এ কথা বোধহয় অনেকেই জানেন না, যে কোনো সময়ই আমাদের মাথার দশ শতাংশ চুল বিশ্রামরত অবস্থায় থাকে। দুই তিন মাস এভাবে বিশ্রামরত থাকার পর এসব চুল পড়ে যেতে থাকে। আর ওই জায়গায় নতুন করে চুল গজাতে থাকে। চুলের এই বৃদ্ধি দুই থেকে ছয় বছর পর্যন্ত চলতে পারে। এ সময় প্রতি মাসে চুল গড়ে প্রায় এক সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ যে কোনো সময়ই মাথার ৯০ শতাংশ চুলই বৃদ্ধিরত অবস্থায় থাকে। কাজেই চুলের বৃদ্ধি সংক্রান্ত এই চক্রের অংশ হিসেবে মাথা থেকে কিছু কিছু চুল পড়াকে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। তবে নানা কারণে মাথার চুল পড়া হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। খাদ্যে জিংক সহ কিছু কিছু প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি বা কোনো কঠিন অসুখ-বিসুখ কিংবা অপারেশনের পর পর মাথার চুল পড়তে পারে। হরমোন যেমন থাইরয়েড গ্রনি'র তৎরতা বেড়ে যাওয়ায় বা হ্রাস পাওয়ার কারণেও মাথার চুল পড়া শুরু হতে পারে। এ ছাড়া সন্তান হওয়ার তিন মাস পরে কোনো কোনো মহিলার চুল হঠাৎ করে পড়তে থাকে এবং দেহের হরমোন সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই এমনটা ঘটে থাকে। সাধারণ ভাবে গর্ভকালে নারী দেহে নানা রকম হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ সময় দেহে হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চুল পড়া বন্ধ থাকে। সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর দেহের হরমোন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে এসব চুল পড়তে শুরু করে। সে সময় দেহ আবার চুল বৃদ্ধি ও ঝরে যাওয়ার পুরানো চক্রে ফিরে যায়। চুল নিয়ে এতো কথা বলা হলো রেডিও তেহরানের এক শ্রোতা ভাইয়ের চিঠির প্রসংগে। ভারতের বাকুড়া জেলার তালডাংরা থানার পিয়ারডোবা ডাকঘরের রাজপুর গ্রাম থেকে শ্রোতা ভাই সাইফুদ্দিন খান চুল উঠে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। তার বয়স ১৯ বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। এই সংকটের হাত থেকে এই শ্রোতা ভাই কি করে রক্ষা পেতে পারেন তা জানতে চেয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ত্বক ও যৌন ব্যাধি বিভাগের প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাবউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর সাথে। এখানে তার সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হলো ।
রেডিও তেহরান : আচ্ছা ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রথমেই আমরা জানতে চাইবো মানব দেহে কি কি ধরনের চুল থাকে ?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : নবজাতক শিশু যে চুল নিয়ে জন্ম নেয় সেগুলো একসময় সবই পড়ে য়ায় । এরপরে মানব দেহে যে নতুন চুল গজায় সেগুলো হালকা। আর বড় ও অধিক ঘন যে চুলগুলো মাথায় , ভ্রুতে থাকে এগুলোকে আমরা বলি টার্মিনাল হেয়ার । আবার প্রত্যেকটা চুল বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে । যেমন চুলের একটা গ্রোথ খাকে এবং এই বাড়ন্ত কালটা হচ্ছে এক হাজার দিন । চুলের আর একটা স্টেজ রয়েছে যাকে আমরা রেস্টিং স্টেজ বলি । সাধারণত এর সময় একশ দিন হয়ে থাকে। এছাড়া এই দুই ধরনের চুলের মাঝামাঝি চুলের আরেকটা স্টেজ রয়েছে যার সময়কাল প্রায় ১০ দিন ।
