একজন চিকিৎসক বহুদিন পর এলেন তাঁর আরেক চিকিৎসকবন্ধুর কাছে। এসেই বন্ধুকে দুচোখ ভরে দেখলেন। তারপর বললেন, ‘দোস্ত, তুই খুব ভালো আছিস। আমি কেমন আছি?’
গ্রামের বাড়ি থেকে রোগীরা ঢাকায় এলে প্রায়ই নানা পরামর্শের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমিও সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই; তেমন একটা ছোট অভিজ্ঞতার কথা বলি। প্রবাসী এক শ্রমিক ভাই দুবাই থেকে ছুটিতে দেশে এসেছেন। অতঃপর সময়-সুযোগ করে ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর পর আমাকে ফোন দিলেন, ‘কাউসার, দুবাইতে আমি সিটি স্ক্যান করিয়েছি। কোনো রোগ পাওয়া যায়নি। অথচ এ দেশের মান্ধাতা আমলের ডাক্তার আমাকে এনজিওগ্রাম করাতে দিয়েছে। এনজিওগ্রামের চেয়ে আধুনিক পরীক্ষা করিয়েই যেখানে কিছু পাওয়া গেল না, সেখানে এনজিওগ্রাম করিয়ে কি রোগ পাওয়া যাবে?’
আমি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকলাম! বুঝলাম:
‘এনজিওগ্রাম’ ও ‘সিটি স্ক্যান’ কী সেটা তিনি জানেন না, কিন্তু তিনি এটা জানেন যে ‘গ্রাম’-এর চেয়ে ‘সিটি’ অতি অবশ্যই আধুনিক!
আমাদের মেডিকেলে এক স্যার ছিলেন। ক্লাসে সারাক্ষণ পড়া ধরতেন। না পারলে ‘ভালো’ অপমান করতেও ছাড়তেন না। স্যার ক্লাস শুরু করতেন অনেকটা এভাবে, ‘আমি আজ পড়াব থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে। এই ছেলে, তুমি বলো তো থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা কী?’
যেন থ্যালাসেমিয়া পড়ানোর আগেই আমার এ বিষয়ে সব জানা
থাকতে হবে!
তো আমার এক বন্ধু ইমনকে আরেক বন্ধু সাকিবকে বলল, ‘দোস্ত চল, অমুক স্যারের ক্লাস আছে।’ সে বলল, ‘না দোস্ত, আজ যাব না। আজকের টপিকটা নিয়ে আমি ভালো করে পড়িনি। যেদিন ক্লাসের আগে ভালো করে ওই দিনের টপিকটা পড়তে পারব, সেদিন যাব।’
(আমি সব সময়ই বিশ্বাস করতাম, আমি এ বিষয়ে জানি না বলেই তো ক্লাসে যাব জানার জন্য। জেনে ফেললে না গেলেও তো হয়। কিন্তু এই স্যারের ক্ষেত্রে নিয়মটা ছিল উল্টো)
বুঝতে কষ্ট হলো? দাঁড়ান, বিষয়টা ক্লিয়ার করার জন্য একটা গল্প বলি।
কয়েক দিন ধরে জনির শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। এ কারণে তাঁর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল।
দুই দিন পর জনির এক বন্ধু তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোর না শরীর খারাপ, ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ঘরে বসে আছিস কেন? চল, আজকেই তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।’
‘নারে দোস্ত, আজ শরীরটা খুবই খারাপ। আমি উঠতেই পারব না। ভাবছি, শরীরটা একটু সুস্থ হলে কাল-পরশু ডাক্তারের কাছে যাব।’
সারা জীবন শুনে এসেছি হাসি হচ্ছে সুস্থ থাকার মহৌষধ।
অথচ যেদিন প্রথম মানসিক রোগের ওয়ার্ডে গেলাম, সেদিন দেখলাম তার ঠিক উল্টো ব্যাপার। ওখানে কয়েকজন রোগীকে গাদা গাদা ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিল, যাদের রোগ ছিল একটাই, অকারণে হাসি!
আমি প্রায়ই মেডিকেলে অ্যাপ্রোন গায়ে না দিয়ে ক্লাসে চলে যেতাম। এ বিষয়ে শিক্ষকেরা আমাকে অনেক কথা শোনালেও আমি তাঁদের কিছু বলার সাহস পাইনি। কিন্তু যে কথাটি সব সময় বলতে চেয়েছি সেটি হলো, আমি এখন পর্যন্ত এমন কিছুই করিনি যে আমাকে গা-ঢাকা দিতে হবে!
হাসপাতালে চিকিৎসকদের মুখে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, সেটি হলো, ‘রোগীকে হাসপাতালে আনতে আপনারা বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। এক ঘণ্টা আগে নিয়ে আসতে পারলে আমরা কিছু একটা করতে পারতাম।’
একটা বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকবন্ধুর সঙ্গে বসে একটা বিষয়ে আলাপ করছিলাম। এমন সময় সেখানে একদল লোক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজন রোগীকে নিয়ে এল। তারা যথারীতি বলল, ‘ডাক্তার ওকে বাঁচান!’ আমার বন্ধুটি তাকে পরীক্ষা করে বলল, ‘আমি দুঃখিত। রোগীকে হাসপাতালে আনতে আপনারা বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। এক ঘণ্টা আগে নিয়ে আসতে পারলে আমরা কিছু একটা করতে পারতাম।’
রোগীর সঙ্গে আসা এক লোক বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ভাই, ১৫ মিনিট আগে অ্যাকসিডেন্ট হলো। এক ঘণ্টা আগে আনব কী করে?’ কথা শুনে আমি পুরোই ‘মাননীয় স্পিকার’ হয়ে গেলাম!
