এমএম কলেজে ভর্তির পর পরই পরিচয় হয় জুলির সঙ্গে। জুলি মিষ্টভাষী, তবে একটু গম্ভীর প্রকৃতির মেয়ে। অবস্থা এমন যে, আমরা যখন ধেই ধেই করে নাচি বা কৌতুক বলে হেসে গড়িয়ে পড়ি, ও তখন গম্ভীর কণ্ঠে আমাদের বলে, ‘চল, স্যার যে অঙ্কগুলো দিয়েছে, সেগুলো করে ফেলি।’ জুলির সবকিছুই বড়দের মতো। দোকানে গিয়ে ও পছন্দ করে অফ হোয়াইট, নয়তো মেটে রঙের পোশাক! ও যখন আমাদের সঙ্গে শপিংয়ে যেত না, তখন আমরা দোকানে গিয়ে ওই রংগুলো দেখলেই বলতাম, ‘দ্যাখ, দ্যাখ! জুলির প্রিয় রং...।’ আমরা যখন ‘অসাম অসাম’ করতাম কোনো পুতুল বা শোপিস দেখে, ও তখন হয়তো তাকিয়ে থাকত কোনো সিরামিক সেটের দিকে। ছেলেদের ও প্রথম থেকেই দুই চোখে দেখতে পারত না। আমাদের চার বান্ধবীর মধ্যে শুধু শারমিনের ছেলেবন্ধু ছিল। শারমিন ওর কোনো রোমান্টিক গল্প বলতে গেলেই জুলি কানে হাত দিয়ে বসে থাকত। আমরা যখন গল্পের ক্লাইমেক্সে পৌঁছে গেছি, জুলি তখন টানতে টানতে আমাদের লাইব্রেরিতে নিয়ে যেত। ও আমাদের টিভি দেখতে নিষেধ করত। আর বলত, টিভি দেখে দেখেই নাকি আমরা ‘খারাপ’ হয়ে যাচ্ছি! জুলির এই অভিভাবকসুলভ আচরণের কারণে কলেজটাকে প্রায়ই আমার কাছে বাসা মনে হতো। এ জন্যই আমরা ওর নাম দিয়েছিলাম ‘খালাম্মা’। জুলির পরীক্ষার ফল বরাবরই ভালো ছিল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতাম, আঙ্কেল-আন্টির ওকে আলাদা করে কোনো উপদেশই দিতে হয় না। বরং ও-ই উল্টো তাঁদের উপদেশ দেয় কি না, কে জানে! এই জুলিকে একদিন পার্কে আবিষ্কার করা গেল এক জুনিয়র ছেলের সঙ্গে। বেচারা! দূর থেকেই আঁচ করতে পারছিলাম ছেলেটার ‘পড়েছি মুঘলের হাতে, খানা খেতে হবে সাথে’ অবস্থা। সত্যি সত্যি দেখলাম, ওরা চটপটি খাচ্ছে! অথচ জুলি বলত, ‘চটপটির ডাল নাকি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ...। আমি মোটেও অবাক হতাম না, যদি ঘটনাটা এখানেই শেষ হতো। কিন্তু জুলি এখন প্রতিদিন ওই ছেলের সঙ্গে ভাত খায়। কারণ, গত ২৪ মে ওরা বিয়ে করে ফেলেছে! তা-ও পালিয়ে...।
No comments:
Post a Comment