Saturday, June 15, 2013

  • ঢাকায় কাজ চলছে নিউজক্রেডের ষ ছবি: খালেদ সরকার
    ঢাকায় কাজ চলছে নিউজক্রেডের ষ ছবি: খালেদ সরকার
  • নিউজক্রেডের তিন প্রতিষ্ঠাতা: আসিফ, ইরাজ ও শাফকাত
    নিউজক্রেডের তিন প্রতিষ্ঠাতা: আসিফ, ইরাজ ও শাফকাত
1 2
সহজে নির্দিষ্ট খবর নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়ার কাজটি করে দিচ্ছে বাংলাদেশের তিন তরুণের উদ্যোগ—নিউজক্রেড। খবর আর বিশ্বস্ততা, ইংরেজিতে নিউজ আর ক্রেডিবিলিটি শব্দ থেকে এসেছে ‘নিউজক্রেড’ (www.newscred.com)।
প্রতিটি সংবাদপত্রকে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয় এবং সংবাদ বিক্রি করতে হয়। আর এ কাজটি হতে হয় তাৎক্ষণিকভাবে। সেই সংবাদকে সহজলভ্য ও সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া; তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সাংবাদিকতা, সংবাদ সেবাকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করাই নিউজক্রেডের মূল লক্ষ্য। 

যা করে নিউজক্রেড
সময় যত যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন চাইছে নিজেদের খবর দ্রুত সবার কাছে পৌঁছাতে, তেমনি সংবাদমাধ্যমও চেষ্টা করছে সব খবর দ্রুত সংগ্রহ করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে। তবে প্রতিষ্ঠান, প্রকাশক, এজেন্সি আর সবশেষে ব্যবহারকারীদের কাছে সহজে এবং দ্রুত খবর সংগ্রহ কিংবা পৌঁছানো খুব সহজ নয়। এ কাজকে সহজ করতেই চালু হয় নিউজক্রেডের বিশেষ সুবিধা। এ পুরো কাজটি করে নিউজক্রেড মাধ্যম হয়ে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রকাশক আর এজেন্সির কাছ থেকে যেমন দ্রুত সংবাদ সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি, তেমনি গ্রাহক, অন্য প্রকাশক কিংবা এজেন্সির চাহিদা অনুযায়ী সংবাদ সরবরাহও করে। পুরো প্রক্রিয়াটিই হয় অনলাইনের মাধ্যমে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে সংবাদ যাদের দিচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে পেপসি, টয়োটা, জনসন অ্যান্ড জনসন ইত্যাদি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড। 

যেভাবে শুরু
নিউজক্রেডের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে তিন বাংলাদেশির হাত ধরে। তাঁরা হলেন শাফকাত ইসলাম, ইরাজ ইসলাম ও আসিফ রহমান। বর্তমানে প্রায় দুই হাজার ৫০০ প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নিউজক্রেড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দি নিউ ইয়র্ক টাইমস, দি ইকোনমিস্ট, দি গার্ডিয়ান, গেট্টি ইমেজেস। স্টকহোমের সুইডেন রয়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতকধারী নিউজক্রেডের প্রতিষ্ঠাতা ইরাজ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে কাজ হবে এমন ধারণা থেকে যাত্রা শুরু হয় নিউজক্রেডের। আমাদের অন্য দুই প্রতিষ্ঠাতা থাকেন দেশের বাইরে। তবে মূল কাজটি হয় ঢাকায়। ঢাকায় কাজ করছেন রুবাইয়েত ইসলাম, এরশাদুল হক সরকার ও মনোজ চক্রবর্তী।’ 
পুরো নিউজক্রেড দলে কাজ করেন ৯০ জন। শুধু সংবাদই নয়, নিউজক্রেড ভিডিও, টুইটস (টুইটারের বার্তা) এবং ছবির সেবাও দিয়ে থাকে। ‘পাশাপাশি সংবাদভিত্তিক সাইটের জন্য রয়েছে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস), স্মার্ট গ্যালারি নামের বিশেষ সফটওয়্যার, যাঁরা শুধু সংবাদ পেতে চান তাঁদের জন্য এপিআই সেবা’—বললেন আরেক প্রতিষ্ঠাতা শাফকাত ইসলাম। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে স্নাতক শাফকাত ইসলাম বর্তমানে আছেন নিউইয়র্কে। অনেক মাধ্যম থেকেই খবর পাওয়া যায়। তবে একসঙ্গে চাইলে নির্দিষ্ট কোনো একটি সংবাদমাধ্যম কিংবা বিশ্বখ্যাত এজেন্সি থেকে সংবাদ নিতে চাইলে প্রয়োজন হয় চুক্তির। আর একসঙ্গে একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর পেতে চাইলে বিশেষ সহযোগিতা পাওয়া যাবে নিউজক্রেড থেকে। নিউজক্রেডের আরেক প্রতিষ্ঠাতা আসিফ রহমান বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক আসিফ বলেন, ‘সঠিক সংবাদ সংগ্রহ আর সবার কাছে সহজে পৌঁছাতেই আমাদের এমন উদ্যোগ। ডিজিটাল কন্টেন্ট কীভাবে আরও সহজে ছড়িয়ে দেওয়া যায় এবং সঠিক সংবাদ পরিবেশন করা যায় সে জন্য আমাদের রয়েছে আলাদা দল।’ 
এমন অনেক সংবাদমাধ্যম আছে, যারা অতিরিক্ত জনবল না নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে। সংবাদ দেওয়ার এ কাজে সহায়তা করে নিউজক্রেড—বললেন ইরাজ ইসলাম। জানালেন, শিকাগো ট্রিবিউন এ সেবা নিয়ে থাকে। বর্তমানে এলএ টাইমস, ফোর্বস, হাফিংটন পোস্টের মতো সংবাদমাধ্যমে নিউজক্রেডের সঙ্গে কাজ করছে নিজেদের পাঠক, বিজ্ঞাপন বাড়ানো এবং আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে। সম্প্রতি স্টার্টআপ হিসেবে নিউজক্রেড পেয়েছে দেড় কাটি ডলার বিনিয়োগ। 

এগিয়ে চলা
কাজের সুবিধার্থেই নিউইয়র্কে নিউজক্রেডের প্রধান কার্যালয় করা হয়। এখান থেকে অংশীদার ছাড়াও গ্রাহক এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি সহজ হয়। ইতিমধ্যে নিউজক্রেডের নানা সফলতার খবর নিয়ে ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নাল ব্লগ, টেকক্র্যাঞ্চ বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মূল কার্যালয় নিউইয়র্কে হলেও নিয়মিত কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হয় ঢাকা থেকেই জানালেন ইরাজ ইসলাম। একই কাজ লন্ডন এবং ম্যানহাটন থেকেও হয়। 
তিন তরুণের এমন উদ্যোগ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সামনের দিকে, নতুন এক অধ্যায়ে—এমনই প্রত্যাশা সবার।

No comments:

Post a Comment