রেডিও তেহরান : মানব দেহে সাধারণ ভাবে কি পরিমাণ চুল থাকে?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : এটা মানব দেহের আকারের উপর নির্ভর করে। তবে মাথার চুল গণনা করে দেখা গেছে যে মাথায় সাধারণত এক লক্ষ চুল থাকে এবং এরমধ্যে গড়ে দৈনিক একশটি চুল পড়া স্বাভাবিক ।
রেডিও তেহরান : জ্বি এই চুল পড়ার সূত্র ধরেই জানতে চাইবো, চুল কেনো পড়ে ?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : চুল পড়াকে বড় ভাবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো অস্থায়ী এবং আরেকটা হলো স্থায়ী চুল পড়া । অস্থায়ী চুল পড়ার মধ্যে অনেকগুলো ধরন রয়েছে । যেমন হঠাৎ করে মাথা, ভ্রু বা শরীরের যেকোন অংশে অল্প এলাকায় চুলগুলো পড়ে যাওয়া । হয়তো রাতে ঘুমালো, সকালে ওঠে দেখে মাথায় চুল নেই । এটাকে প্রচলিত ভাষায় বলা হয় কেউ চুল কেটে নিয়ে গেছে । আসলে এটা একটা রোগের জন্য হয় । এই অল্প এলাকায় চুল পড়া যখন পুরনো হয়ে যায় । তখন এটাকে আমরা বলি এলোকেশিয়া টোটালিস্ট । অর্থাৎ এ অবস্থায় পুরো মাথা এবং সমগ্র শরীরে চুল পড়ে যায় । সাধারণত কোন ওষুধ খেলে বিশেষ করে ক্যান্সারের ওষুধ খেলে এভাবে চুল পড়ে । কিছু চুল পড়া রয়েছে যেগুলো বড় ধরনের কোন রোগের কারণে হয়ে থাকে । যেমন অপারেশন হলে, অথবা মেয়েদের ডেলিভারী হলে, দীর্ঘদিন জ্বর থাকলে কিংবা বেশি ডাইড কন্ট্রোল করলে ।
রেডিও তেহরান : আমাদের যে শ্রোতা ভাইটি চুল পড়ার কথা বলেছেন, তার চুল কেনো পড়ছে?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : আমাদের এই ভাইটি যে সমস্যার কথা বলেছেন, এই বয়সে সম্ভবত সেটি তার হরমোনের জন্য হয়ে থাকতে পারে । বয়ঃসন্ধি অতিক্রম করার পরে আমাদের শরীরে যে এ্যান্ড্রোজেন তৈরি হয় তার প্রভাবে বিশেষ প্যাটার্নে মাথার চুল পড়ে যায় । এটাকে আমরা এ্যান্ড্রোজেনিক এলোকেশিয়া বা মেইল পেটার্ন এলোকেশিয়া বলি । এটা মূলত পুরুষের হয় আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদেরও হয়ে থাকে । এছাড়া যদি কোন কারণে কারো মানসিক টেনশন, হতাশা বা দুশ্চিন্তা থাকে তখন তারা অনেক সময় আসে- আসে- নিজের অজান্তেই মাথার চুল তুলে ফেলেন । যেমন টিভি দেখছেন অথবা সিনেমা দেখছেন অথবা লেখাপড়া করছেন কিন্তু হাতটা মাথায় এবং চুল তুলছেন । এছাড়া শরীরের কিছু অভ্যন্তরীণ রোগ যেমন ডায়াবেটিস, রক্ত চলাচল কমে যাওয়া, অথবা থাইরয়েড গ্লান্ডের কাজ বা ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে চুল পড়ে যেতে পারে । এগুলো হলো অস্থায়ী কারণ । আবার বেশ কিছু চর্ম রোগের কারণে স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যায় । তবে এই স্থায়ী চুল পড়ার একটা অন্যতম কারণ হলো গরম চিরুণি দিয়ে যদি কেউ মাথা আচড়ায় অর্থাৎ চুলের সৌন্দর্য বর্ধিত করার জন্য । যাকে আমরা হটকম এলোকেশিয়া বলি। এছাড়া অনেকেই রয়েছে যারা খুব টাইট করে চুল বাঁধেন । এই ক্ষেত্রেও স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যেতে পারে । এছাড়া অনেক সময় মাথায় টিউমার হলে, বেশি চাপ পড়লে , প্রভৃতি কারণে স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যেতে পারে ।
