জীবদেহের প্রতিটি কোষে থাকে ডিএনএ, যার জিনগুলো নির্ধারণ করে জীবের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য। জিনগত গঠন ভিন্ন বলেই ছত্রাক, গাছপালা, পশুপাখি, মানুষ একে অন্যের থেকে ভিন্ন। আবার একই প্রজাতির সব প্রাণীর জিনগত গঠনে সামান্য ভিন্নতা থাকে। যেমন একই প্রজাতি হওয়ায় সব মানুষের জিনের গঠন শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি, কিন্তু এই সামান্য পার্থক্যের কারণেই উচ্চতা, শারীরিক গড়ন, চোখের রঙে এত পার্থক্য! জিনের বর্ণমালায় রয়েছে কেবল চারটি বর্ণ, এগুলোর বিভিন্ন সমাবেশ ও বিন্যাস ঘটিয়ে তিন বর্ণের কোডন তৈরি হয়। প্রতিটি কোডন একেকটি এমাইনো অ্যাসিডকে প্রকাশ করে। প্রকাশিত এমাইনো অ্যাসিডগুলো মিলেই তৈরি হয় প্রোটিন, আর এই প্রোটিনের ভিন্নতার কারণেই কারও চুলের রং কালো, কারও বা সোনালি। আবার কখনো এই চারটি বর্ণের সমাহারে ঘটে তারতম্য, ঘটে মিউটেশন। এ কারণে জীবের বাহ্যিক প্রকাশে ঘটে পরিবর্তন। তবে প্রকৃতির যেমন অধিকার আছে নিজ খেয়ালে ভুল করার, তেমনি প্রকৃতির মধ্যেই রয়েছে সেই ভুল সংশোধনের অপূর্ব কৌশল। যার কারণে বংশ থেকে বংশান্তরে নির্ভুলভাবে স্থানান্তরিত হতে থাকে তথ্য, সে তথ্য অনুযায়ী প্রকাশিত হতে থাকে জীবের বৈশিষ্ট্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগেই কথা হলো জিনতত্ত্বের মতো কঠিন বিষয়টি যাঁরা অধ্যয়ন করছেন, তাঁদের সঙ্গে। বিভাগটির জন্ম ২০০১ সালে, বেশি দিন আগের কথা নয়। আসনসংখ্যাও সীমিত। কিন্তু প্রতিবছরই ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রথম সারির বিভাগ থাকে এটি। সায়েন্স কমপ্লেক্সের ছয়তলায় অবস্থিত এই বিভাগে ক্লাসরুমের পাশাপাশি রয়েছে সেমিনার, গ্যালারি, সাধারণ ল্যাবরেটরি, বায়োইনফরমেটিকস ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি। জিন প্রকৌশল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানজানা চৌধুরী বলেন, জিনতত্ত্বের তাত্ত্বিক ধারণাকে মানুষের কল্যাণে প্রয়োগ করাই জিন প্রকৌশল। এ জন্য জিনে আনতে হবে পরিবর্তন, আর সেটা প্রকাশিত হতে হবে বাহ্যিকভাবে। পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করে সাফল্য বা চান্সের ওপর। বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হওয়ার জন্য লাগতে পারে খুব কম সময়, আবার লাগতে পারে দুই-তিন বা তার বেশি জেনারেশন।
একই বর্ষের শিক্ষার্থী নুজহাত সানাম বলেন, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তির প্রয়োগ দিনে দিনে বাড়ছে। ফরেনসিক ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা থেকে শুরু করে শিল্প ক্ষেত্রে ইনসুলিন উৎপাদন, ড্রাগ ডিজাইনিং, ভ্যাকসিন তৈরি, হরমোন উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধী উচ্চ ফলনশীল ফসল ফলানো, লবণাক্ততা ও আর্সেনিক সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন—কোথায় নেই জিন প্রকৌশল! বর্তমানে কাজ চলছে ক্যানসারের জন্য দায়ী অনকো জিন নিয়েও। ব্যাকটেরিয়ার জিনে পরিবর্তন এনে পারদ, টলুইনের দূষণ রোধ করা হচ্ছে। জিন প্রকৌশলের কারণে জোনাকির জিন তামাকগাছে স্থানান্তর করে এখন তামাকগাছেও দেখা যেতে পারে মিটিমিটি আলো! যদিও সব ক্ষেত্রে এখনো জিন স্থানান্তর-প্রক্রিয়া সফল হয়নি।
জীববিজ্ঞানের অনেক কিছুই কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে সংরক্ষণ, পরীক্ষা, কিংবা সমাধান করা যায়। এরই নাম বায়োইনফরমেটিকস। জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থীদের তার জন্য শিখতে হয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। এ ছাড়া পড়তে হয় রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অণুজীববিজ্ঞান। বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সালওয়া মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, এখানে ক্লাস করতে হয় প্রচুর, পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি। নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকমণ্ডলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে নাফিসা নাওয়াল বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণেই সেশনজটের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত আমরা।’