গবেষকদের একটি দল কেবল মাত্র ভাবনা দিয়েই হেলিকপ্টারকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছেন। খেলনা এ হেলিকপ্টার যে পথ দিয়ে উড়ে গেছে তাতে অনেক বাধাবিঘ্ন আগে থেকেই বসানো ছিল।
মানুষ যখন কোনো বিষয়ে চিন্তা বা ভাবনা করে তখন মস্তিষ্কে কিছু বৈদ্যুতিক ততপরতা চলে। এই ততপরতাকে ভার্চুয়াল বা বাস্তব জগতের কর্মে রূপ দেয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রতিদিনই নানা গবেষণা চালাচ্ছেন। ভাবনার সাহায্যে হেলিকপ্টার চালানোকে সে জাতীয় আরো একটি সফল গবেষণা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
জার্নাল অন নিউরাল ইঞ্জিনিয়ারিং নামের সাময়িকী এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে। গবেষণাটি করেছে আমেরিকার মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইঞ্জিনিয়ারিং ইন মেডিসিন।
গবেষকরা মস্তিষ্কের বিদ্যুত সংকেত ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মাথায় একটি বিশেষ ধরণের ‘টুপি’ পরিয়ে দেন। এ সংকেত ধারণের জন্য মাথা বা দেহে ছিদ্র করে কোনো ধারক যন্ত্র বসাতে হয়নি।
বিজ্ঞান-কল্পের গুণে আমরা ‘মাইন্ড রিডিং’ বলতে কি বুঝায় তা জানি। এ জাতীয় ক্ষমতা যাদের আছে তারা অনায়াসে অন্যের মনের কথা জানতে পারেন। তবে হেলিকপ্টার চালানোর জন্য যে পদ্ধতিতে ভাবনাকে ব্যবহার করা হয়েছে তাকে ‘মাইন্ড রিডিং’ হিসেবে অভিহিত করেননি গবেষকরা। তারা বলছেন, মস্তিষ্কে যে বিদ্যুত ততপরতা চলছে বা অহরহ বিদ্যুত সংকেত সৃষ্টি হয়েছে তাকেই ধারণ করা হয়েছে; তার মাধ্যমেই দূর নিয়ন্ত্রিত হেলিকপ্টারকে চলার সংকেত দেয়া হয়েছে। অবশ্য কোন সংকেতের মানে কি সে বিষয়ে আগে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে; তবেই ভাবনার মাধ্যমে এভাবে হেলিকপ্টার চালানো সম্ভব হয়েছে।
সাধারণভাবে মস্তিষ্কে নানা বিদ্যুত সংকেত তৈরি হয়। এগুলো বেশ গোলমেলে। সব সংকেতের মানেও জানা যায় না। তবে নড়াচড়া-উঠবস বা গতি সৃষ্টির জন্য যে সব সংকেত মানব মস্তিষ্কে তৈরি হয় তা বেশ জোরালো এবং প্রতিবারই নির্দিষ্ট গতি সৃষ্টির জন্য মস্তিষ্ক একই ধরণের সংকেত দেয়।
এখানে প্রশিক্ষণের প্রশ্ন কোথায় আসছে তাও এবার খোলাসা করছি। যেমন বাম হাতের মুঠোবন্ধ করার জন্য মস্তিষ্ক যে সংকেত দিচ্ছে তাই ব্যবহার করা হলো হেলিকপ্টারকে বামদিকে ঘোরানোর জন্য। বিষয়টি যন্ত্রকে বোঝাতে হবে এবং একইভাবে প্রতিবার হেলিকপ্টারকে বামে ঘোরানোর জন্য একইভাবে নির্দেশ দিতে হবে। এ জন্য কম্পিউটার, দূর নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও মানব মনের মধ্যে একটি সমন্বয় ঘটাতে হবে।
এ জাতীয় ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এরইমধ্যে মোটর চালিত একটি হুইল চেয়ারকে চালানো গেছে।
স্নায়ু বৈকল্যে যারা ভুগছেন এ পদ্ধতি একদিন তাদের জন্য বিরাট সহায় হয়ে উঠবে। অন্যদিকে এভাবে ভিডিও গেইম খেলার চমকপ্রদ ও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
এ জাতীয় পদ্ধতি যে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে তা বুঝতে পারছে অনেক কোম্পানি। স্যামসং কোম্পানি এরইমধ্যে ‘মন নিয়ন্ত্রিত’ টেবলেট পিসি নিয়ে কাজ করছে।
আগামী দিনগুলোতে ঘরের বাতি নেভাতে বা জ্বালাতে পারব এ পদ্ধতিতে সে কথা জোর দিয়েই বলা যায়। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে রোবট থেকে শুরু করে গাড়ি পর্যন্ত ‘মন নিয়ন্ত্রিত’ অনেক যন্ত্রই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
No comments:
Post a Comment