রেডিও তেহরান : শ্রোতা ভাই সাইফুদ্দিন খানকে চিকিৎসার জন্য কি করতে হবে?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : প্রথমত তার কি ধরনের চুল পড়ছে এটাতো আমাদের কাছে অস্পষ্ট । তবে ১৯ বছর বয়সে সাধারণত যে চুল পড়ে সেটার সর্বাধিক কারণ হলো মেইল পেটার্ন এলোকেশিয়া বা এন্ড্রোজেনিক এলোকেশিয়া । অর্থাৎ মানুষ যখন বয়ঃসন্ধি অতিক্রম করে টিন এইজ পার হয় তখন শরীরে এন্ড্রোজেন তৈরি হয় যেটাকে বলা হয় সেক্স হরমোন ।এই হরমোনের ফলে চুলের উপর যে প্রভাব পড়ে এতে অনেকের চুল পড়ে যায় । অর্থাৎ শরীরের যে অংশের চুল প্রয়োজন বিশেষ করে মাথায় সেখানে পড়ে যায় আর মেয়েদের ক্ষেত্রে যেখানে চুলের প্রয়োজন নেই সেখানে চুল গজায় । একই হরমোনের দুটো কাজ । স্বাভাবিক চুল যেখানে থাকার প্রয়োজন সেখানে চুল পড়ে যায় আর যেখানে কাঙ্খিত নয় সেখানে অনাকাঙ্খিত চুল গজায়। শ্রোতা ভাইটির ক্ষেত্রে মনে হয় এই বয়সে তার চুল পড়ার এটিই কারণ হতে পারে । এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে তা হলো তাকে প্রথমত পরীক্ষা করতে হবে কি কারণে তার চুল পড়ছে ? যদি বয়সের কারণে হয় তাহলে মিনক্সিডিল নামে একটা লোশন রয়েছে । এটি প্রেসারের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় । এই মিনক্সিডিল আমরা যদি মাথায় লাগাই তাহলে মাথায় চুল গাজাবে । তবে এই ওষুধের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে যেমন এক পার্সেন্ট, দুই পার্সেন্ট, ৫ পার্সেন্ট । চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক এই ওষুধের এর মাত্রা পর্যায়ক্রমে বাড়াতে হবে । এছাড়া যেহেতু এন্ড্রোজেনের জন্য চুল পড়ে যায় সেজন্য এই এন্ড্রোজেনের এগেইন্সটে আমরা যে ওষুধগুলো দেই, মহিলাদের ক্ষেত্রে তার সাথে এস্ট্রোজেন যোগ করতে হবে । এই ওষুধগুলো ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে চুল গজাবে । এ ছাড়া খাদ্য ঘাটতি জনিত কারণে চুল পড়ছে কিনা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন তাকে পরামর্শ দেন। যে খাদ্যের ঘাটতির জন্য চুল পড়ছে সে ঘাটতি পূরণ করা হলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। চুল পড়া বন্ধ না হলে আজকাল মাথায় চুল প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব বলে তিনি জানান।
রেডিও তেহরান : অর্থাৎ শ্রোতা ভাই সাইফুদ্দিন খানের অবিলম্বে একজন ডারমাটোলজিস্ট বা ত্বক বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত বলে কি আপনি মনে করেন?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : অবশ্যই । এক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে যদি তিনি সঠিক চিকিৎসা নেন তাহলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনাই সর্বাধিক ।
শ্রোতা ভাই ভাই সাইফুদ্দিন খানের মতো যারা চুল পড়ার সংকটে ভুগছেন তারা এই আলোচনা থেকে উপকৃত হবেন এবং দ্রুত চিকিৎসার জন্য একজন ভালো চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন বলে আশা করছি।
