পাঁচ দিনে পাঁচটি নাটকের প্রদর্শনী। একই সঙ্গে সম্পন্ন হবে নাটকগুলোর ৫০তম প্রদর্শনী। এই চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে নাট্যতীর্থের নাট্যোৎসবে। পাঁচ দিনব্যাপী এই নাট্যোৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে তাই ‘পঞ্চদশের পঞ্চদিন’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালায় নাট্যোৎসবটির উদ্বোধন হবে আজ সন্ধ্যা ছয়টায়। শেষ হবে ১৭ জুন। নাটক পাঁচটি হচ্ছে সময়ের শেষ সংলাপ, লোকনাট্য দলের মাঝরাতের মানুষেরা, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের আমিনা সুন্দরী, নাট্যতীর্থের কমলা সুন্দরী ও দ্বীপ । এই পাঁচ নাটকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁদের সঙ্গে আজ আড্ডা।
প্রথমেই শেষ সংলাপ-এর সুলতান চরিত্রের পাভেল ইসলাম। ‘নাটকটি মঞ্চে এসেছে ২০০৯ সালে। উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছিল কলকাতায়। নাটক শুরু হলো। নাটকের প্রথম অংশ শেষ। আমার সহশিল্পী হিসেবে মঞ্চে প্রবেশ করলেন একজন নারী। আমার সামনে এসে সংলাপ ভুলে গেলেন তিনি। উচ্চারণ করলেন নাটকের শেষ অংশের একটি সংলাপ। ওই মুহূর্তে যদি আমার সংলাপটি উচ্চারণ করি, তাহলে শেষ সংলাপ নাটক ওইখানে শেষ হয়ে যায়। মঞ্চে অন্য সহশিল্পীদের চোখ তো তখন মাথায়! কী ঘটবে? সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর আমি তাৎক্ষণিক অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁকে সংলাপ স্মরণ করিয়ে দিয়ে নাটক এগিয়ে নিলাম। শুধু কি মঞ্চে? মহড়াকক্ষেও ঘটেছে কত ঘটনা। মহড়ায় কয়েক দিন পরপর ওই নারী চরিত্রে নতুন একজন এসে দাঁড়িয়ে যান। ফলে প্রত্যেকবারই নতুন সহশিল্পীর সঙ্গে আমাকে সব সংলাপ ঠিক করতে হতো। একদিন নির্দেশককে বলেও ফেললাম, “ভাই, শেষ সংলাপ নাটকে সুলতানের শেষ নারী কে হবেন?” মুহূর্তেই হাসির রোল পড়ে গেল মহড়াকক্ষে।’
কমলা সুন্দরী নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদিয়া ইসলাম। সাদিয়া প্রথমেই শোনালেন নাটকের একটি সংলাপ।
‘সহিরে সহি, ইতা কিতা গীত গাও? বুইঝা সরিনা তোমার মনের বাও’। জানা গেল, নাটকটি মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। সাদিয়ার মুখে আরও কথা। ‘একবার নাটকটির প্রদর্শনী হচ্ছে কলকাতায়। সকাল ও রাতে মোট দুটি প্রদর্শনী। রাতের প্রদর্শনীতে সময়ের অভাবে আমি চুল না বেঁধে মঞ্চে প্রবেশ করেছিলাম। প্রদর্শনী শেষে এক নারী দর্শক আটকালেন আমাকে। জিজ্ঞেস করে বসলেন, সকালের প্রদর্শনীতে চুল বাঁধা ছিল। রাতের প্রদর্শনীতে তা খোলা কেন? তখন তাঁকে সত্য কথাটা না বলে আর পারলাম না। কারণ, এটা দর্শকদের অধিকার।’
আড্ডার মাঝামাঝি সময়ে এসে এবার মাঝরাতের মানুষের গল্প। অর্থাৎ মাঝরাতের মানুষেরা নাটকে ‘ভবঘুরে’ স্বদেশ রঞ্জন কী বলেন? ‘সেই কথা আর কী বলব ভাই! উদ্বোধনী প্রদর্শনীতেই ঘটে গেল দুটি ঘটনা। প্রথম ঘটনা: উদ্বোধনী প্রদর্শনী নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপ। বারবার পানি খাচ্ছি আর ওয়াশরুমে যাচ্ছি। এরই মধ্যে নাটক শুরু হয়ে গেছে। আমি দৌড়ে এসে মঞ্চে প্রবেশ করলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, দর্শকেরা আমাকে দেখে হাসছে। বুঝতে পারছিলাম না তাদের হাসির কারণ কী। পরে সহশিল্পীদের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করে বুঝতে পেরেছিলাম, শৌচাগার থেকে বের হয়ে প্যান্টের জিপার লাগানো হয়নি। দ্বিতীয় ঘটনাটি: নাটকে আমার সংলাপে প্রচুর গালিগালাজ আছে। নাটকের একটি প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন আমার মা। আমার মুখে এসব গালি শুনে মা রাগ করে চলে গেলেন বাসায়। তিন দিন আমার সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি।’ স্বদেশ রঞ্জনের গল্প শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন আমিনা সুন্দরী। অর্থাৎ আমিনা সুন্দরী নাটকে আমিনা চরিত্রের অভিনয়শিল্পী আনিকা মাহিন।
