‘তবে কী করব? কী করব? বলি তোকে কী বলতে হবে? আপনি বলব? আপনি কেন এখানে এসেছেন, মহাত্মন? বলব?’
‘তা কেন?’ বৃষ্টিঅলা লোকটা বলল, ‘মহাত্মন কেন বলবে, ভাই? কিন্তু এই যে তুই-তোকারি করছ, এটা কি ঠিক? ভদ্রতা সভ্যতা বলেও তো কিছু ব্যাপার আছে, নাকি?’
‘ওরে আমার ভদ্রতা-সভ্যতার বাবা রে!’ খেঁকিয়ে উঠে বলল শীতঅলা লোকটা, ‘ভুল করেছে, করেছে, আবার ভদ্রতা-সভ্যতার ইশকুলও খুলেছে। তোর কাছ থেকে ভদ্রতা-সভ্যতা শিখতে হবে রে আমাকে? অ্যাই! অ্যাই! দেব এক চড়ে দাঁত কটা ফেলে, তখন বুঝবি!’
আর পারা যায়? চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবে মানে? এত সহজ? রাগ হলো এবার বৃষ্টিঅলা লোকটারও। সে বলল, ‘এসব কী বলছ তুমি? চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবে মানে?’
‘মানে আবার কী রে, ফাজিল? এই দেখ।’ বলে কী কাণ্ড, সত্যি সত্যি বৃষ্টিঅলা লোকটাকে চড় মেরে বসল শীতঅলা লোকটা।
অনেক সহ্য করেছে এতক্ষণ। আর সহ্য করা যায় নাকি? একেবারে চড় মেরে বসেছে! বৃষ্টিঅলা লোকটা একটু কবি কবি ঠিক, ভালো মানুষ, গায়ে পড়ে কারোর অনিষ্ট করে না, তাই বলে এতটা দুর্বল তো নয় যে কেউ তাকে চড় মেরে বসবে। সেও ফিরিয়ে দিল এক চড়। এই! শুরু হয়ে গেল বেদম মারপিট। মারপিট, কী মারপিট বাবা রে! ধুন্ধুমার কাণ্ড। মারপিটের চোটে শীতঅলা লোকটার আলখাল্লার পকেটের সব ঠান্ডা বের হয়ে পড়ল। বৃষ্টিঅলা লোকটার আলখাল্লার পকেটের সব বৃষ্টি বের হয়ে পড়ল। দুর্গতি কী তখন! একে ঠান্ডা, তাও বৃষ্টি। জেরবার অবস্থা হলো সবার। অবস্থা কাহিল শীতঅলা আর বৃষ্টিঅলা লোকটারও। তাও যদি তারা মারপিট থামায়! কিন্তু এ রকম চললে তো হবে না। সবাই গিয়ে ধরল অনেক অনেক ঝুরিঅলা বুড়ো বটগাছকে, ‘আপনি কিছু করুন। জলদি কিছু একটা করুন।’
বুড়ো বটগাছের কথা শুনবে না, এমন বেয়াদব নয় কেউই। শীতঅলা লোকটাও না, বৃষ্টিঅলা লোকটাও না। পৃথিবীর কেউই না। এ জন্য বুড়ো বটগাছ যখন বললেন, ‘আর কত মারপিট করবে হে? এবার থামো।’ মারপিট বন্ধ করল দুই লোক। ‘ধন্যবাদ’ বললেন বুড়ো বটগাছ আর সালিস ডাকলেন সবাইকে নিয়ে। সালিসে ঠিক করা হলো, ভুল বৃষ্টিঅলা লোকটাই করেছে। কিন্তু তার জন্য তাকে মারতে হবে কেন? এটা খুবই, খুবই-খুবই অন্যায় করেছে শীতঅলা লোকটা। যা হোক, যা ঘটার ঘটে গেছে। এখন আপস করে বন্ধু হয়ে যাক দুই লোক। আর পুরোনো নিয়মটাও বাদ যাক। এখন থেকে শীতঅলা লোকটা যখন পৃথিবীতে আসবে, বৃষ্টিঅলা লোকটাও আসবে কিছুদিনের জন্য। আর বৃষ্টিঅলা লোকটা যখন পৃথিবীতে আসবে, শীতঅলা লোকটাও আসবে কিছুদিনের জন্য। সালিস মেনে নিল দুই লোকই। সেই থেকে এই। মানে শীতকালে এখন বৃষ্টি যে হয়, আর বৃষ্টির সময় যে ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে, সে কি আর এমনি এমনি রে, ভাই?