রেডিও তেহরান : আচ্ছা ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রথমেই আমরা জানতে চাইবো মানব দেহে কি কি ধরনের চুল থাকে ?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : নবজাতক শিশু যে চুল নিয়ে জন্ম নেয় সেগুলো একসময় সবই পড়ে য়ায় । এরপরে মানব দেহে যে নতুন চুল গজায় সেগুলো হালকা। আর বড় ও অধিক ঘন যে চুলগুলো মাথায় , ভ্রুতে থাকে এগুলোকে আমরা বলি টার্মিনাল হেয়ার । আবার প্রত্যেকটা চুল বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে । যেমন চুলের একটা গ্রোথ খাকে এবং এই বাড়ন্ত কালটা হচ্ছে এক হাজার দিন । চুলের আর একটা স্টেজ রয়েছে যাকে আমরা রেস্টিং স্টেজ বলি । সাধারণত এর সময় একশ দিন হয়ে থাকে। এছাড়া এই দুই ধরনের চুলের মাঝামাঝি চুলের আরেকটা স্টেজ রয়েছে যার সময়কাল প্রায় ১০ দিন ।
রেডিও তেহরান : মানব দেহে সাধারণ ভাবে কি পরিমাণ চুল থাকে?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : এটা মানব দেহের আকারের উপর নির্ভর করে। তবে মাথার চুল গণনা করে দেখা গেছে যে মাথায় সাধারণত এক লক্ষ চুল থাকে এবং এরমধ্যে গড়ে দৈনিক একশটি চুল পড়া স্বাভাবিক ।
রেডিও তেহরান : জ্বি এই চুল পড়ার সূত্র ধরেই জানতে চাইবো, চুল কেনো পড়ে ?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : চুল পড়াকে বড় ভাবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো অস্থায়ী এবং আরেকটা হলো স্থায়ী চুল পড়া । অস্থায়ী চুল পড়ার মধ্যে অনেকগুলো ধরন রয়েছে । যেমন হঠাৎ করে মাথা, ভ্রু বা শরীরের যেকোন অংশে অল্প এলাকায় চুলগুলো পড়ে যাওয়া । হয়তো রাতে ঘুমালো, সকালে ওঠে দেখে মাথায় চুল নেই । এটাকে প্রচলিত ভাষায় বলা হয় কেউ চুল কেটে নিয়ে গেছে । আসলে এটা একটা রোগের জন্য হয় । এই অল্প এলাকায় চুল পড়া যখন পুরনো হয়ে যায় । তখন এটাকে আমরা বলি এলোকেশিয়া টোটালিস্ট । অর্থাৎ এ অবস্থায় পুরো মাথা এবং সমগ্র শরীরে চুল পড়ে যায় । সাধারণত কোন ওষুধ খেলে বিশেষ করে ক্যান্সারের ওষুধ খেলে এভাবে চুল পড়ে । কিছু চুল পড়া রয়েছে যেগুলো বড় ধরনের কোন রোগের কারণে হয়ে থাকে । যেমন অপারেশন হলে, অথবা মেয়েদের ডেলিভারী হলে, দীর্ঘদিন জ্বর থাকলে কিংবা বেশি ডাইড কন্ট্রোল করলে ।
রেডিও তেহরান : আমাদের যে শ্রোতা ভাইটি চুল পড়ার কথা বলেছেন, তার চুল কেনো পড়ছে?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : আমাদের এই ভাইটি যে সমস্যার কথা বলেছেন, এই বয়সে সম্ভবত সেটি তার হরমোনের জন্য হয়ে থাকতে পারে । বয়ঃসন্ধি অতিক্রম করার পরে আমাদের শরীরে যে এ্যান্ড্রোজেন তৈরি হয় তার প্রভাবে বিশেষ প্যাটার্নে মাথার চুল পড়ে যায় । এটাকে আমরা এ্যান্ড্রোজেনিক এলোকেশিয়া বা মেইল পেটার্ন এলোকেশিয়া বলি । এটা মূলত পুরুষের হয় আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেয়েদেরও হয়ে থাকে । এছাড়া যদি কোন কারণে কারো মানসিক টেনশন, হতাশা বা দুশ্চিন্তা থাকে তখন তারা অনেক সময় আসে- আসে- নিজের অজান্তেই মাথার চুল তুলে ফেলেন । যেমন টিভি দেখছেন অথবা সিনেমা দেখছেন অথবা লেখাপড়া করছেন কিন্তু হাতটা মাথায় এবং চুল তুলছেন । এছাড়া শরীরের কিছু অভ্যন্তরীণ রোগ যেমন ডায়াবেটিস, রক্ত চলাচল কমে যাওয়া, অথবা থাইরয়েড গ্লান্ডের কাজ বা ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে চুল পড়ে যেতে পারে । এগুলো হলো অস্থায়ী কারণ । আবার বেশ কিছু চর্ম রোগের কারণে স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যায় । তবে এই স্থায়ী চুল পড়ার একটা অন্যতম কারণ হলো গরম চিরুণি দিয়ে যদি কেউ মাথা আচড়ায় অর্থাৎ চুলের সৌন্দর্য বর্ধিত করার জন্য । যাকে আমরা হটকম এলোকেশিয়া বলি। এছাড়া অনেকেই রয়েছে যারা খুব টাইট করে চুল বাঁধেন । এই ক্ষেত্রেও স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যেতে পারে । এছাড়া অনেক সময় মাথায় টিউমার হলে, বেশি চাপ পড়লে , প্রভৃতি কারণে স্থায়ীভাবে চুল পড়ে যেতে পারে ।
