সাইনাস হয়েছে বা সাইনাসে কষ্ট পেয়ছি এমন কথা আমরা অনেক সময়ই বলে থাকি । তবে আমরা অনেকেই জানি না দেহের বিশেষ বায়ু পূর্ণ গহ্বরকে সাইনাস বলা হয় । এই গহ্ববর বা ছিদ্র সবারই দেহে আছে । তাই এটি কোনো রোগ নয় । যখন কোনো সংক্রমণ ঘটে সাইনাসে বা তার আশে পাশে প্রদাহ দেখা দেয় বা সাইনাসের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় তখন তাকে সাইনোসাইটিস বলা হয় । এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল , আর তা হলো চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় 'আইটিস' মানে হল প্রদাহ ।
সাইনোসাইটিস সাইনাস বন্ধ করে দেয়। এই রোগটি নাক, কান ও গলার রোগ হিসেবে সাধারণ ভাবে পরিচিত। ঢাকার খ্যাতনামা অন্যতম হাসপাতাল হলি ফ্যামিলির নাক কান এবং গলা রোগ বিভাগের প্রফেসর এস.এম.খোরশেদ মজুমদারের সাথে এই রোগের ব্যাপারে কথা বলার সময় তিনি আমাদের এ সব বিষয় অবহিত করেন ।
এ রোগের কারণের কথা বলতে যেয়ে প্রফেসর এস এম খোরশেদ মজুমদার আমাদের জানান, শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে ঘন ঘন প্রদাহ, হাম, হুপিং কাশি, ইনফুয়েঞ্জা জাতীয় সংক্রামক রোগে আক্রমণ ,এলার্জি জনিত সমস্যা , নাকের পলিপ বা টিউমার , শিশুদের টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহ নাকের বাঁকা হাড় । উত্তেজক পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি । এ ছাড়া এ রোগের শুরু ভাইরাসের প্রভাবে হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার কারণে রোগ জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ।
এ রোগের কারণের কথা বলতে যেয়ে প্রফেসর এস এম খোরশেদ মজুমদার আমাদের জানান, শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে ঘন ঘন প্রদাহ, হাম, হুপিং কাশি, ইনফুয়েঞ্জা জাতীয় সংক্রামক রোগে আক্রমণ ,এলার্জি জনিত সমস্যা , নাকের পলিপ বা টিউমার , শিশুদের টনসিল ও এডিনয়েডের প্রদাহ নাকের বাঁকা হাড় । উত্তেজক পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি । এ ছাড়া এ রোগের শুরু ভাইরাসের প্রভাবে হলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার কারণে রোগ জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে ।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন, সাইনোসাইটিস দুই ধরনের হয়ে থাকে একিউট বা তীব্র প্রদাহ যা ৩/৪ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায় । ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ যা ৩ সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশিদিন ধরে চলতে থাকে । সাইনাসের প্রথম অবস্থায় খুব কম রোগীই চিকিৎসক বা ডাক্তারেরর কাছে যান । সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী সাইনাসের প্রদাহ নিয়েই রোগীরা ডাক্তারের কাছে যান বলে দেখা গেছে ।
খালি চোখে সাইনাস দেখার কোনো উপায় নেই । কাজেই সাইনোসাইটিস হলেও তা খালি চোখ দেখে বোঝা যাবে না । প্রথম অবস্থায় এ রোগ ধরা বেশ কষ্টকর । সাইনোসাইটিস নির্ণয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে অবশ্যই এন্ডোস্কোপি বা এক্স রে বা সিটি স্কানের সহায়তা নেয়ার প্রয়োজন পড়ে । সাইনোসাইটিস হয়েছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক এক্সরের কথা বললে রোগীকে মোটেও বিরক্ত হওয়া ঠিক হবে না । এ প্রসংগে প্রফেসর ডা.খোরশেদ মজুমদার আমাদের বলেলেন, সাইনোসাইটিস হলে যে সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো নাক বন্ধ হয়ে প্রচণ্ড মাথা ধরা, মাথাব্যথা ও অসহ্য যন্ত্রণা হয়ে থাকে ।