এসএসসি পরীক্ষাটা সাফল্যের সঙ্গেই ডিঙাতে পেরেছিলেন ওয়াহিদ হাসান। কিন্তু এইচএসসির বৈতরণিতে এসে ধপাস! তারপর ভুল পথে হাঁটা শুরু। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। হোঁচট খেয়ে গুঁড়িয়ে যাওয়া এক জীবনকে একটু একটু করে জোড়া দিয়ে ফের জীবনের পক্ষে দাঁড় করাতে পেরেছেন ওয়াহিদ। মাদকের চোরাবালি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর এই সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব করেছে মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘আপনগাঁও’। এখানে ভর্তি হয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের নায়ক হয়েছেন শাহাদত হোসেন, রমজান আলী, রাজিব আহমেদ, শাহীন আলম, বাদল হাসানসহ আরও অনেকে। তাঁদের প্রত্যেকের গল্পেই আছে একজন ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজালের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর নিজেদের ইচ্ছাশক্তি। চলুন, কান পাতা যাক সেসব গল্পে।
ঢাকার মতিঝিলের ছেলে ওয়াহিদ এসএসসির পর পরই পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু আয়-রোজগার করে দেশে পাঠাবেন, তাতে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করা হবে—এমনই ছিল উদ্দেশ্য। চার বছর ছিলেন সেখানে, সেই উদ্দেশ্য একটিবারের জন্যও সফল করতে পারেননি। বরং চার বছর পর তাঁর অবস্থা এমন দুরবস্থায় পরিণত হলো যে শেষ পর্যন্ত বাবার কাছেই হাত পাততে হলো। কারণ কী? ওয়াহিদ বলেন, ‘আমি মাদকের চোরাবালিতে ডুবে গিয়েছিলাম। ছোটখাটো নেশা দিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত হেরোইন ও ইয়াবাতেই আসক্ত হয়ে পড়ি।’ একসময় তাঁর অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে তিনি বাধ্য হন দেশে ফিরতে।
দেশে ফিরে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মনকে প্রতিজ্ঞার বজ্র আঁটুনিতে বেঁধে ফেলেন এই বলে, আর নেশা নয়, এবার পড়াশোনাটা শেষ করতে হবে। কিন্তু কদিন বাদেই বুঝলেন, তাঁর এই বজ্র আঁটুনি আসলে ফসকা গেরো! সেই সময়ের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে কপাল কুঁকড়ে উঠল তাঁর, ‘আমি তো তখন মানুষ ছিলাম না। ফোর্থ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। প্রতিদিন সকালে কমলাপুর স্টেশনের কাছে এক মাদক বিক্রেতার কাছ থেকে মাদক নিয়ে সেটা সেখানেই খাওয়ার পর পরীক্ষা দিতে যেতাম। প্রতিদিনকার মতো সেদিন গিয়ে দেখি কমলাপুর স্টেশনের চারপাশে অসংখ্য পুলিশ গিজগিজ করছে। মাদক বিক্রেতা লোকটি নেই। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। অপেক্ষা করতে করতে ঘড়িতে একটা বেজে গেল। আমার পরীক্ষার সময় শেষ। সেদিনের পরীক্ষা মিস করার ফলে আমার এক সেমিস্টার ড্রপ হলো। আমার বন্ধুরা আমার চেয়ে সিনিয়র হয়ে গেল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আর পড়ালেখাই করব না।’
এই হঠকারী সিদ্ধান্তের পর আরও নিবিড়ভাবে নিমজ্জিত হয়ে পড়লেন নেশায়। নিজের ঘরেই খাওয়া শুরু করলেন মাদক। একদিন মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেলেন। তারপর মা অনেকটা জোর করেই তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিলেন আপনগাঁওয়ে। এখন প্রায় এক বছর ধরে ওয়াহিদ কোনো মাদক গ্রহণ করেন না। তাঁর দুচোখে এখন স্বপ্ন, পড়াশোনাটা আবার শুরু করবেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কারণ, ‘মাকে যে আমি কথা দিয়েছি, তাঁর মুখে হাসি ফোটাব।’ বলছিলেন ওয়াহিদ হাসান।
