সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, গণতন্ত্র ক্রমে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোতে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। তিনি মন্তব্য করেন, গণতন্ত্রের এ সমস্যাটা দুই নেত্রীকে নিয়ে নয়। সমস্যাটা রাষ্ট্রব্যবস্থার। আমরা এমন একটা কেন্দ্রশাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থা করেছি, যাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে রাষ্ট্রের কেন্দ্র তথা একটি অফিসে, একজন ব্যক্তির হাতে। অতীতের মোগল সম্রাট বা রাশিয়ার জারদের হাতেও এত ক্ষমতা ছিল না, যা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি রাষ্ট্রে 'চেকস অ্যান্ড ব্যালান্স' সমুন্নত রাখার তাগিদ দেন। নাগরিক ঐক্যের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় ড. আকবর আলি খান এ কথা বলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে 'দুই নেত্রীর হাতে দেশ নিরাপদ নয়, তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার এখনই সময়' শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করা হয়। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুসহ নাগরিক ঐক্যের নেতারা। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকারি দল লুটপাটপন্থি বিরোধী দলও লুটপাটপন্থি। এ জন্য বিদেশি শক্তিগুলো দ্বিদলীয় শক্তির রাজনীতির মধ্যে আমাদের আবদ্ধ করে ফেলেছে। তিনি মন্তব্য করেন, একতরফা নির্বাচন হলে মহাজোটের ক্ষমতায় থাকার দ্বিতীয় টার্ম নিশ্চিত হয়ে যায়। জামায়াতের সঙ্গেও তলে তলে সরকার হিডেন ডিল খেলছে। খালেদা নির্বাচনে না এলে তোমরা আস, আমরা দেখব। এ জন্য এরশাদকে পাতানো বিরোধী দলের ভূমিকায় নামানো হয়েছে। তারেককে (তারেক রহমান) নিয়ে যেন কোনো কিছু না করা হয় তলে তলে সংলাপের নামে বিএনপি সেই খেলা খেলছে। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, '৫৪ সালে কেউ মনে করেনি মুসলিম লীগকে কেউ হারাতে পারবে। কিন্তু হক-ভসানী-সোহরাওয়ার্দী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন। তেমনিভাবে ড. কামাল-সেলিম-খালেকসহ বাম প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টা ৩০০ আসনে এমপি মনোনয়ন দিতে পারি। জনগণকে বলতে পারি- আমরা দুর্নীতি করি না, আমাদের দখলবাজির রেকর্ড নেই। আমরা দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে চাই। এটাই নাগরিক ঐক্যের তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার মন্ত্র। মান্না আরও বলেন, 'দুই নেত্রীর কাছে দেশ নিরাপদ নয়' এ স্লোগান নিয়ে এ জন্য আমরা মাঠে নেমেছি যে দুই দলের বড় বড় নেতারা কেবল মিউ মিউ করছেন। নেত্রীর কাছে গিয়ে মাথা খুঁড়ছেন মাফ করে দেন, ভুল হয়ে গেছে। এবার নমিনেশন দেননি, মন্ত্রিত্ব দেননি কোনো সমস্যা নেই। আমরা আছি। অর্থাৎ রাজনীতি এখন এমপি হওয়া মন্ত্রী হওয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে। এ সুযোগে দেশে দুর্নীতি, লুটপাটের তাণ্ডব চলছে। দুই নেত্রী চাইলে এ তাণ্ডব চলতে পারত না। তিনি বলেন, এ দুজনের ওপরই নির্ভর করছে ভবিষ্যতে এ দেশের কী হবে।
No comments:
Post a Comment