কোথায় আবার? পৃথিবীতে।
না হলে কি বৃষ্টি হতো এত? না এত শীত পড়ত কখনো?
কথা হলো কি, অনেক দিন আগে, অনেক অনেক অনেক দিন আগে, একটা নিয়ম ছিল এ রকম, শীতঅলা লোকটা যখন পৃথিবীতে আসবে, বৃষ্টিঅলা লোকটা তখন আসবে না। আর বৃষ্টিঅলা লোকটা যখন পৃথিবীতে আসবে, শীতঅলা লোকটা তখন আসবে না। দুই লোকই নিয়মটা মানত। এ জন্য অনেক দিন পৃথিবীতে শীতকালে শুধু শীতই পড়ত, আর বৃষ্টির সময় হলে বৃষ্টি।
নিয়ম নিয়মের মতো চলছিল। গন্ডগোল কিছু কখনো হয়নি। কিন্তু যা কখনো হয়নি, তা কখনো হবে না, তা তো নয়। হলো একবার। কয়েক মাস ধরে জমানো ঠান্ডা আলখাল্লার পকেটে নিয়ে তখন পৃথিবীতে এসেছে শীতঅলা লোকটা। এ সময় বৃষ্টিঅলা লোকটার আসার কথা নয়। তা-ও তাকে হঠাৎ দেখা গেল একদিন, আনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওদিকে। হয়েছে কী, লোকটা তো কবি কবি একটু, বৃষ্টিঅলা লোকটা, তার একদম মনেই নেই যে এ সময় পৃথিবীতে তার আসার কথা নয়। ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু ভুল হোক আর শুদ্ধ, শীতঅলা লোকটা কেন এটা মানবে? বৃষ্টিঅলা লোকটাকে দেখেই খেপে গেল সে, ‘অ্যাই, তুই এখন এখানে কেন রে?’
তুই-তোকারি করে বলল! অত্যন্ত অপমানজনক আচরণ। বৃষ্টিঅলা লোকটা প্রথমে থতমত খেয়ে গেল একটু। থতমত খেয়ে তারপর বলল, ‘ভুল হয়ে গেছে রে, ভাই।’
‘ভুল হয়ে গেছে? কেন? কেন? ভুল হয়ে গেছে কেন, শুনি?’ আরও খেপে গেল শীতঅলা লোকটা, ‘ইয়ার্কি, হ্যাঁ? ইয়ার্কি! ইয়ার্কি! তুই আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছিস?’
এ তো মহা রগচটা লোক। বৃষ্টিঅলা লোকটা একটুও না খেপে বলল, ‘বললাম তো ভাই, ভুল হয়ে গেছে। তুমি এ রকম করছ কেন? তুই-তোকারি কেন করছ?’
‘তুই-তোকারি কেন করছি? কেন করছি, হ্যাঁ?’ রগচটা শীতঅলা লোকটা বলল, ‘তবে কী করব? কী করব? বলি তোকে কী বলতে হবে? আপনি বলব? আপনি কেন এখানে এসেছেন, মহাত্মন? বলব?’
‘তা কেন?’ বৃষ্টিঅলা লোকটা বলল, ‘মহাত্মন কেন বলবে, ভাই? কিন্তু এই যে তুই-তোকারি করছ, এটা কি ঠিক? ভদ্রতা সভ্যতা বলেও তো কিছু ব্যাপার আছে, নাকি?’