একটু ভিন্ন পথে ওয়াহিদের নেশার জীবন শুরু হলেও শাহাদত, রমজান, রাজিব, শাহীন ও বাদলের নেশার জীবন শুরু হয় প্রায় একই পথে ও অনেকটা একই প্রক্রিয়ায়। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তাঁদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বটে, তবে মাদক গ্রহণের শুরুর ইতিহাস প্রায় অভিন্ন। তাঁরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন পথে। শুরু হয় ভবঘুরে জীবন। জুটে যায় একপাল নেশাখোর বন্ধু। অতঃপর নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়েই জড়িয়ে পড়া চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে।
শাহাদত হোসেনের জন্ম নারায়ণগঞ্জে। বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন ১২ বছর বয়সেই। ঢাকার সদরঘাটে কাজ শুরু করেছিলেন কুলি হিসেবে। একসময় গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়েন। একদিন দেখেন, এক বিদেশি ভদ্রলোক সদরঘাটে এসে তাঁর মাদকাসক্ত বন্ধুদের মাদক থেকে ফিরে আসার কথা বলছেন। কথাগুলো ভালো লাগে তাঁর। তিনি সেদিনই ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজালের সঙ্গে চলে আসেন আপনগাঁওয়ে।
তারপর শাহাদত শুধু সুস্থই হননি, তিনি এখানে ওয়েলডিংয়ের কাজও শিখেছেন।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে জন্ম নেওয়া রাজিব বেশ রসিক। সিনেমার বিজ্ঞাপনের ঢঙে বলেন: ‘নেশার কবল থেকে বেরিয়ে আসা এক তরুণের নাম রাজিব...।’ বলেই ফিক করে হেসে ফেলেন। নির্মল এই হাসি দেখে কে বলবে, মাস ছয়েক আগেই এক দুর্বিষহ জীবন যাপন করছিলেন তিনি। এখন আপনগাঁওয়ে এসে নেশামুক্ত হতে পেরেছেন। পড়ালেখা করছেন। বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুরু করেছেন তৃতীয় শ্রেণী থেকে।
রমজান আলীর জন্মও ঢাকার মোহাম্মদপুরেই। মা খুব চেষ্টা করেছিলেন রমজানকে পড়ালেখা শেখাতে। কিন্তু পড়তে ভালো লাগত না তাঁর। এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতেই ভালো লাগত। এই ঘুরে বেড়াতে বেড়াতেই কিছু নেশাখোর বন্ধু জুটে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে মা একদিন জোর করে এই আপনগাঁওয়ে রেখে যান তাঁকে। এখন ব্রাদারের তত্ত্বাবধানে পুরোপুরি সুস্থ।
শাহীন আলম মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন ঢাকার টঙ্গীতে। এই থাকাটা অবশ্য একটুও সুখকর ছিল না তাঁর। প্রায়ই বাবা তাঁর মাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। একবার বাবার বেধড়ক পিটুনিতে তাঁর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় বাবার ওপর ভীষণ ক্ষোভ জন্মে যায়। তিনি বাবাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে আসেন ঢাকার মিরপুরে। ভবঘুরে জীবন শুরু হয় তাঁর। একই সঙ্গে শুরু হয় নেশার জীবন। এরপর পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন ‘অপরাজেয় বাংলা’ তাঁকে আপনগাঁওয়ের ঠিকানা দেয়।
আপনগাঁওয়ে এসে তিনি পুরোপুরি সুস্থ তো হয়েছেনই, উপরন্তু পড়ালেখাও শুরু করেছেন।
বাদল হাসান এখন পড়ছেন ষষ্ঠ শ্রেণীতে। কিন্তু পাঁচ মাস আগেও গাঁজা ও ড্যান্ডি খেয়ে দিনমান পড়ে থাকতেন কমলাপুর স্টেশনে। আর রাত হলেই নেমে পড়তেন চুরি-ছিনতাইয়ে। কিন্তু এই জীবনের বাইরেও যে আরও এক জীবন আছে, যে জীবন দোয়েলের, ফড়িংয়ের মতোই সুন্দর; সেই জীবনের কথা ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল একদিন বলছিলেন কমলাপুর স্টেশনে। বাদল সেই জীবনের গল্প শুনে ব্রাদারের সঙ্গে চলে এলেন আপনগাঁওয়ে। এখন সম্পূর্ণ নেশামুক্ত জীবন যাপন করছেন। শিখছেন ওয়েলডিংয়ের কাজ।
