দাঁতের ক্ষয়রোগ রোধ করার টিকা আবিস্কার করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। দাঁতের অন্যতম প্রধান রোগ হল দন্তক্ষয়। কাজেই এ টিকা বের হওয়ার ফলে দন্ত বিশেষজ্ঞ বা ওর্যাল সার্জনরা বেকার হয়ে পড়তে পারেন বলেও অনেকে আশংকা করছেন। দাঁতে ক্ষয়রোগ সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ব্যাকটেরিয়ার নাম 'মিউট্যানস স্ট্র্যাপ্টোকক্কি' (mutans streptococci)। এ ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা নষ্ট করে দিতে সক্ষম টিকাটি আবিস্কার করেছেন আমেরিকার ফোর্সাইথ ইন্সটিটিউটের গবেষকরা। দাঁতের গোড়ায় লেগে থাকা খাবার-দাবারকে ভেঙ্গে ফেলে এসব ব্যাকটেরিয়া এবং এ সময় তৈরি হয় 'ল্যাকটিক এসিড'। এই এসিডের আক্রমণের ফলে দাঁত থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মত গুরুত্বপুর্ণ খনিজ পদার্থ দাঁতের উপরিভাগের অংশ অর্থাত এনামেল থেকে বের হয়ে যায়। আর এভাবেই দাঁতের ক্ষয়রোগ দেখা দেয়।
'মিউট্যানস স্ট্র্যাপ্টোকক্কি' এক ধরণের এনজাইম তৈরি করে এবং এর সাহায্যে দাঁতের গায়ে লেগে থাকে। বিজ্ঞানীরা যে নতুন টিকা বের করেছেন তা দেয়ার পর সক্রিয় হয় উঠবে মানব দেহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। দেহ এসব ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলবে না; বরং যে এনজাইমের সাহায্যে এ ব্যাকটেরিয়া দাঁতের গায়ে লেগে থাকে তা ধ্বংস করে দেবে। শেকড় কাটলে যেমন গাছ উপড়ে পড়ে তেমনি এনজাইম ধ্বংস হওয়ার ফলে দাঁতের গায়ে আর লেগে থাকতে পারবে না ব্যাকটেরিয়া। ভালভাবে কুলি করলে বা থুথুর সঙ্গে এসব ব্যাকটেরিয়া মুখ থেকে বের হয়ে যাবে।
ইঁদুরের দেহে এ টিকার পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দেখা গেছে ইঁদুরের দন্তক্ষয় হচ্ছে না। একই ভাবে মানুষের দেহেও একই পরীক্ষা চালিয়ে সুফল পাওয়া গেছে।
এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক বছর থেকেই দাঁত গজানো শুরু করে তাই দাঁত রক্ষার জন্য ওই বয়স থেকেই শিশুকে এ টিকা দিতে হবে। বড়রাও এ টিকার সুফল পাবেন বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
টিকা কিভাবে দেহে ঢোকানো হবে তাও নিয়ে ভেবেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা সুঁই ফোটানোর ব্যাথার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ন্যাজাল ড্রপ বা নাকের ফোটার মাধ্যমে এ টিকা দেয়ার কথা ভাবছেন। অবশ্য এ টিকার ব্যাপক ব্যবহার কবে শুরু হবে তা এখনো জানা যায় নি।
মুখের অস্বাস্থ্যকর অবস্থার জন্য অর্থাৎ নিয়মিত ও সঠিক মুখ পরিষ্কার করা না হলে দন্তক্ষয় দেখা দেয়। অবশ্য বংশগত কারণেও হতে পারে দাঁতের ক্ষয়রোগ ।
নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার করা হলে দন্তক্ষয় হয় না। এ জন্য প্রথমত রাতে শোয়ার সময় অবশ্যই দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। আর সকালে নাস্তা খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করতে হবে। কোনো অবস্থায়ই এই কাজে গাফিলতি করা চলবে না। দাঁত পরিষ্কার করার জন্য এলোমেলোভাবে ব্রাশ চালালে হবে না; বরং প্রতিটি দাঁতের গোড়ার ময়লা যেন বের করে আনতে পারে সেজন্য সঠিকভাবে ব্রাশ চালাতে হবে । এই কাজটি সঠিকভাবে করা না হলে দাঁত পরিষ্কার করা উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। ফলে দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা ময়লা থেকে দন্তক্ষয় রোগের সূচনা ঘটতে পারে।
No comments:
Post a Comment