Saturday, June 15, 2013

বাবার কপালে হাত রাখতেই পরীর চোখ কপালে উঠে গেল! চোখ বড় বড় করে বলল, ‘বাবা, তোমার তো গা পুড়ে যাচ্ছে!’ 
সত্যি সত্যিই তো আর বাবার গা পুড়ে যাচ্ছে না। কিন্তু তার পরও পরী কথাটা বলল। খুব বেশি জ্বর হলে বড়রা এই কথাটা বলে। পরী কথাটা শিখেছে ওর বাবার কাছ থেকেই। দুমাস আগে যখন ওর খুব জ্বর হলো, তখন বাবাও ওর কপালে হাত রেখে একই কথা বলেছিলেন। 
পরীর কথা শুনে বাবা কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘বলিস কী রে মা! এ তো ভয়ানক কথা! শিগগির আমার গায়ে পানি ঢেলে দে।’ 
পরী বলল, ‘সত্যিই বাবা, তোমার অনেক জ্বর!’ বলতে বলতে পরীর চোখে পানি চলে এল! বাবা পরীকে বুকে জোরে চেপে ধরে রেখে বললেন, ‘বোকা মেয়ে, তুই কাঁদলে তো আমার জ্বর আরও বাড়বে!’ 
পরী বাবার বুকে মুখ গুঁজে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা বাবা, এই পচা জ্বর কেন হয়?’ বাবা বললেন, ‘একটা পাজি ভাইরাস আছে। ওই পাজিটা যখন সুড়ুৎ করে শরীরে ঢুকে পড়ে, তখন জ্বর হয়!’
: আচ্ছা বাবা, ভাইরাসটা দেখতে কেমন?
: ভাইরাসটা? ভাইরাসটা বেশ নাদুশনুদুশ রে মা। অনেকটা বেলুনের মতো!
: বেলুনের মতো? তাহলে তো ওকে ফাটিয়ে ফেললেই মরে যাবে, তাই না?
বাবা হাসি চেপে মুখ গম্ভীর রাখার চেষ্টা করে বললেন, ‘তা নিশ্চয়ই যাবে!’

২.
পরীর খুব সাহস। রাত তখন কয়টা বাজে ও জানে না। বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে মা-বাবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেল ও। দরজাটা একটু ফাঁক করতেই দেখল পাজি ভাইরাসটা বাবার আশপাশে ঘুরঘুর করছে! বাবা যেমনটা বলেছিলেন, ভাইরাসটা ঠিক তেমনই। একটা সবুজ রঙের বেলুনের মতো! ছোট ছোট চোখ, ইয়া বড় বড় দাঁত! কী ভয়ংকর চেহারা। কিন্তু না, ভয় পেলে চলবে না। সাহস করে এগিয়ে গেল পরী। বিছানায় উঠে খপ করে ধরে ফেলল ভাইরাসটাকে! হঠাৎ এমন আক্রমণে ভাইরাসের তো কাঁদোমাদো অবস্থা। পরীর কাছে হাতজোড় করে বলল, ‘পরী আপু, ছেড়ে দাও, প্লিজ! এই যে কান ধরছি!’ 
পরী দুই হাতে ভাইরাসটাকে ধরে একটা শক্ত ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, ‘কত্ত বড় সাহস, তুই আমার বাবাকে জ্বর দিস! তোকে আজকে ফুটোই করে ফেলব!’ বলতে না বলতেই হাত ফসকে বেরিয়ে গেল পাজি ভাইরাসটা! তাড়াহুড়ো করে ঢুকতে লাগল বাবার নাকের ভেতর দিয়ে। আর ঠিক তখনই বাবার গোঁফের খোঁচা খেয়ে ফটাস!

৩.
পরদিন সকালেই বাবার জ্বর সেরে গেল! কী যে ভালো লাগছিল পরীর! সকালে নাশতার টেবিলে বসে মা-বাবাকে সব খুলে বলল ও। পরীর স্বপ্নের কথা শুনে মা আর বাবার চোখও কপালে উঠে গেল, ‘বলিস কী রে মা! তোর স্বপ্নটা তো সত্যি হয়ে গেছে!’ 
পরী পাউরুটিতে একটা কামড় বসিয়ে বলল, ‘বাবা, শোনো, বড় হলে আমি কিন্তু তোমার মতো গোঁফ রাখব! ঠিক আছে?’

No comments:

Post a Comment