বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ঘাপটি মেরে থাকা রস+আলোর লেখাগুলো যাঁরা নিয়মিত পড়েন (!), তাঁরা হয়তো ফল উ ৎ সব সম্পর্কে অবগত। তবে অবগত না হলেও কোনো সমস্যা নেই। রস+আলোর ফল উ ৎ সব কবে হয়েছিল—এই টাইপের প্রশ্ন কখনোই পরীক্ষায় আসবে না। তবুও মনে করিয়ে দিই; প্রতিবছর ফলের মৌসুমে ঢাকার আশপাশের কোনো সুন্দর জায়গায় গিয়ে রস+আলো বাহিনী উ ৎ সবমুখর পরিবেশে ফলাহার করে থাকে। এটি রস+আলো বাহিনীর অন্যতম উ ৎ সব। এ উপলক্ষে রস+আলো বাহিনীর সদস্যরা পৃথক স্ট্যাটাসও দেয়! যাই হোক, রাজনৈতিক দল দেয় হরতাল, আর ফল বিক্রেতারা দেয় ফরমালিন। হরতাল ছাড়া রাজনৈতিক দল, আর ফরমালিন ছাড়া ফল পাওয়া প্রায় অসম্ভব। খবরে এসেছে, শতকরা ৯৪ শতাংশ ফলেই নাকি ফরমালিন দেওয়া হয়। ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলে পরিচয়’ এই প্রবাদের আপগ্রেডেট ভার্সন—‘ফল তোমার নাম কী? ফরমালিনে পরিচয়।’ ফল মানেই যখন ফরমালিন, তখন ফল উ ৎ সব নামটা ঠিক সার্থক হয় না। তাই, নামকরণের সার্থকতার সঠিক প্রয়োগ হিসেবে আমরা রস+আলো ফল উ ৎ সব বাদ দিয়ে নাম দিলাম ‘ফরমালিন উ ৎ সব’। রস+আলোর বিশিষ্ট আইডিজাইনার (আইডিয়াবাজ+ডিজাইনার) মাহফুজ রহমান রাত জেগে ফরমালিন উ ৎ সবের টি-শার্টের ডিজাইন করে ফেললেন। শুক্রবার ফরমালিন উ ৎ সব। স্পট ফিক্সিং হয়ে গেছে আগেই, মানে উ ৎ সবের স্পট আগেই ফিক্স করা হয়েছে; সাভারের একটা ফল বাগানে। সকাল সকাল সবাই কারওয়ান বাজারে হাজির। তবে সবার শেষে এলেন সৈয়দ রাকিব। সঙ্গে নববধূ। অথচ যখন ব্যাচেলর ছিলেন, তখন তিনিই আগে এসে সবার ঘুম ভাঙাতেন! এ জন্যই রচিত হয়েছে সেই কালজয়ী গান, ‘পৃথিবী বদলে গেছে!’ তবে বদলাননি মাহফুজ রহমান। অতীত রেকর্ড বজায় রেখে এবারও তিনি আসি বলে আর আসেননি। ফোন-টোন বন্ধ করে ঘুমিয়েছেন। রাত জেগে টি-শার্টের ডিজাইন করা কি সহজ কাজ?
সবার গায়েই টি-শার্ট একেবারে মাপমতো হলো। ধরা খেলেন স্বাস্থ্যবান চার সদস্য—কার্টুনিস্ট রকি ভাই, সৈয়দ রাকিব, মুনাস ভাই এবং সর্বকনিষ্ঠ (স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে নয়) রিদন। কোনোভাবেই টি-শার্ট পরতে পারলেন না তাঁরা। এ জন্য তাঁরা কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে দোষারোপ করেছেন। বহুবার তাঁদের বলেছি, ‘মেদ কমান, নিশ্চিন্ত থাকুন।’ পাত্তা দেননি। আশা করি এবার অন্তত তাঁরা ব্যাপারটি ভেবে দেখবেন। তবে টি-শার্ট নিয়ে রকি ভাই খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না। তার মূল চিন্তা ছিল লিচু নিয়ে। এর আগের ফল উ ৎ সবগুলোতে তিনি একাই শ দুয়েক লিচু সাবাড় করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এবার আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এ জন্য আমরা আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম, যে গাড়িতে ফল যাবে সেটায় কোনোভাবেই রকি ভাইকে উঠতে দেওয়া হবে না! পরিকল্পনা অনুযায়ী একটা গাড়িতে ফল ওঠানো হলো। এমন সময় রাস্তায় এক লোক সাপ-বেজির খেলা দেখানো শুরু করতেই পুরো রস+আলো বাহিনী গোল হয়ে খেলা দেখতে লাগল। দেখে মনে হলো যেন রাজনৈতিক দলের দুই নেতা ঝগড়া করছে! হঠা ৎ যাওয়ার কথা মনে পড়তেই তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠে পড়ল সবাই। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা গেল, ফলগুলো যে গাড়িতে, রকি ভাইও সেই গাড়িতেই। আমরা যখন সাপ-বেজি দেখছিলাম, ওই সময় গাড়িতে উঠে লিচুর দখল নিয়েছেন রকি ভাই। ফোনে অনুরোধ করেও তাঁকে থামানো গেল না। কী আর করা, লিচুতেই সবচেয়ে বেশি ফরমালিন দেওয়া হয়, রকি ভাই ফরমালিন খেয়ে আমাদের উপকারই করছেন—এইসব ভেবে শান্তি পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করলাম। রকি ভাইদের গাড়ির সদস্যরা কথা না বলে নিশ্চিন্তে লিচু, লটকন, জাম টেস্ট করছেন। ওদিকে যে গাড়িতে ফল নেই, সে গাড়িতে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে শুরু হলো টক শো। এতে আবারও প্রমাণিত হলো, যাদের কোনো কাজ নেই, তারাই টক শো করে।
স্পটে গিয়েই আমাদের মধ্যে ক্রীড়ামোদী চেতনা জেগে উঠল। শুরুটা হলো ফুটবল দিয়ে। সিমু ভাই লাথি দিয়ে কাঁঠালগাছের মগডালে বল উঠিয়ে দেওয়ার পর আমাদের মনে হলো, আমরা ফুটবল কেন খেলছি? আমাদের মূল শক্তি তো ক্রিকেট! সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যাট-বল নিয়ে তৈরি হয়ে গেলাম। খেলা শুরুর আগে চলে এল গাছপাকা কাঁঠাল। সিমু ভাই বললেন, জাতীয় ফলের সম্মানে আমাদের উচিত দাঁড়িয়ে কাঁঠাল খাওয়া। সবাই দাঁড়িয়ে কাঁঠাল খেয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করল। ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে বৃষ্টি হয়, আর আমাদের সাভারের ম্যাচে বৃষ্টি হবে না তা হয় নাকি? আমাদের টানটান উত্তেজনাময় সিরিজেও বৃষ্টি বাধা দিল। তখন মনে হলো, আমরা খেলতে আসিনি, ফল খেতে এসেছি। যত রকম ফল আছে, পর্যায়ক্রমে খাওয়া শুরু করলাম।
খাওয়া পর্ব শেষে খেলাধুলার চেতনা পুনরায় জাগ্রত হলো। দুই দলে বিভক্ত হয়ে চা খেতে খেতে টিম মিটিং, প্ল্যানিং করে ফেললাম আমরা। দীর্ঘ মিটিংয়ের পর অনুশীলন। মাঠের একপাশে ক্রিকেটের জন্য ফিল্ডিং, ক্যাচিং এবং ফুটবলের জন্য পাস, কিক, গোলকিপিং প্র্যাকটিসে মনোযোগ দিল সবাই। অনেকক্ষণ পর হঠা ৎ খেয়াল হলো, প্র্যাকটিস করতে করতে খেলার সময়টাই পার করে ফেলেছি আমরা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, সবাইকেই ড্রেসিংরুম মানে বাসায় ফিরতে হবে। শুধু সাবেক আইডিয়াবাজ এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম ভাই যাবেন ক্লাসরুমে। শিক্ষক হলে যা হয়! শামীম ভাই সবাইকে গাড়িতে উঠতে বাধ্য করে কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন করলেন, ‘কিরে, গাড়ি ছাড়ে না ক্যান?’ পেছন থেকে রকি ভাই উত্তর দিলেন, ‘গাড়ি ছাড়বে কে? ড্রাইভারই তো উঠে নাই।’ শামীম ভাই তাকিয়ে দেখলেন ড্রাইভারের সিট খালি। কিছুক্ষণ পর বাড়ির পথে যাত্রা করলাম আমরা। ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, ফরমালিন দিলে ফল তাজা থাকে, নষ্ট হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য তো খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, তাদের ঐক্যর মধ্যে কি কোনোভাবে একটু ফরমালিন দেওয়া যায় না?
