Thursday, June 13, 2013

  • বন্ধু হয় ফেসবুকে। আবার বাস্তবেও। তরুণরা আজকাল দুই ধরনের বন্ধুর সঙ্গেই সময় কাটাতে পছন্দ করছেন। ম
    বন্ধু হয় ফেসবুকে। আবার বাস্তবেও। তরুণরা আজকাল দুই ধরনের বন্ধুর সঙ্গেই সময় কাটাতে পছন্দ করছেন। মডেল: মেহেদি,মৌলী ও শুভ।
    ছবি: অধুনা
1 2
দুই বন্ধু ও ভালুকের ওই গল্পটি নিশ্চয়ই মনে আছে। ভালুককে আসতে দেখে এক বন্ধু উঠে গেল গাছে, দ্বিতীয় বন্ধুর কথা না ভেবেই! দ্বিতীয় বন্ধু বুদ্ধি করে শুয়ে রইল শ্বাস বন্ধ করে। ভালুক এসে ফিরে গেল তার নাক শুঁকে। প্রথম বন্ধু গাছ থেকে নেমে দ্বিতীয় বন্ধুকে জিজ্ঞেস করল, ‘ভালুক তোকে কী বলে গেল রে?’ দ্বিতীয় বন্ধুর উত্তর, ‘বিপদেই বন্ধুর পরিচয়।’ গল্পটি পুরোনো, কিন্তু সত্যির জোরেই টিকে আছে এখনো।
ফেসবুকে পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তাহমিদা ও অনিকের (ছদ্মনাম)। আলাদা আলাদাভাবে তাঁদের দুজনের কাছেই প্রশ্ন করা হলো, ‘ফেসবুকে কী করে আসল বন্ধুর পরিচয় পাবেন? অন্তত দুটি করে বুদ্ধি বাতলান।’ তাহমিদা ও অনিকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ফেসবুক চ্যাটে। প্রশ্ন করার পর বেশ খানিকক্ষণের অপেক্ষা। অপেক্ষা শেষে উত্তর এল ওপাশ থেকে, ‘নাহ্, তেমন কোনো বুদ্ধি তো পাচ্ছি না!’ এই উত্তর তাহমিদা ও অনিক—দুজনেরই। তাহলে এখন আরেকটা প্রশ্ন, ‘ফেসবুকে যে এত শত বন্ধু, যাদের সঙ্গে দিনের অনেকটা সময় কাটছে; তারা কেমন বন্ধু? তাদের আসল পরিচয় কী করে পাবেন?’ এবার দুজনের কাছে দুই ধরনের জবাব মিলল। তাহমিদা মনে করেন, ‘ফেসবুকের বন্ধুটি যদি বাস্তবের বন্ধুও হন, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। তাকে আমি ভালোভাবেই চিনতে পারি, জানতে পারি। কিন্তু কেবল ফেসবুক-বন্ধুর বেলায় সত্যিকারের বন্ধু চেনা খুব কঠিন। এমনকি ফেসবুকের প্রোফাইলটি নকল না আসল—এটা বিচার করাও খুব মুশকিল!’ আর অনিক বললেন, ‘ফেসবুক-বন্ধুর সঙ্গে কিছুদিন কথা বললে কিন্তু তার মনমানসিকতা বোঝা যায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা অনুমাননির্ভর। আমার অনেক বন্ধুই আছে, যারা ফেসবুকে বন্ধুত্ব হওয়ার পর বাস্তবে মিশতে গিয়ে বোকা বনে গেছে! কারণ, তারা দেখেছে ফেসবুক-বন্ধুটি যেমন, বাস্তবে তার উল্টো। আবার এর ব্যতিক্রমও আছে অনেক। বাস্তবের বন্ধু আর ফেসবুকের বন্ধুর মধ্যে যদি পার্থক্য বলেন তাহলে বলব—একটা হলো কঠিন, আরেকটা হলো বায়বীয়। হা হা হা হা!’
অনিকের উপমায় আমাদেরও হাসতে হলো। কি-বোর্ডে টাইপ করে লিখতে হলো ‘হা হা হা হা!’ অনিকের সঙ্গে কখনো সামনাসামনি দেখা হয়নি। অনিক কি জানেন, এই হাসির অর্থ? অনিককে ঠিক এই প্রশ্নটাই করা হলো। উত্তর এল, ‘আমরা তো মনের কথা বুঝি না, তাই হাসির অর্থ উপলব্ধি করা অসম্ভব। সামনাসামনি থাকলে বোঝা যেত।’
‘মানুষ নিজে কী, সেটা প্রকাশ করার জন্য মুখিয়ে থাকে।’ কথাটা বলেছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। কথাটি নিশ্চয়ই সত্যি। আর তাই নিজেকে প্রকাশ করার জন্য চাই বন্ধু। মানুষ যখন বাস্তবে বন্ধুসঙ্গ থেকে দূরে থাকে, তখন বিকল্প কিছু তো খুঁজবেই। ঠিক এই জায়গাটিই খুব ভালো ধরতে পেরেছেন জাকারবার্গ। ফলে ফেসবুকের এমন রমরমা অবস্থা। কিন্তু বাস্তবে যথেষ্ট বন্ধু এবং বন্ধুসঙ্গ থাকার পরও যে ফেসবুক-বন্ধুর পেছনে অনেকটা সময় দেন অনেকে? তারা কেন দিচ্ছেন বা দিয়েছেন? তেমনই একজনের সঙ্গে কথা হলো। নাম প্রকাশ করতে চান না, তাই তাঁর ছদ্মনাম দেওয়া হলো রূপম। ‘বাস্তবে বন্ধুদের আড্ডায় একধরনের একঘেয়েমি কাজ করছিল। এ ছাড়া অনেকেই আমাকে বুঝত না। ফলে ফেসবুকের অজানা-অচেনা একজন মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় সবকিছু নতুন মনে হতো। অত দায়বদ্ধতা কিংবা দায়িত্ববোধও কাজ করত না। কথা বলছি কথা বলছি—ভালোই তো! কিন্তু এটা একপর্যায়ে আর ভালো লাগে না। কারণ, যাকে দেখছি না, যার কণ্ঠস্বর শুনছি না। কথা বলার সময় ওপাশের মানুষটার মুখের কিসের ছাপ—তা না বুঝতে পারলে নিজেকে বোকা বোকা লাগে!’ কৃষ্ণকলির ‘বন্ধু আমার’ গানের কয়েকটি পঙিক্তর কথা মনে পড়ে গেল—‘বন্ধু আমার বন্ধু তুমি/বন্ধু মোরা কজন/তবুও বন্ধু মন হলো না আপন...’। আর মার্কিন লেখক হেনরি অ্যাডামস বলেছিলেন, ‘বন্ধুরা জন্মায়, তৈরি হয় না।’

No comments:

Post a Comment