রেডিও তেহরান : শ্রোতা ভাই সাইফুদ্দিন খানকে চিকিৎসার জন্য কি করতে হবে?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : প্রথমত তার কি ধরনের চুল পড়ছে এটাতো আমাদের কাছে অস্পষ্ট । তবে ১৯ বছর বয়সে সাধারণত যে চুল পড়ে সেটার সর্বাধিক কারণ হলো মেইল পেটার্ন এলোকেশিয়া বা এন্ড্রোজেনিক এলোকেশিয়া । অর্থাৎ মানুষ যখন বয়ঃসন্ধি অতিক্রম করে টিন এইজ পার হয় তখন শরীরে এন্ড্রোজেন তৈরি হয় যেটাকে বলা হয় সেক্স হরমোন ।এই হরমোনের ফলে চুলের উপর যে প্রভাব পড়ে এতে অনেকের চুল পড়ে যায় । অর্থাৎ শরীরের যে অংশের চুল প্রয়োজন বিশেষ করে মাথায় সেখানে পড়ে যায় আর মেয়েদের ক্ষেত্রে যেখানে চুলের প্রয়োজন নেই সেখানে চুল গজায় । একই হরমোনের দুটো কাজ । স্বাভাবিক চুল যেখানে থাকার প্রয়োজন সেখানে চুল পড়ে যায় আর যেখানে কাঙ্খিত নয় সেখানে অনাকাঙ্খিত চুল গজায়। শ্রোতা ভাইটির ক্ষেত্রে মনে হয় এই বয়সে তার চুল পড়ার এটিই কারণ হতে পারে । এক্ষেত্রে যা করা যেতে পারে তা হলো তাকে প্রথমত পরীক্ষা করতে হবে কি কারণে তার চুল পড়ছে ? যদি বয়সের কারণে হয় তাহলে মিনক্সিডিল নামে একটা লোশন রয়েছে । এটি প্রেসারের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় । এই মিনক্সিডিল আমরা যদি মাথায় লাগাই তাহলে মাথায় চুল গাজাবে । তবে এই ওষুধের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে যেমন এক পার্সেন্ট, দুই পার্সেন্ট, ৫ পার্সেন্ট । চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক এই ওষুধের এর মাত্রা পর্যায়ক্রমে বাড়াতে হবে । এছাড়া যেহেতু এন্ড্রোজেনের জন্য চুল পড়ে যায় সেজন্য এই এন্ড্রোজেনের এগেইন্সটে আমরা যে ওষুধগুলো দেই, মহিলাদের ক্ষেত্রে তার সাথে এস্ট্রোজেন যোগ করতে হবে । এই ওষুধগুলো ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে চুল গজাবে । এ ছাড়া খাদ্য ঘাটতি জনিত কারণে চুল পড়ছে কিনা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন তাকে পরামর্শ দেন। যে খাদ্যের ঘাটতির জন্য চুল পড়ছে সে ঘাটতি পূরণ করা হলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। চুল পড়া বন্ধ না হলে আজকাল মাথায় চুল প্রতিস্থাপন করাও সম্ভব বলে তিনি জানান।
রেডিও তেহরান : অর্থাৎ শ্রোতা ভাই সাইফুদ্দিন খানের অবিলম্বে একজন ডারমাটোলজিস্ট বা ত্বক বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত বলে কি আপনি মনে করেন?
ডাক্তার শাহাবুউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী : অবশ্যই । এক্ষেত্রে হতাশ না হয়ে যদি তিনি সঠিক চিকিৎসা নেন তাহলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনাই সর্বাধিক ।
শ্রোতা ভাই ভাই সাইফুদ্দিন খানের মতো যারা চুল পড়ার সংকটে ভুগছেন তারা এই আলোচনা থেকে উপকৃত হবেন এবং দ্রুত চিকিৎসার জন্য একজন ভালো চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন বলে আশা করছি।
No comments:
Post a Comment