‘ওরে আমার ভদ্রতা-সভ্যতার বাবা রে!’ খেঁকিয়ে উঠে বলল শীতঅলা লোকটা, ‘ভুল করেছে, করেছে, আবার ভদ্রতা-সভ্যতার ইশকুলও খুলেছে। তোর কাছ থেকে ভদ্রতা-সভ্যতা শিখতে হবে রে আমাকে? অ্যাই! অ্যাই! দেব এক চড়ে দাঁত কটা ফেলে, তখন বুঝবি!’
আর পারা যায়? চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবে মানে? এত সহজ? রাগ হলো এবার বৃষ্টিঅলা লোকটারও। সে বলল, ‘এসব কী বলছ তুমি? চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেবে মানে?’
‘মানে আবার কী রে, ফাজিল? এই দেখ।’ বলে কী কাণ্ড, সত্যি সত্যি বৃষ্টিঅলা লোকটাকে চড় মেরে বসল শীতঅলা লোকটা।
অনেক সহ্য করেছে এতক্ষণ। আর সহ্য করা যায় নাকি? একেবারে চড় মেরে বসেছে! বৃষ্টিঅলা লোকটা একটু কবি কবি ঠিক, ভালো মানুষ, গায়ে পড়ে কারোর অনিষ্ট করে না, তাই বলে এতটা দুর্বল তো নয় যে কেউ তাকে চড় মেরে বসবে। সেও ফিরিয়ে দিল এক চড়। এই! শুরু হয়ে গেল বেদম মারপিট। মারপিট, কী মারপিট বাবা রে! ধুন্ধুমার কাণ্ড। মারপিটের চোটে শীতঅলা লোকটার আলখাল্লার পকেটের সব ঠান্ডা বের হয়ে পড়ল। বৃষ্টিঅলা লোকটার আলখাল্লার পকেটের সব বৃষ্টি বের হয়ে পড়ল। দুর্গতি কী তখন! একে ঠান্ডা, তাও বৃষ্টি। জেরবার অবস্থা হলো সবার। অবস্থা কাহিল শীতঅলা আর বৃষ্টিঅলা লোকটারও। তাও যদি তারা মারপিট থামায়! কিন্তু এ রকম চললে তো হবে না। সবাই গিয়ে ধরল অনেক অনেক ঝুরিঅলা বুড়ো বটগাছকে, ‘আপনি কিছু করুন। জলদি কিছু একটা করুন।’
বুড়ো বটগাছের কথা শুনবে না, এমন বেয়াদব নয় কেউই। শীতঅলা লোকটাও না, বৃষ্টিঅলা লোকটাও না। পৃথিবীর কেউই না। এ জন্য বুড়ো বটগাছ যখন বললেন, ‘আর কত মারপিট করবে হে? এবার থামো।’ মারপিট বন্ধ করল দুই লোক। ‘ধন্যবাদ’ বললেন বুড়ো বটগাছ আর সালিস ডাকলেন সবাইকে নিয়ে। সালিসে ঠিক করা হলো, ভুল বৃষ্টিঅলা লোকটাই করেছে। কিন্তু তার জন্য তাকে মারতে হবে কেন? এটা খুবই, খুবই-খুবই অন্যায় করেছে শীতঅলা লোকটা। যা হোক, যা ঘটার ঘটে গেছে। এখন আপস করে বন্ধু হয়ে যাক দুই লোক। আর পুরোনো নিয়মটাও বাদ যাক। এখন থেকে শীতঅলা লোকটা যখন পৃথিবীতে আসবে, বৃষ্টিঅলা লোকটাও আসবে কিছুদিনের জন্য। আর বৃষ্টিঅলা লোকটা যখন পৃথিবীতে আসবে, শীতঅলা লোকটাও আসবে কিছুদিনের জন্য। সালিস মেনে নিল দুই লোকই। সেই থেকে এই। মানে শীতকালে এখন বৃষ্টি যে হয়, আর বৃষ্টির সময় যে ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে, সে কি আর এমনি এমনি রে, ভাই?
No comments:
Post a Comment