গ্রামের বাড়ি থেকে রোগীরা ঢাকায় এলে প্রায়ই নানা পরামর্শের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমিও সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই; তেমন একটা ছোট অভিজ্ঞতার কথা বলি। প্রবাসী এক শ্রমিক ভাই দুবাই থেকে ছুটিতে দেশে এসেছেন। অতঃপর সময়-সুযোগ করে ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর পর আমাকে ফোন দিলেন, ‘কাউসার, দুবাইতে আমি সিটি স্ক্যান করিয়েছি। কোনো রোগ পাওয়া যায়নি। অথচ এ দেশের মান্ধাতা আমলের ডাক্তার আমাকে এনজিওগ্রাম করাতে দিয়েছে। এনজিওগ্রামের চেয়ে আধুনিক পরীক্ষা করিয়েই যেখানে কিছু পাওয়া গেল না, সেখানে এনজিওগ্রাম করিয়ে কি রোগ পাওয়া যাবে?’
আমি কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকলাম! বুঝলাম:
‘এনজিওগ্রাম’ ও ‘সিটি স্ক্যান’ কী সেটা তিনি জানেন না, কিন্তু তিনি এটা জানেন যে ‘গ্রাম’-এর চেয়ে ‘সিটি’ অতি অবশ্যই আধুনিক!
আমাদের মেডিকেলে এক স্যার ছিলেন। ক্লাসে সারাক্ষণ পড়া ধরতেন। না পারলে ‘ভালো’ অপমান করতেও ছাড়তেন না। স্যার ক্লাস শুরু করতেন অনেকটা এভাবে, ‘আমি আজ পড়াব থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে। এই ছেলে, তুমি বলো তো থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা কী?’
যেন থ্যালাসেমিয়া পড়ানোর আগেই আমার এ বিষয়ে সব জানা
থাকতে হবে!
তো আমার এক বন্ধু ইমনকে আরেক বন্ধু সাকিবকে বলল, ‘দোস্ত চল, অমুক স্যারের ক্লাস আছে।’ সে বলল, ‘না দোস্ত, আজ যাব না। আজকের টপিকটা নিয়ে আমি ভালো করে পড়িনি। যেদিন ক্লাসের আগে ভালো করে ওই দিনের টপিকটা পড়তে পারব, সেদিন যাব।’
(আমি সব সময়ই বিশ্বাস করতাম, আমি এ বিষয়ে জানি না বলেই তো ক্লাসে যাব জানার জন্য। জেনে ফেললে না গেলেও তো হয়। কিন্তু এই স্যারের ক্ষেত্রে নিয়মটা ছিল উল্টো)
বুঝতে কষ্ট হলো? দাঁড়ান, বিষয়টা ক্লিয়ার করার জন্য একটা গল্প বলি।
কয়েক দিন ধরে জনির শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে। এ কারণে তাঁর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা ছিল।
দুই দিন পর জনির এক বন্ধু তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘তোর না শরীর খারাপ, ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ঘরে বসে আছিস কেন? চল, আজকেই তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।’
‘নারে দোস্ত, আজ শরীরটা খুবই খারাপ। আমি উঠতেই পারব না। ভাবছি, শরীরটা একটু সুস্থ হলে কাল-পরশু ডাক্তারের কাছে যাব।’
সারা জীবন শুনে এসেছি হাসি হচ্ছে সুস্থ থাকার মহৌষধ।
অথচ যেদিন প্রথম মানসিক রোগের ওয়ার্ডে গেলাম, সেদিন দেখলাম তার ঠিক উল্টো ব্যাপার। ওখানে কয়েকজন রোগীকে গাদা গাদা ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছিল, যাদের রোগ ছিল একটাই, অকারণে হাসি!
আমি প্রায়ই মেডিকেলে অ্যাপ্রোন গায়ে না দিয়ে ক্লাসে চলে যেতাম। এ বিষয়ে শিক্ষকেরা আমাকে অনেক কথা শোনালেও আমি তাঁদের কিছু বলার সাহস পাইনি। কিন্তু যে কথাটি সব সময় বলতে চেয়েছি সেটি হলো, আমি এখন পর্যন্ত এমন কিছুই করিনি যে আমাকে গা-ঢাকা দিতে হবে!
হাসপাতালে চিকিৎসকদের মুখে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, সেটি হলো, ‘রোগীকে হাসপাতালে আনতে আপনারা বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। এক ঘণ্টা আগে নিয়ে আসতে পারলে আমরা কিছু একটা করতে পারতাম।’
একটা বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকবন্ধুর সঙ্গে বসে একটা বিষয়ে আলাপ করছিলাম। এমন সময় সেখানে একদল লোক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজন রোগীকে নিয়ে এল। তারা যথারীতি বলল, ‘ডাক্তার ওকে বাঁচান!’ আমার বন্ধুটি তাকে পরীক্ষা করে বলল, ‘আমি দুঃখিত। রোগীকে হাসপাতালে আনতে আপনারা বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। এক ঘণ্টা আগে নিয়ে আসতে পারলে আমরা কিছু একটা করতে পারতাম।’
রোগীর সঙ্গে আসা এক লোক বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ভাই, ১৫ মিনিট আগে অ্যাকসিডেন্ট হলো। এক ঘণ্টা আগে আনব কী করে?’ কথা শুনে আমি পুরোই ‘মাননীয় স্পিকার’ হয়ে গেলাম!
No comments:
Post a Comment