রাজীবের স্ত্রী নীতুকে আমরা যতটা দজ্জাল ভাবি, তিনি আসলে ততটা হূদয়হীনা নন। নীতু ভাবি নির্দয় হলে তরকারির বাটিটা রাজীবের দিকেই ছুড়ে মারতেন। তিনি সেটা করেননি। বাক্যবিশারদ রাজীবের সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটিতে সুবিধা করতে না পেরে তিনি দেয়ালের দিকে তরকারির বাটি ছুড়ে মেরেছিলেন। দোষ আসলে রাজীবের কপালের, নইলে তরকারির বাটিটা দেয়ালে বাউন্স খেয়ে রাজীবের কপালে এসে লাগবে কেন? আর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজীবই বা কেন গৃহত্যাগের মতো একটি চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন।
আবার মারুফের বউটা মন্দ কিসে? রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরল মারুফ। সহূদয়া আঁখি ভাবি কিছুই বললেন না। কেবল মারুফ যখন ঘরে ঢুকে বাথরুমে গেল, তখন তিনি বাইরে থেকে সিটকিনি আটকে দিলেন। বাকি রাত মারুফ কারারুদ্ধ থুড়ি বাথরুমরুদ্ধ হয়ে রইল। বাথরুমে বসেই মারুফ একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, গৃহত্যাগ।
আর আমার বউ? কী আর বলব। অমন মেয়ে হয়ই না। হলেও বাঁচে না। লাখে একটা। ঘরে ঢুকব বলে কলবেল চাপলাম। মিতু দরজা খুলে বলল, কচুর লতি এনেছ?
তখনই ঝপ করে মনে পড়ল, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মিতু পই পই করে বলে দিয়েছিল কচুর লতি আর মুলাশাক কিনে নিয়ে যেতে। আমারই দোষ, ভুলে গিয়েছিলাম।
আমি জিবে কামড় দেওয়ার আগেই সে দরাম করে দরজা বন্ধ করে দিল।
আমি আবার কলবেল টিপলাম। কাজ হলো না দেখে দরজায় মৃদু করাঘাত করলাম। তাতেও কাঙ্ক্ষিত ফল না আসায় দরাম দরাম করে ঘা দিলাম। দরজা খুলল, তবে আমার বাসার না, পাশের বাসার। আওয়াজের চোটে পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক বেরিয়ে এসেছেন। পরিস্থিতি জরিপ করে করুণ কণ্ঠে বললেন, মাঝে মাঝে এই রকম হয়। সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে টুল পেতে দিচ্ছি। গ্যাঁট হয়ে বসে থাকুন। সংসারে টিকে থাকার প্রথম শর্ত হচ্ছে, ধৈর্য। বউরা মাঝেমধ্যে এমনটা করেই।
টুলে বসে মশার কামড় খেতে খেতে আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম, গৃহত্যাগ। এ ছাড়া গত্যন্তর নেই।
২.
আমি, রাজীব ও মারুফ রেন্ট-এ-কারের সন্ধানে কারওয়ান বাজার এলাকায় ঘুরছি। একটা গাড়ি ভাড়া করে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব। একটা রেন্ট-এ-কারের দোকান পেয়েও গেলাম। এসডি রেন্ট-এ-কার। খুব সস্তায় ভাড়া রফা হলো। এরপর গাড়ি দেখে কেমন যেন চেনা চেনা মনে হলো। একটু পর গাড়ির ড্রাইভার যখন এলেন, তখন আমাদের ভিরমি খাওয়ার দশা। এ যে আমাদের সিমু।
সিমু আমাদের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, যে দিনকাল পড়ছে ভাই। এই মুদ্রাস্ফীতির যুগে শুধু একটি চাকরি করে চলে, বলেন? এ জন্য একটা সাইড বিজনেস খুলেছি। গাড়িটা ভাড়ায় খাটাচ্ছি। ছুটি থাকলে নিজেই ট্রিপ মারি। আসেন গাড়িতে ওঠেন।
গাড়িতে উঠে আমরা তিনজন শুধালাম, এসডি রেন্ট-এ-কার মানে কী?
সিমু স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, এস মানে সিমু।
আমরা সমস্বরে বললাম, আর ডি তে...
সিমু কিছুই বলল না, মুচকি হাসল।
৩.
গাড়ি ছুটছে মহাসড়ক ধরে। আমরা তিন অভিমানী স্বামী গাড়িতে বসা। যত দূর চোখ যায়, চলে যাব।
রাজীব ধরা গলায় বলল, সিমু ভাই, গহিন কোনো খাদ দেখলে গাড়ি আলতো করে নামায়ে দিয়েন। এই যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না।
মারুফ চোখ মুছল।
আমি গান ধরলাম, আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না...।
৪.
শেষমেশ একটা অচেনা, গহিন এলাকায় গাড়ি ভিড়ল। সামনে নদী ছাড়া কিছু নেই।
নদীর সামনে এসে সিমু বলল, জিনস প্যান্ট পরে কি আর সন্ন্যাসী হওয়া যায়? জামাকাপড় কিছু আনছেন? ওর মধ্যে লুঙ্গি আছে?
