Friday, June 21, 2013

বিদেশি ঋণের ৪০% গেছে আগের দেনা শোধে


1 / 1
বিদায়ী অর্থবছরের দশ মাসে যে বিদেশি ঋণ-সহায়তা দেশে এসেছে তার ৪০ শতাংশই চলে গেছে আগের নেয়া ঋণ পরিশোধে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণের যে সুদ পরিশোধ করেছে তা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান।
২০১২-১৩ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সব মিলিয়ে ১৯৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করেছে। এর মধ্যে ৭৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে।
২০০১১-১২ অর্থবছরের পুরো সময়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ৭৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার প্রয়োজন হয়েছিল।
আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতের জন্য ১১৭ কোটি ডলার  বরাদ্দ রেখেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যা পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক।
বিদায়ী অর্থবছরের দশ মাসে নিট বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ৯৬ কোটি ডলার ছিল।
মোট যে সাহায্য আসে, তা থেকে বিভিন্ন সময়ে নেয়া ঋণ-সহায়তার সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা বাকি থাকে তা ধরে নিট সাহায্যের পরিমাণ হিসাব করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “ফরেন এইডের হিসাবে ‘শুভংকরের ফাঁকি’ আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এবার বিদেশি সাহায্য বেশি আসছে। কিন্তু আগের নেয়া ঋণ পরিশোধে কি পরিমাণ অর্থ চলে যাচ্ছে সেটা বলা হচ্ছে না।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে জটিলতার মধ্যেও বিদেশি ঋণ সহায়তা বেশি এসেছে- এটা ঠিক। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আগের নেয়া ঋণের সুদ আসল পরিশোধের পরিমাণ।
অবশ্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে মির্জ্জা আজিজের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ঋণ পরিশোধে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুনাম আছে।
“আমরা কখনই কিস্তি মিস করি না। নিয়মিত শোধ করে থাকি। এই সুনামের কারণেই আমাদের ফরেন এইড দিন দিন বাড়ছে। আর ঋণ বাড়লে তো সুদ-আসল বেশি হবেই।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি ফিরিয়ে দেয়ার পর বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করলেও আদতে তা হয়নি।
“উল্টো ঋণ আরও বেড়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যরাও বেশি বেশি অর্থ ছাড় করেছে।”
মুহিত বলছেন, বাংলাদেশ পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ না নিলেও তারা অন্য তিন প্রকল্পে সমান অর্থ দিচ্ছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার বিদেশি ঋণ-সহায়তার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, বিদায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা মোট ১৯৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করেছে।
এই অর্থ গত অর্থবছরের (২০১১-১২) পুরো সময়ের (১২ মাস) প্রায় সমান। গত অর্থবছরে মোট ২০৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ছাড় করেছিল দাতারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি বিদেশি সাহায্য এসেছে।
২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট ১৬২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এর মধ্যে ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে খরচ হয়েছিল ৬৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। নিট সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৯৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।
এ হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ অর্থ বেশি চলে গেছে বিদেশি ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সংস্থাটি বিভিন্ন প্রকল্পে ৫৭ কোটি ডলার ছাড় করেছে।
এই অর্থ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বলে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের ৩৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে, যাতে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪৫০ কোটি ডলার।
দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রথমে ঋণ দেয়া স্থগিত করে বিশ্ব ব্যাংক। অনেক দেনদরবারের পর পদ্মা প্রকল্পে আবার ফিরে আসে সংস্থাটি। কিন্তু নানা শর্তের কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা প্রকল্পে সরকার বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ নেবে না বলে জানিয়ে দেয়।
পদ্মা সেতু নির্মার্ণের জন্য প্রথম দিকে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮০ কোটি ডলার। পরবর্তীতে তা বাড়তে বাড়তে ২৯১ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।

No comments:

Post a Comment