এবার আনিকা। ‘আমিনা সুন্দরী নাটকটি লিখেছেন এস এম সোলায়মান। প্রথম মঞ্চে এসেছিল নব্বইয়ের দশকে। তখন আমিনা চরিত্রে অভিনয় করতেন শুধু একজন নারী। কিন্তু আমিনা সুন্দরী নাটকের গল্পে আমিনার যে সংগ্রাম, তা শুধু একজন নারীর সংগ্রাম নয়। সকল নারীর সংগ্রাম। তাই সেই দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় নিয়ে ২০০৭-এ নাটকটি নতুন ব্যাখ্যায় নতুন করে মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন নাটকের তিনটি অংশে আমিনা চরিত্রে অভিনয় করেন তিনজন নারী। নাটকের প্রথম অংশের আমিনা চরিত্রে আমি অভিনয় করছি। নাটকের গল্প বলার ঢংটা গীতল। আর তার সঙ্গে শিল্পীদের শরীর ভঙ্গিমা—এই দুই মিলে তৈরি করা হয়আমিনা সুন্দরী নাটকের দৃশ্যপরম্পরা।’
আড্ডার শেষ প্রান্তে চলে এলাম। এবার তপন হাফিজের সঙ্গে কথা। নাট্যতীর্থের দলপ্রধান এবং নাট্যোৎসবটির আয়োজক তিনি। এ ছাড়া কমলা সুন্দরী ও দ্বীপ—দুটি নাটকেরই নির্দেশনা দিয়েছেন তপন হাফিজ। দ্বীপ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র মিলন সরকারের ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন। কোনো মজার গল্প নয়, তাঁর কাছে শুনব নাট্যোৎসবের আয়োজন প্রসঙ্গ। ‘নাট্যদলের যেকোনো প্রযোজনা যখন পঞ্চাশে পা রাখে, তার আনন্দ শুধু একজন নাট্যকর্মী উপলব্ধি করতে পারেন। তাই দেশের সব নাট্যকর্মীর এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হবে পঞ্চদশের পঞ্চদিন নাট্যোৎসবের মধ্য দিয়ে। উৎসবের প্রতিদিনের প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন পাঁচজন নাট্যব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া পাঁচজন নাট্যবন্ধুকে দেওয়া হবে সম্মাননা। আর প্রতিদিনের নাট্য প্রদর্শনীর আগে জাতীয় নাট্যশালার সামনে থাকবে বিভিন্ন নাট্যদলের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।’
প্রথমেই শেষ সংলাপ-এর সুলতান চরিত্রের পাভেল ইসলাম। ‘নাটকটি মঞ্চে এসেছে ২০০৯ সালে। উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছিল কলকাতায়। নাটক শুরু হলো। নাটকের প্রথম অংশ শেষ। আমার সহশিল্পী হিসেবে মঞ্চে প্রবেশ করলেন একজন নারী। আমার সামনে এসে সংলাপ ভুলে গেলেন তিনি। উচ্চারণ করলেন নাটকের শেষ অংশের একটি সংলাপ। ওই মুহূর্তে যদি আমার সংলাপটি উচ্চারণ করি, তাহলে শেষ সংলাপ নাটক ওইখানে শেষ হয়ে যায়। মঞ্চে অন্য সহশিল্পীদের চোখ তো তখন মাথায়! কী ঘটবে? সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর আমি তাৎক্ষণিক অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁকে সংলাপ স্মরণ করিয়ে দিয়ে নাটক এগিয়ে নিলাম। শুধু কি মঞ্চে? মহড়াকক্ষেও ঘটেছে কত ঘটনা। মহড়ায় কয়েক দিন পরপর ওই নারী চরিত্রে নতুন একজন এসে দাঁড়িয়ে যান। ফলে প্রত্যেকবারই নতুন সহশিল্পীর সঙ্গে আমাকে সব সংলাপ ঠিক করতে হতো। একদিন নির্দেশককে বলেও ফেললাম, “ভাই, শেষ সংলাপ নাটকে সুলতানের শেষ নারী কে হবেন?” মুহূর্তেই হাসির রোল পড়ে গেল মহড়াকক্ষে।’
কমলা সুন্দরী নাটকের মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাদিয়া ইসলাম। সাদিয়া প্রথমেই শোনালেন নাটকের একটি সংলাপ।