ঘুরে দাঁড়ানো এসব তরুণের সম্পর্কে ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল বলেন, নেশামুক্ত হওয়া অসম্ভব কিছুই নয়। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিই পারে একজন মানুষকে মাদক থেকে দূরে রাখতে। এই তরুণেরাই তার সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ।
ঢাকার মতিঝিলের ছেলে ওয়াহিদ এসএসসির পর পরই পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু আয়-রোজগার করে দেশে পাঠাবেন, তাতে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করা হবে—এমনই ছিল উদ্দেশ্য। চার বছর ছিলেন সেখানে, সেই উদ্দেশ্য একটিবারের জন্যও সফল করতে পারেননি। বরং চার বছর পর তাঁর অবস্থা এমন দুরবস্থায় পরিণত হলো যে শেষ পর্যন্ত বাবার কাছেই হাত পাততে হলো। কারণ কী? ওয়াহিদ বলেন, ‘আমি মাদকের চোরাবালিতে ডুবে গিয়েছিলাম। ছোটখাটো নেশা দিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত হেরোইন ও ইয়াবাতেই আসক্ত হয়ে পড়ি।’ একসময় তাঁর অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে তিনি বাধ্য হন দেশে ফিরতে।
দেশে ফিরে কম্পিউটার বিজ্ঞানে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হন একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। মনকে প্রতিজ্ঞার বজ্র আঁটুনিতে বেঁধে ফেলেন এই বলে, আর নেশা নয়, এবার পড়াশোনাটা শেষ করতে হবে। কিন্তু কদিন বাদেই বুঝলেন, তাঁর এই বজ্র আঁটুনি আসলে ফসকা গেরো! সেই সময়ের স্মৃতি মনে করতে গিয়ে কপাল কুঁকড়ে উঠল তাঁর, ‘আমি তো তখন মানুষ ছিলাম না। ফোর্থ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। প্রতিদিন সকালে কমলাপুর স্টেশনের কাছে এক মাদক বিক্রেতার কাছ থেকে মাদক নিয়ে সেটা সেখানেই খাওয়ার পর পরীক্ষা দিতে যেতাম। প্রতিদিনকার মতো সেদিন গিয়ে দেখি কমলাপুর স্টেশনের চারপাশে অসংখ্য পুলিশ গিজগিজ করছে। মাদক বিক্রেতা লোকটি নেই। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। অপেক্ষা করতে করতে ঘড়িতে একটা বেজে গেল। আমার পরীক্ষার সময় শেষ। সেদিনের পরীক্ষা মিস করার ফলে আমার এক সেমিস্টার ড্রপ হলো। আমার বন্ধুরা আমার চেয়ে সিনিয়র হয়ে গেল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আর পড়ালেখাই করব না।’
এই হঠকারী সিদ্ধান্তের পর আরও নিবিড়ভাবে নিমজ্জিত হয়ে পড়লেন নেশায়। নিজের ঘরেই খাওয়া শুরু করলেন মাদক। একদিন মায়ের কাছে ধরা পড়ে গেলেন। তারপর মা অনেকটা জোর করেই তাঁকে ভর্তি করিয়ে দিলেন আপনগাঁওয়ে। এখন প্রায় এক বছর ধরে ওয়াহিদ কোনো মাদক গ্রহণ করেন না। তাঁর দুচোখে এখন স্বপ্ন, পড়াশোনাটা আবার শুরু করবেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কারণ, ‘মাকে যে আমি কথা দিয়েছি, তাঁর মুখে হাসি ফোটাব।’ বলছিলেন ওয়াহিদ হাসান।
একটু ভিন্ন পথে ওয়াহিদের নেশার জীবন শুরু হলেও শাহাদত, রমজান, রাজিব, শাহীন ও বাদলের নেশার জীবন শুরু হয় প্রায় একই পথে ও অনেকটা একই প্রক্রিয়ায়। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে তাঁদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা বটে, তবে মাদক গ্রহণের শুরুর ইতিহাস প্রায় অভিন্ন। তাঁরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন পথে। শুরু হয় ভবঘুরে জীবন। জুটে যায় একপাল নেশাখোর বন্ধু। অতঃপর নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়েই জড়িয়ে পড়া চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে।
