Tuesday, June 25, 2013

গাধারা ‘গাধা’ নয়!


গাধারা ‘গাধা’ নয়!
গাধা একটি নিরীহ প্রাণী। এরা মানুষের অত্যন্ত অনুগত। কারো ক্ষতি করে না। মানুষ অপমান বা ভদ্র ভাষার গালি হিসেবে ‘গাধা’ শব্দটি ব্যবহার করে। এগুলো আমরা সবাই জানি।

‘গাধা’ শব্দটা আমরা বেশি ব্যবহার করি নেতিবাচক অর্থে। কিন্তু গাধা কর্মঠ, বুদ্ধিমান এবং উপকারী প্রাণীও বটে। এটা সবাই কি জানি? হয়তো জানি না, হয়তো জানলেও গাধা শব্দটা বলতে, ব্যবহার করতে ভালো লাগে।

তাই যদি না হোতো, তাহলে ক্লাসে পড়া না পারলে শিক্ষকরা বলতেন না ‘গাধা’, অফিস বা নিজ কর্মক্ষেত্রে বেশি কাজ করলে কেউ বলতেন না ‘গাধা’র মতো খাটছিস কেন, কোনো কথা বুঝতে না পারলে, কোনো কাজ ঠিকমতো না করতে পারলে তাকে বলতো না ‘গাধা’।

কিন্তু এ প্রশ্ন করা যেতেই পারে যে গাধারা কতটুকু ‘গাধা’। আসলে কি এই উপকারী প্রাণীটির নাম ব্যবহার করে কাউকে অপমান করা উচিত?

তাহলে এখন আসা যাক গাধারা কী করে, কী করতে পারে সেসব বিষয়ে।

ঘোড়া আমরা সবাই চিনি। গাধাকে ঘোড়ার ছোট সংস্করণ বললে খুব বেশি ভুল হবে না। অথচ, একটি গাধা একই আকারের একটি  ঘোড়া থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী প্রাণী।

গাধার অবিশ্বাস্য স্মৃতিশক্তি আছে। তারা পর্যন্ত ২৫ বছর আগের এলাকা এবং অন্য গাধাদের তারা চিনতে পারে।

গাধা প্রচণ্ড জেদি এবং আত্মরক্ষা করার প্রবল ক্ষমতা আছে। গাধাকে ভয় দেখিয়ে বা জোর করে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।

কোনো ঘটনায় গাধা সহজে চমকে ওঠে না। এরা প্রখর কৌতূহলী।
গাধার চিন্তাধারা ঘোড়া থেকে স্বাধীন এবং তাদের নিজের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

একটি গাধা মরু পরিবেশে ৬০ মাইল দূরে থেকে অন্য গাধার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে। ঘোড়ার চেয়ে তাদের আছে অনেক বড় কান, যা তাদের শীতল রাখতে সহায়তা করে।

গাধা একা থাকতে পছন্দ করে না। সঙ্গী হিসেবে অন্য প্রাণী তাদের পছন্দ।

পশুপালকদের কাছে গাধা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। একজন দক্ষ পশুপালক পশুদের নেতা হিসেবে শক্তিশালী গাধাকে বেছে নেবেন। কারণ, খামারে পালন করা পশুরা অন্য হিংস্র পশু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু গাধা নেকড়ে বাঘ বা অন্য শিকারীর হাত থেকে সবাইকে রক্ষা করতে পারে সংকেত জানিয়ে।

বিশ্ব সভ্যতার ঐতিহ্য গড়তেও গাধাদের ভূমিকা কম নয়। কারণ, ভারি সব উপকরণ বহন করতে ব্যবহার করা হয়েছে গাধাকে। মিশরীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর অধিকাংশ ধাতু বহন করা হয়েছিল গাধার মাধ্যমে।

শুধু তাই না, গ্রিসে সংকীর্ণ পথের ওপর কাজ করার জন্যও গাধা ব্যবহার করা হইয়েছিল গাধাকে।

রোমান আর্মিরা গাধাকে কৃশিপালিত ও পণ্য বহনকারী প্রাণী হিসেবে ব্যবহার করতো। ভারতের মরু অঞ্চল রাজস্থান ও জয়পুরে অন্যতম বাহন গাধা। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মালামাল নিয়ে এরা সহজে চলাফেরা করতে পারে।

গাধারা বিশ্বের বহু অঞ্চলে জল, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ, জমি চাষ এবং পরিবহন বাজারে উত্পাদনে সাহায্য করতে ব্যবহার করতো।

গাধা গবাদি পশু, ভেড়া এবং ছাগলকে পাহারা দেয়। বন্য কুকুর থেকে রক্ষা করতে গাধা তাদের সতর্ক করে দিতে পারে।

গাধা পানি সম্পর্কে খুব সচেতন। তাই পরিষ্কার পানি অপরিহার্য। সে প্রতিদিন ১০ থেকে ২৫ লিটার পানি পান করে। সে কখনও নোংরা পানি খেতে চায় না।

গাধারা মাঠ থেকে খুব ভাল তাজা সবুজ ঘাস খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে এবং সেটা সারাটা দিনও হতে পারে!
 
গাধারা তাদের বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে। অন্য প্রাণীদের মতো তারা লাথি মারে না। তারা তাদের বাচ্চাদের বুদ্ধিমান প্রাণীদের মতো আগলে রাখে। নিজের বাচ্চা ছাড়াও তাদেরকে অন্য প্রাণীর দায়িত্ব নিতে দেখা যায়।

এমন কি প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে তাদের সঙ্গ দেওয়ার কথাও জানা যায়। প্রতিবন্ধীরা গাধাদের সঙ্গে সময় কাটালে মানসিকভাবে অনেক সুস্থবোধ করে!

অসুস্থ ঘোড়াদের সঙ্গীও কিন্তু গাধা! কোনো আহত বা অসুস্থ ঘোড়াকে রাখা হয় গাধার সঙ্গে!

একটা ঘোড়া থেকে একটি গাধা খুব বেশি পরিছন্ন প্রাণী। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া খুবই সহজ। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তারা খুবই কম সময় নেয়।

গাধা কোনো দিক দিয়েই আমাদের জন্য ক্ষতিকর প্রাণী নয়। তারা মানুষ ও পশুকে শুধু উপকারই করে। গাধাদের বোকা প্রাণী বলা হলেও, উপরের তথ্যগুলো জানার পর নিশ্চয় কেউ গাধাকে শুধু বোকা বলবেন না।

কথায় কথায় একে অন্যকে ‘গাধা’ বলার আগে নিশ্চয় একবার ভাববেন।

No comments:

Post a Comment