‘সহিরে সহি, ইতা কিতা গীত গাও? বুইঝা সরিনা তোমার মনের বাও’। জানা গেল, নাটকটি মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। সাদিয়ার মুখে আরও কথা। ‘একবার নাটকটির প্রদর্শনী হচ্ছে কলকাতায়। সকাল ও রাতে মোট দুটি প্রদর্শনী। রাতের প্রদর্শনীতে সময়ের অভাবে আমি চুল না বেঁধে মঞ্চে প্রবেশ করেছিলাম। প্রদর্শনী শেষে এক নারী দর্শক আটকালেন আমাকে। জিজ্ঞেস করে বসলেন, সকালের প্রদর্শনীতে চুল বাঁধা ছিল। রাতের প্রদর্শনীতে তা খোলা কেন? তখন তাঁকে সত্য কথাটা না বলে আর পারলাম না। কারণ, এটা দর্শকদের অধিকার।’
আড্ডার মাঝামাঝি সময়ে এসে এবার মাঝরাতের মানুষের গল্প। অর্থাৎ মাঝরাতের মানুষেরা নাটকে ‘ভবঘুরে’ স্বদেশ রঞ্জন কী বলেন? ‘সেই কথা আর কী বলব ভাই! উদ্বোধনী প্রদর্শনীতেই ঘটে গেল দুটি ঘটনা। প্রথম ঘটনা: উদ্বোধনী প্রদর্শনী নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপ। বারবার পানি খাচ্ছি আর ওয়াশরুমে যাচ্ছি। এরই মধ্যে নাটক শুরু হয়ে গেছে। আমি দৌড়ে এসে মঞ্চে প্রবেশ করলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, দর্শকেরা আমাকে দেখে হাসছে। বুঝতে পারছিলাম না তাদের হাসির কারণ কী। পরে সহশিল্পীদের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করে বুঝতে পেরেছিলাম, শৌচাগার থেকে বের হয়ে প্যান্টের জিপার লাগানো হয়নি। দ্বিতীয় ঘটনাটি: নাটকে আমার সংলাপে প্রচুর গালিগালাজ আছে। নাটকের একটি প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন আমার মা। আমার মুখে এসব গালি শুনে মা রাগ করে চলে গেলেন বাসায়। তিন দিন আমার সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি।’ স্বদেশ রঞ্জনের গল্প শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন আমিনা সুন্দরী। অর্থাৎ আমিনা সুন্দরী নাটকে আমিনা চরিত্রের অভিনয়শিল্পী আনিকা মাহিন।
এবার আনিকা। ‘আমিনা সুন্দরী নাটকটি লিখেছেন এস এম সোলায়মান। প্রথম মঞ্চে এসেছিল নব্বইয়ের দশকে। তখন আমিনা চরিত্রে অভিনয় করতেন শুধু একজন নারী। কিন্তু আমিনা সুন্দরী নাটকের গল্পে আমিনার যে সংগ্রাম, তা শুধু একজন নারীর সংগ্রাম নয়। সকল নারীর সংগ্রাম। তাই সেই দৃষ্টিভঙ্গি মাথায় নিয়ে ২০০৭-এ নাটকটি নতুন ব্যাখ্যায় নতুন করে মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন নাটকের তিনটি অংশে আমিনা চরিত্রে অভিনয় করেন তিনজন নারী। নাটকের প্রথম অংশের আমিনা চরিত্রে আমি অভিনয় করছি। নাটকের গল্প বলার ঢংটা গীতল। আর তার সঙ্গে শিল্পীদের শরীর ভঙ্গিমা—এই দুই মিলে তৈরি করা হয়আমিনা সুন্দরী নাটকের দৃশ্যপরম্পরা।’
আড্ডার শেষ প্রান্তে চলে এলাম। এবার তপন হাফিজের সঙ্গে কথা। নাট্যতীর্থের দলপ্রধান এবং নাট্যোৎসবটির আয়োজক তিনি। এ ছাড়া কমলা সুন্দরী ও দ্বীপ—দুটি নাটকেরই নির্দেশনা দিয়েছেন তপন হাফিজ। দ্বীপ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র মিলন সরকারের ভূমিকায় অভিনয়ও করেছেন। কোনো মজার গল্প নয়, তাঁর কাছে শুনব নাট্যোৎসবের আয়োজন প্রসঙ্গ। ‘নাট্যদলের যেকোনো প্রযোজনা যখন পঞ্চাশে পা রাখে, তার আনন্দ শুধু একজন নাট্যকর্মী উপলব্ধি করতে পারেন। তাই দেশের সব নাট্যকর্মীর এই আনন্দের বহিঃপ্রকাশ হবে পঞ্চদশের পঞ্চদিন নাট্যোৎসবের মধ্য দিয়ে। উৎসবের প্রতিদিনের প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন পাঁচজন নাট্যব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া পাঁচজন নাট্যবন্ধুকে দেওয়া হবে সম্মাননা। আর প্রতিদিনের নাট্য প্রদর্শনীর আগে জাতীয় নাট্যশালার সামনে থাকবে বিভিন্ন নাট্যদলের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।’
No comments:
Post a Comment