নাঙ্গা গা, পরনে লুঙ্গি। নদীতে নামলাম। কালীগঙ্গা নদী। অসম্ভব চোরা স্রোত। আমাদের প্ল্যান, নদী পার হয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ব। খরস্রোতা নদী সাঁতরে ওপারে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রথমে আমার, তারপর মারুফ, সবশেষে সিমু এবং রাজীবের লুঙ্গি স্রোতে ভেসে গেল।
আমরা একবুক পানিতে অসহায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
না পারি এপারে আসতে, না যেতে পারি ওপারে।
অকূল দরিয়ায় অসহায় চার যুবক।
এমন সময় রাজীব বললেন, বস আমার পাশ দিয়ে একটা ইলিশ সাঁতার কেটে চলে গেল। লজ্জায় ধরতে পারলাম না।
আবার মারুফের বউটা মন্দ কিসে? রাতে দেরি করে বাড়ি ফিরল মারুফ। সহূদয়া আঁখি ভাবি কিছুই বললেন না। কেবল মারুফ যখন ঘরে ঢুকে বাথরুমে গেল, তখন তিনি বাইরে থেকে সিটকিনি আটকে দিলেন। বাকি রাত মারুফ কারারুদ্ধ থুড়ি বাথরুমরুদ্ধ হয়ে রইল। বাথরুমে বসেই মারুফ একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, গৃহত্যাগ।
আর আমার বউ? কী আর বলব। অমন মেয়ে হয়ই না। হলেও বাঁচে না। লাখে একটা। ঘরে ঢুকব বলে কলবেল চাপলাম। মিতু দরজা খুলে বলল, কচুর লতি এনেছ?
তখনই ঝপ করে মনে পড়ল, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মিতু পই পই করে বলে দিয়েছিল কচুর লতি আর মুলাশাক কিনে নিয়ে যেতে। আমারই দোষ, ভুলে গিয়েছিলাম।
আমি জিবে কামড় দেওয়ার আগেই সে দরাম করে দরজা বন্ধ করে দিল।
আমি আবার কলবেল টিপলাম। কাজ হলো না দেখে দরজায় মৃদু করাঘাত করলাম। তাতেও কাঙ্ক্ষিত ফল না আসায় দরাম দরাম করে ঘা দিলাম। দরজা খুলল, তবে আমার বাসার না, পাশের বাসার। আওয়াজের চোটে পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক বেরিয়ে এসেছেন। পরিস্থিতি জরিপ করে করুণ কণ্ঠে বললেন, মাঝে মাঝে এই রকম হয়। সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে টুল পেতে দিচ্ছি। গ্যাঁট হয়ে বসে থাকুন। সংসারে টিকে থাকার প্রথম শর্ত হচ্ছে, ধৈর্য। বউরা মাঝেমধ্যে এমনটা করেই।
টুলে বসে মশার কামড় খেতে খেতে আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম, গৃহত্যাগ। এ ছাড়া গত্যন্তর নেই।
২.
আমি, রাজীব ও মারুফ রেন্ট-এ-কারের সন্ধানে কারওয়ান বাজার এলাকায় ঘুরছি। একটা গাড়ি ভাড়া করে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব। একটা রেন্ট-এ-কারের দোকান পেয়েও গেলাম। এসডি রেন্ট-এ-কার। খুব সস্তায় ভাড়া রফা হলো। এরপর গাড়ি দেখে কেমন যেন চেনা চেনা মনে হলো। একটু পর গাড়ির ড্রাইভার যখন এলেন, তখন আমাদের ভিরমি খাওয়ার দশা। এ যে আমাদের সিমু।
সিমু আমাদের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, যে দিনকাল পড়ছে ভাই। এই মুদ্রাস্ফীতির যুগে শুধু একটি চাকরি করে চলে, বলেন? এ জন্য একটা সাইড বিজনেস খুলেছি। গাড়িটা ভাড়ায় খাটাচ্ছি। ছুটি থাকলে নিজেই ট্রিপ মারি। আসেন গাড়িতে ওঠেন।
গাড়িতে উঠে আমরা তিনজন শুধালাম, এসডি রেন্ট-এ-কার মানে কী?
সিমু স্টিয়ারিং ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, এস মানে সিমু।
আমরা সমস্বরে বললাম, আর ডি তে...
সিমু কিছুই বলল না, মুচকি হাসল।
৩.
গাড়ি ছুটছে মহাসড়ক ধরে। আমরা তিন অভিমানী স্বামী গাড়িতে বসা। যত দূর চোখ যায়, চলে যাব।
রাজীব ধরা গলায় বলল, সিমু ভাই, গহিন কোনো খাদ দেখলে গাড়ি আলতো করে নামায়ে দিয়েন। এই যন্ত্রণা আর নিতে পারছি না।
মারুফ চোখ মুছল।
আমি গান ধরলাম, আমায় ডেকো না, ফেরানো যাবে না...।
৪.
শেষমেশ একটা অচেনা, গহিন এলাকায় গাড়ি ভিড়ল। সামনে নদী ছাড়া কিছু নেই।
নদীর সামনে এসে সিমু বলল, জিনস প্যান্ট পরে কি আর সন্ন্যাসী হওয়া যায়? জামাকাপড় কিছু আনছেন? ওর মধ্যে লুঙ্গি আছে?
নাঙ্গা গা, পরনে লুঙ্গি। নদীতে নামলাম। কালীগঙ্গা নদী। অসম্ভব চোরা স্রোত। আমাদের প্ল্যান, নদী পার হয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ব। খরস্রোতা নদী সাঁতরে ওপারে যাওয়ার প্রাক্কালে প্রথমে আমার, তারপর মারুফ, সবশেষে সিমু এবং রাজীবের লুঙ্গি স্রোতে ভেসে গেল।
আমরা একবুক পানিতে অসহায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
না পারি এপারে আসতে, না যেতে পারি ওপারে।
অকূল দরিয়ায় অসহায় চার যুবক।
এমন সময় রাজীব বললেন, বস আমার পাশ দিয়ে একটা ইলিশ সাঁতার কেটে চলে গেল। লজ্জায় ধরতে পারলাম না।
No comments:
Post a Comment