সবার গায়েই টি-শার্ট একেবারে মাপমতো হলো। ধরা খেলেন স্বাস্থ্যবান চার সদস্য—কার্টুনিস্ট রকি ভাই, সৈয়দ রাকিব, মুনাস ভাই এবং সর্বকনিষ্ঠ (স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে নয়) রিদন। কোনোভাবেই টি-শার্ট পরতে পারলেন না তাঁরা। এ জন্য তাঁরা কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে দোষারোপ করেছেন। বহুবার তাঁদের বলেছি, ‘মেদ কমান, নিশ্চিন্ত থাকুন।’ পাত্তা দেননি। আশা করি এবার অন্তত তাঁরা ব্যাপারটি ভেবে দেখবেন। তবে টি-শার্ট নিয়ে রকি ভাই খুব একটা চিন্তিত ছিলেন না। তার মূল চিন্তা ছিল লিচু নিয়ে। এর আগের ফল উ ৎ সবগুলোতে তিনি একাই শ দুয়েক লিচু সাবাড় করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এবার আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়াই ছিল তাঁর লক্ষ্য। এ জন্য আমরা আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম, যে গাড়িতে ফল যাবে সেটায় কোনোভাবেই রকি ভাইকে উঠতে দেওয়া হবে না! পরিকল্পনা অনুযায়ী একটা গাড়িতে ফল ওঠানো হলো। এমন সময় রাস্তায় এক লোক সাপ-বেজির খেলা দেখানো শুরু করতেই পুরো রস+আলো বাহিনী গোল হয়ে খেলা দেখতে লাগল। দেখে মনে হলো যেন রাজনৈতিক দলের দুই নেতা ঝগড়া করছে! হঠা ৎ যাওয়ার কথা মনে পড়তেই তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠে পড়ল সবাই। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা গেল, ফলগুলো যে গাড়িতে, রকি ভাইও সেই গাড়িতেই। আমরা যখন সাপ-বেজি দেখছিলাম, ওই সময় গাড়িতে উঠে লিচুর দখল নিয়েছেন রকি ভাই। ফোনে অনুরোধ করেও তাঁকে থামানো গেল না। কী আর করা, লিচুতেই সবচেয়ে বেশি ফরমালিন দেওয়া হয়, রকি ভাই ফরমালিন খেয়ে আমাদের উপকারই করছেন—এইসব ভেবে শান্তি পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করলাম। রকি ভাইদের গাড়ির সদস্যরা কথা না বলে নিশ্চিন্তে লিচু, লটকন, জাম টেস্ট করছেন। ওদিকে যে গাড়িতে ফল নেই, সে গাড়িতে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে শুরু হলো টক শো। এতে আবারও প্রমাণিত হলো, যাদের কোনো কাজ নেই, তারাই টক শো করে।
স্পটে গিয়েই আমাদের মধ্যে ক্রীড়ামোদী চেতনা জেগে উঠল। শুরুটা হলো ফুটবল দিয়ে। সিমু ভাই লাথি দিয়ে কাঁঠালগাছের মগডালে বল উঠিয়ে দেওয়ার পর আমাদের মনে হলো, আমরা ফুটবল কেন খেলছি? আমাদের মূল শক্তি তো ক্রিকেট! সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যাট-বল নিয়ে তৈরি হয়ে গেলাম। খেলা শুরুর আগে চলে এল গাছপাকা কাঁঠাল। সিমু ভাই বললেন, জাতীয় ফলের সম্মানে আমাদের উচিত দাঁড়িয়ে কাঁঠাল খাওয়া। সবাই দাঁড়িয়ে কাঁঠাল খেয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করল। ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে বৃষ্টি হয়, আর আমাদের সাভারের ম্যাচে বৃষ্টি হবে না তা হয় নাকি? আমাদের টানটান উত্তেজনাময় সিরিজেও বৃষ্টি বাধা দিল। তখন মনে হলো, আমরা খেলতে আসিনি, ফল খেতে এসেছি। যত রকম ফল আছে, পর্যায়ক্রমে খাওয়া শুরু করলাম।
খাওয়া পর্ব শেষে খেলাধুলার চেতনা পুনরায় জাগ্রত হলো। দুই দলে বিভক্ত হয়ে চা খেতে খেতে টিম মিটিং, প্ল্যানিং করে ফেললাম আমরা। দীর্ঘ মিটিংয়ের পর অনুশীলন। মাঠের একপাশে ক্রিকেটের জন্য ফিল্ডিং, ক্যাচিং এবং ফুটবলের জন্য পাস, কিক, গোলকিপিং প্র্যাকটিসে মনোযোগ দিল সবাই। অনেকক্ষণ পর হঠা ৎ খেয়াল হলো, প্র্যাকটিস করতে করতে খেলার সময়টাই পার করে ফেলেছি আমরা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, সবাইকেই ড্রেসিংরুম মানে বাসায় ফিরতে হবে। শুধু সাবেক আইডিয়াবাজ এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীম ভাই যাবেন ক্লাসরুমে। শিক্ষক হলে যা হয়! শামীম ভাই সবাইকে গাড়িতে উঠতে বাধ্য করে কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন করলেন, ‘কিরে, গাড়ি ছাড়ে না ক্যান?’ পেছন থেকে রকি ভাই উত্তর দিলেন, ‘গাড়ি ছাড়বে কে? ড্রাইভারই তো উঠে নাই।’ শামীম ভাই তাকিয়ে দেখলেন ড্রাইভারের সিট খালি। কিছুক্ষণ পর বাড়ির পথে যাত্রা করলাম আমরা। ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, ফরমালিন দিলে ফল তাজা থাকে, নষ্ট হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য তো খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, তাদের ঐক্যর মধ্যে কি কোনোভাবে একটু ফরমালিন দেওয়া যায় না?
No comments:
Post a Comment