Thursday, June 6, 2013

:: সুজন হায়দার জনি, মুন্সীগঞ্জ ::
অবৈধভাবে নদীতে খননের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করায় মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পদ্মার তীরজুড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। বিগত কয়েক বছরের ভাঙনে পদ্মা নদী সংলগ্ন চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি মৌজা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি বছরে নদীতে ভাঙন শুরু হওয়ায় উপজেলার বাঘবাড়ি, হাইয়ারপাড় ও মূলচর এলাকায় বেশ কিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে হাসাইল, কামাড়খাড়া, দিঘিরপাড় ও পাঁচগাঁও এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা। চরম হুমকির মুখে রয়েছে হাসাইল-চিত্রকড়া নদী রক্ষা বাঁধ, বাড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রাচীন দিঘিরপাড় বাজারসহ আশপাশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। তবুও থেমে নেই নদীতে অবৈধ খনন।
অবৈধ বালু উত্তোলনে নদী ভাঙনে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে চার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট পদ্মা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করে আসছে। গ্রামবাসী ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
তারা আরো জানান, বর্তমানে মূলচর, মাইজগাঁও ও দিঘিরপাড় এলাকায় তীর ঘেঁষে খননের মাধ্যমে বালু উত্তোলন চলছে। এতে করে ওই অঞ্চলে নদী তীরের ফসলি জমিগুলো ক্রমেই নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের কারণে নদীতে আকস্মিক ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি মৌজা।
কামাড়খাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, বাঘবাড়ি এলাকায় প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, পদ্মায় অবৈধভাবে খনন করে বালু উত্তোলনের বিষয়টি খবর পেয়ে সম্প্রতি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় খননযন্ত্রের (ড্রেজার) চাবিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আটক করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, যেসব ব্যক্তি অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যদিকে গত দুই দিনের পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে জেলার শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল বাজারের দশটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পাঁচটি বসতঘর ও বেড়িবাঁধ। ভাঙনের আশঙ্কায় আছে ওই বাজারের প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এদিকে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মাওয়া-ভাগ্যকুল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিম্নচাপের কারণে ও অতিবর্ষণে পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় পদ্মা তীরবর্তী গ্রামসহ ওই অঞ্চলে আশপাশের গ্রামগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাঁশ ও টিন দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে আপ্রাণ চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাসী।
অবৈধ বালু উত্তোলনে নদী ভাঙনে প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
ভাগ্যকুল গ্রামের মো. মজিব রহমান জানান, ভাগ্যকুল বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কয়েকটি গ্রামের কয়েক শতাধিক বসতবাড়িসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই গ্রামের দশটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পাঁচটি বসবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ গত পাঁচ বছরে ভাগ্যকুল বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ, কয়েক শতাধিক বসতঘর ও বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে ভাগ্যকুল বেড়িবাঁধ রক্ষা করা সম্ভব হতো বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডেও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন জানান, ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া ভাঙনের ছবিসহ লিখিত আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বরাদ্ধ না থাকায় ভাঙন ঠেকাতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।
এদিকে পদ্মার অব্যাহত জোয়ারের পানিতে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি ডুকে পড়ায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মাওয়া, কান্দিপাড়া, কামারগাঁও ও যশলদিয়া এলাকায় নদীর তীর ঘেঁষা বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিম্নচাপ ও কয়েক দিনের অতিবর্ষণে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাওয়া, কান্দিপাড়া. কামারগাঁও ও যশলদিয়া গ্রামের নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে পানি ডুকে ওই অঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে নদী তীরবর্তী জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওই অঞ্চলে নদী ভাঙনের তাণ্ডবও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদনিই ভাঙছে ফসলি জমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
এদিকে লৌহজংয়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অহিদুল ইসলাম জানান, পদ্মার ভাঙন ও পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১৮০টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। তাদেরকে সরকারি সাহায্যের আওতায় আনতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

No comments:

Post a Comment