দেশে ও দেশের বাইরে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কর্মের সুযোগ কোথায়, জানতে চাইলে বিভাগীয় শিক্ষক ড. জেসমিন বলেন, ‘জিনবিজ্ঞানীদের কাজ মূলত জীবনের নীলনকশার রহস্য উদ্ঘাটন করা। দেশে-বিদেশে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন গবেষণায় সরাসরি সম্পৃক্ত। পাটের জিনোমিক সিকোয়েন্স আবিষ্কারেও আমাদের শিক্ষার্থীদের রয়েছে সক্রিয় অবদান।’ জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা বোনেন হাজারো স্বপ্ন। কেউবা স্বপ্ন দেখেন মানুষের জিনে এমন পরিবর্তন আনবেন, যাতে মানুষ উড়তে পারে, আবার কেউ বা বিশালাকৃতির ধান বানাতে চান, যা একটি করে খেলেই সারা দিনের ভাতের অভাব পূরণ হয়ে যাবে! শুনতে অবাস্তব লাগলেও কে জানে, একদিন হয়তো সত্যি হবে এই স্বপ্ন!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগেই কথা হলো জিনতত্ত্বের মতো কঠিন বিষয়টি যাঁরা অধ্যয়ন করছেন, তাঁদের সঙ্গে। বিভাগটির জন্ম ২০০১ সালে, বেশি দিন আগের কথা নয়। আসনসংখ্যাও সীমিত। কিন্তু প্রতিবছরই ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রথম সারির বিভাগ থাকে এটি। সায়েন্স কমপ্লেক্সের ছয়তলায় অবস্থিত এই বিভাগে ক্লাসরুমের পাশাপাশি রয়েছে সেমিনার, গ্যালারি, সাধারণ ল্যাবরেটরি, বায়োইনফরমেটিকস ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি। জিন প্রকৌশল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানজানা চৌধুরী বলেন, জিনতত্ত্বের তাত্ত্বিক ধারণাকে মানুষের কল্যাণে প্রয়োগ করাই জিন প্রকৌশল। এ জন্য জিনে আনতে হবে পরিবর্তন, আর সেটা প্রকাশিত হতে হবে বাহ্যিকভাবে। পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করে সাফল্য বা চান্সের ওপর। বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হওয়ার জন্য লাগতে পারে খুব কম সময়, আবার লাগতে পারে দুই-তিন বা তার বেশি জেনারেশন।
একই বর্ষের শিক্ষার্থী নুজহাত সানাম বলেন, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তির প্রয়োগ দিনে দিনে বাড়ছে। ফরেনসিক ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা থেকে শুরু করে শিল্প ক্ষেত্রে ইনসুলিন উৎপাদন, ড্রাগ ডিজাইনিং, ভ্যাকসিন তৈরি, হরমোন উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধী উচ্চ ফলনশীল ফসল ফলানো, লবণাক্ততা ও আর্সেনিক সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন—কোথায় নেই জিন প্রকৌশল! বর্তমানে কাজ চলছে ক্যানসারের জন্য দায়ী অনকো জিন নিয়েও। ব্যাকটেরিয়ার জিনে পরিবর্তন এনে পারদ, টলুইনের দূষণ রোধ করা হচ্ছে। জিন প্রকৌশলের কারণে জোনাকির জিন তামাকগাছে স্থানান্তর করে এখন তামাকগাছেও দেখা যেতে পারে মিটিমিটি আলো! যদিও সব ক্ষেত্রে এখনো জিন স্থানান্তর-প্রক্রিয়া সফল হয়নি।
জীববিজ্ঞানের অনেক কিছুই কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে সংরক্ষণ, পরীক্ষা, কিংবা সমাধান করা যায়। এরই নাম বায়োইনফরমেটিকস। জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থীদের তার জন্য শিখতে হয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। এ ছাড়া পড়তে হয় রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অণুজীববিজ্ঞান। বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সালওয়া মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, এখানে ক্লাস করতে হয় প্রচুর, পড়াশোনার চাপ অনেক বেশি। নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকমণ্ডলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে নাফিসা নাওয়াল বলেন, ‘শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণেই সেশনজটের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত আমরা।’দেশে ও দেশের বাইরে এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের কর্মের সুযোগ কোথায়, জানতে চাইলে বিভাগীয় শিক্ষক ড. জেসমিন বলেন, ‘জিনবিজ্ঞানীদের কাজ মূলত জীবনের নীলনকশার রহস্য উদ্ঘাটন করা। দেশে-বিদেশে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন গবেষণায় সরাসরি সম্পৃক্ত। পাটের জিনোমিক সিকোয়েন্স আবিষ্কারেও আমাদের শিক্ষার্থীদের রয়েছে সক্রিয় অবদান।’ জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিষয়ের ছাত্রছাত্রীরা বোনেন হাজারো স্বপ্ন। কেউবা স্বপ্ন দেখেন মানুষের জিনে এমন পরিবর্তন আনবেন, যাতে মানুষ উড়তে পারে, আবার কেউ বা বিশালাকৃতির ধান বানাতে চান, যা একটি করে খেলেই সারা দিনের ভাতের অভাব পূরণ হয়ে যাবে! শুনতে অবাস্তব লাগলেও কে জানে, একদিন হয়তো সত্যি হবে এই স্বপ্ন!
No comments:
Post a Comment