নাক বন্ধ থাকা, নাক দিয়ে বেশ নিঃসরণ ঘটে । অর্থাৎ পুঁজ, শ্লেষা বের হওয়া, সাথে কাশি, সকাল বেলা বমি বমি ভাব ইত্যাদিও দেখা দিতে পারে । সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের ঘন ঘন সর্দি ছাড়াও বার বার মধ্য কানেও প্রদাহ হয়ে থাকে । জ্বর জ্বর ভাবও দেখা দেয় ।অনেক রোগের ক্ষেত্রে বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে দেখা দেয় । সাইনাসের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয় না বলে প্রফেসর খোরশেদ মজুমদার জানান । তিনি বলেন, সাধারণ ভাবে শিশুদের সাইনাস হয় না। আর হলেও তা এলার্জি জনিত কারণে বা এডেনয়েড নামের নাকের একটি রোগের কারণে হয়ে থাকে ।
পরিসংখ্যানকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে মনে করা হয় থাকে । সাইনোসাইটিসে আক্রমণের জন্য কোনো পরিসংখ্যান আছে কিনা স্বাভাবিক একথা জানতে চাওয়া হয় । এ প্রশ্নের জবাবে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সাইনোসাইটিসের ব্যাপারে বাংলাদেশে ঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই । এ রোগ নিয়ে বাংলাদেশে শক্তিশালী পরিসংখ্যান চালানো না হলেও অন্য অনেক দেশে পরিসংখ্যান চালানো হয়েছে । তাতে দেখা গেছে ১০০ জনের মধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । তবে ঠান্ডার দেশে এই রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায় । ডা.খোরশেদ মজুমদার আমাদের বললেন , ঋতু ভেদে মানে শীতকাল বা গরমকালে অনেক রোগ বৃদ্ধি পায় । অর্থাৎ ঋতু অনেক রোগের ক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করে থাকে । এ ছাড়া ঋতু পরিবর্তনের সময়টি অর্থাৎ শীত থেকে গরমকালে বা গরমকাল থেকে শীত কালে যাওয়ার সময় অনেক রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় । গরমকাল শেষে যখন শীত পড়তে থাকে তখন সাধারণ ভাবে ঠান্ডাও বেশি লাগে এবং সাইনোসাইটিসের প্রকোপও বেশি দেখা দেয় । তবে শীত পড়ে গেলে এই রোগের প্রকোপ হ্রাস পায়। কিন্তু আবার যখন ঋতু পরিবর্তনের পালা আসে অর্থাৎ গরম পড়তে আরম্ভ করে তখন এলার্জির উৎপাত বাড়ে আর একই সাথে এই রোগও বাড়তে থাকে।
সাইনাসের রোগ থেকে থেকে ভালো থাকতে আগে প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন । সুষম খাদ্যগ্রহণ, পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা, ধুলোবালি, ধোঁয়া এড়িয়ে চলা, ধুমপান পরিহার, ঠান্ডা, বাসি পঁচা পানাহার বন্ধ, দাঁত ও মুখের সঠিক পরিচর্যাসহ নাক ও মুখের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে । এ ছাড়া নাক ও গলার বিভিন্ন রোগের সময়মতো চিকিৎসা করালে সাইনোসাইটিসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যাদের ক্রটিক টনসিলাইটিস , এডিনয়েড, নাকের পলিপ, বাঁকা হাড় আছে তারা তা অপারেশন করিয়ে নিলেও এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারেন । সাইনোসাইটিসের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য সাইনাসের ছিদ্রপথ পরিষ্কার রাখা যাতে বায়ু চলাচল স্বাভাবিক এবং শ্বাস - প্রশ্বাসের নির্গমন স্বাভাবিক থাকে। চিকিৎসকরা আরো বলে থাকেন সাইনোসাইটিস থেকে ভালো থাকতে হলে নাক ও গলার প্রদাহের সময় মতো চিকিৎসা করতে হবে । এ ছাড়া নাকেও ড্রপ জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে এবং এ জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা ঠিক হবে না । সাধারণ ভাবে মনে রাখতে হবে, সাইনোসাইটিসের ফলে রোগী নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই সাইনাসের প্রদাহ বা এ জাতীয় কোনো সমস্যা দেখা মাত্রই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উত্তম বলে ডা.খোরশেদ মজুমদার জানান ।
No comments:
Post a Comment