শাহাদত হোসেনের জন্ম নারায়ণগঞ্জে। বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন ১২ বছর বয়সেই। ঢাকার সদরঘাটে কাজ শুরু করেছিলেন কুলি হিসেবে। একসময় গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়েন। একদিন দেখেন, এক বিদেশি ভদ্রলোক সদরঘাটে এসে তাঁর মাদকাসক্ত বন্ধুদের মাদক থেকে ফিরে আসার কথা বলছেন। কথাগুলো ভালো লাগে তাঁর। তিনি সেদিনই ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজালের সঙ্গে চলে আসেন আপনগাঁওয়ে।
তারপর শাহাদত শুধু সুস্থই হননি, তিনি এখানে ওয়েলডিংয়ের কাজও শিখেছেন।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে জন্ম নেওয়া রাজিব বেশ রসিক। সিনেমার বিজ্ঞাপনের ঢঙে বলেন: ‘নেশার কবল থেকে বেরিয়ে আসা এক তরুণের নাম রাজিব...।’ বলেই ফিক করে হেসে ফেলেন। নির্মল এই হাসি দেখে কে বলবে, মাস ছয়েক আগেই এক দুর্বিষহ জীবন যাপন করছিলেন তিনি। এখন আপনগাঁওয়ে এসে নেশামুক্ত হতে পেরেছেন। পড়ালেখা করছেন। বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুরু করেছেন তৃতীয় শ্রেণী থেকে।
রমজান আলীর জন্মও ঢাকার মোহাম্মদপুরেই। মা খুব চেষ্টা করেছিলেন রমজানকে পড়ালেখা শেখাতে। কিন্তু পড়তে ভালো লাগত না তাঁর। এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতেই ভালো লাগত। এই ঘুরে বেড়াতে বেড়াতেই কিছু নেশাখোর বন্ধু জুটে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে মা একদিন জোর করে এই আপনগাঁওয়ে রেখে যান তাঁকে। এখন ব্রাদারের তত্ত্বাবধানে পুরোপুরি সুস্থ।
শাহীন আলম মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন ঢাকার টঙ্গীতে। এই থাকাটা অবশ্য একটুও সুখকর ছিল না তাঁর। প্রায়ই বাবা তাঁর মাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। একবার বাবার বেধড়ক পিটুনিতে তাঁর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় বাবার ওপর ভীষণ ক্ষোভ জন্মে যায়। তিনি বাবাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে আসেন ঢাকার মিরপুরে। ভবঘুরে জীবন শুরু হয় তাঁর। একই সঙ্গে শুরু হয় নেশার জীবন। এরপর পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন ‘অপরাজেয় বাংলা’ তাঁকে আপনগাঁওয়ের ঠিকানা দেয়।
আপনগাঁওয়ে এসে তিনি পুরোপুরি সুস্থ তো হয়েছেনই, উপরন্তু পড়ালেখাও শুরু করেছেন।
বাদল হাসান এখন পড়ছেন ষষ্ঠ শ্রেণীতে। কিন্তু পাঁচ মাস আগেও গাঁজা ও ড্যান্ডি খেয়ে দিনমান পড়ে থাকতেন কমলাপুর স্টেশনে। আর রাত হলেই নেমে পড়তেন চুরি-ছিনতাইয়ে। কিন্তু এই জীবনের বাইরেও যে আরও এক জীবন আছে, যে জীবন দোয়েলের, ফড়িংয়ের মতোই সুন্দর; সেই জীবনের কথা ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল একদিন বলছিলেন কমলাপুর স্টেশনে। বাদল সেই জীবনের গল্প শুনে ব্রাদারের সঙ্গে চলে এলেন আপনগাঁওয়ে। এখন সম্পূর্ণ নেশামুক্ত জীবন যাপন করছেন। শিখছেন ওয়েলডিংয়ের কাজ।
ঘুরে দাঁড়ানো এসব তরুণের সম্পর্কে ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল বলেন, নেশামুক্ত হওয়া অসম্ভব কিছুই নয়। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তিই পারে একজন মানুষকে মাদক থেকে দূরে রাখতে। এই তরুণেরাই তার সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ।
No comments:
Post a Comment