দিনে ৪৬০ কোটি টাকা ধার করছে সরকার
অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে সরকারের ব্যাংক ঋণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
গত নয় দিনেই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। গড়ে প্রতিদিন নেয়া হয়েছে ৪৬০ কোটি টাকা।RELATED STORIES
-
2013-06-17 13:32:52.0
সমালোচনার মুখে বিদায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরের ১১ মাসে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও শেষ দিকে এসে তা অনেক বেড়ে গেছে, যে আশঙ্কা বিশ্লেষকরা করে আসছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১২ হাজার ৬১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ নেয় সরকার।
গত ১২ জুন পর্যন্ত এই ঋণ বেড়ে ১৬ হাজার ৭৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
এই ১২ দিনের মধ্যে সরকারি ছুটি ছিলো তিন দিন। বাকি নয় কার্যদিবসে ৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।
নির্বাচনের বছরে উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারের উন্নয়ন কাজের গতি বেড়ে যায়। সে খরচ শুধু রাজস্ব আয় দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। সে কারণেই সরকারকে বাধ্য হয়ে ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।”
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেষ দিকে সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেবে, সে কারণেই সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করেছে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিলো ১০ হাজার ৬২৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ১২ জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৮৮ কোটি ৮২ লাখ টাকায়।
জায়েদ বখত বলেন, “ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে এবার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে সরকার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নিচ্ছে না। উল্টো আগের নেয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ করছে।”
বিদায়ী অর্থবছরের ১২ জুন পর্যন্ত সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগের নেয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ ৭ হাজার ৪৫৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা শোধ করেছে সরকার।
অন্যদিকে এ সময়ে তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ১৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
বাজেটে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলো, তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে তার চেয়ে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছে।
জায়েদ বখত বলেন, “ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ (বিনিয়োগ হয় না এমন অর্থ) পড়ে আছে। এই অলস অর্থ ঋণ নিয়ে উন্নয়ন কাজে লাগালে সমস্যা নেই। তবে আমার শঙ্কা ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ এই অর্থ খরচ নিয়ে।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের এটাই শেষ বছর। এই বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হবে।
গত অর্থবছর (২০১১-১২) পুরোটা সময় জুড়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বেশ সমালোচনা সইতে হয়েছিলো সরকারকে।
অর্থনীতিবিদ, গবেষক, ব্যবসায়ী নেতাদের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনার পর ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমে এসেছিলো। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।
যদিও সামগ্রিক হিসাবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ এখনো আগের বছরের চেয়ে কম। তবে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে অনেক।
১২ জুন পর্যন্ত সরকার তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ২৪ হাজার ১৮৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাত হাজার ৪৫৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা শোধ করেছে।
এ হিসাবে এই সময়ে ব্যাংক থেকে নেয়া সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৩০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
নিট হিসাবে ১০ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ছিলো ১১ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতের সমস্যার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ায় সরকার সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে বলে মনে করেন বিআইডিএসের গবেষক জায়েদ বখত।
তার যুক্তি, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যায়। এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় বাড়ে মূল্যস্ফীতি।
ব্যাংকগুলো থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যায় বলে ব্যবসায়ীরা অসন্তোষ জানিয়ে আসছেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৪৯ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিলো ৪৫ শতাংশ।
২০১১-১২ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকে।
আর চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছে।
আগামী ২০১৩২-১৪ অর্থবছরে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা ধার করবে বলে লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ১২ জুন শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ আট হাজার ৩৯৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
গত বছরের ১২ জুন শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিলো ৯১ হাজার ৬৬৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
No comments:
Post a Comment