Sunday, June 9, 2013


শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো
পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম তিন হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয় এ সরকারেরই আমলে
শনিবার দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সরকারের শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় বেসরকারী খাতের পাটকল, সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিকদের কল্যাণে নতুন মজুরি কাঠমো নির্ধারণ করে দিয়েছে। মোট আটটি স্তরে এই মজুরি কাঠামো বিন্যাস করা হয়েছে। বেসরকারী খাতের ২০০ কারখানার ৮০ হাজার শ্রমিক নতুন মজুরি কাঠামোর আওতায় বর্ধিত সুবিধাদি পাবেন। মজুরি কাঠামো অনুযায়ী সর্বনিম্ন মজুরি ৪ হাজার ৩৮০ টাকা এবং ৫ হাজার ৬০৬ টাকা নির্ধারিত হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ইনক্রিমেন্ট, মূল মজুরির ৪০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া, প্রতি মাসে ৪০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা, লন্ড্রি ভাতা, ক্ষতিপূরণ ভাতা, নৈশ ভাতা, শিক্ষানবিস শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণ ভাতা ইত্যাদি।
বেসরকারী খাতের শ্রমিকদের জন্য সরকারের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় সন্দেহ নেই। বেসরকারী খাতের সার্বিক ব্যবস্থা থাকে স্ব-স্ব কর্তৃপক্ষের হাতে। সেখানে সরকারের শ্রম আইন বা নানা বিধিবিধান আরোপিত থাকলেও সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সরাসরি না থাকায় বেসরকারী খাতের শ্রমিকদের অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে হয়Ñ এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সরকারী খাতের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা তিন দফা বাড়ানো হলেও বেসরকারী খাতের শ্রমিকদের এজন্য দীর্ঘ ২৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর আগে দাবি আদায়ের জন্য তাদের অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে; প্রাণ দিতে হয়েছে ২০জন শ্রমিককে। এই প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার এই শ্রমিকদের জন্য মোটামুটি ভারসাম্যপূর্ণ একটি মজুরি কাঠামো গঠন করে শ্রমিক-কল্যাণে সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ রেখেছে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে এ সত্যটিও বেরিয়ে এসেছে যে, সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিলে মালিক পক্ষের সঙ্গে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে শ্রমিকদের কল্যাণে অনেক কিছু করা যায়। শুধু এই শ্রমিকদের জন্যই নয়, এর আগেও পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য বর্তমান সরকারের উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে। পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম তিন হাজার টাকা বেতন নির্ধারণ করা হয় এ সরকারেরই আমলে। আবারও তাদের ন্যূনতম বেতন নির্ধারণের লক্ষ্যে সরকার একটি মজুরি বোর্ড গঠন করেছে। এই বোর্ড যখনই সুপারিশ চূড়ান্ত করুক না কেন, তা ১ মে থেকে কার্যকর হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সরকার জনগণের অভিভাবক হিসেবে শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নে যেসব ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে বেসরকারী খাতের ৮০ হাজার শ্রমিকের জন্য নতুন মজুরি কাঠামো গঠনে এ সরকারের সক্রিয় ভূমিকা পালন জনবান্ধব সরকারের দায়িত্বকেই তুলে ধরেছে সবার সামনে। কিন্তু এর আগে দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের দুঃখ-কষ্ট ও বঞ্চনার অবসান না হওয়ায় সরকারের সেই কল্যাণী ভাবমূর্তিই যেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বার বার। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যে ব্যতিক্রম, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও কল্যাণকর নানা উদ্যোগে ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখেই সরকার তা প্রমাণ করেছে, বলা যায়। তবে দীর্ঘ ২৮ বছর পর কেন বেসরকারী খাতের শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনের শুভদিনটি এলো, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাহলে কি আগের সরকারগুলো ও মালিক পক্ষের সদিচ্ছায় ঘাটতি ছিল বা তাদের মধ্যে বোঝাপড়াগত সমন্বয় হয়নি? নাকি তারা দরিদ্র শ্রমিকদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেননি? অথচ তাদেরই শ্রমে-ঘামে মালিকদের বিত্তবৈভবের কলেবর স্ফীত হয়েছে। অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। তাইত কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন : ‘তারাই মানুষ তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান/ তাদেরই ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান।’
শ্রমিকরা জাতীয় উৎপাদন-উন্নয়নে নিরন্তর অবদান রেখে চলেছেন। তাই মালিক পক্ষের উচিত শ্রমিকদের ভাল-মন্দ, সুখসুবিধার প্রতি যতœবান হওয়া। ন্যায্য মজুরির দাবিতে তাদের রাস্তায় নামতে হবে কেন? মালিক পক্ষ সচেতন ও কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে আন্দোলন-সংগ্রামের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে না। অন্যদিকে শ্রমিকদেরও উচিত কারখানায় শান্তিপূর্ণ ও উৎপাদনের পরিবেশ বজায় রাখা। যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করা। বস্তুত, উভয় পক্ষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ফলেই শ্রমখাত সমৃদ্ধ হতে পারে; আর তখনই মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কল্যাণমূলক পদক্ষেপ যথাযথভাবে ফলপ্রসূ হতে পারে বলে আশা করা যায়।

No comments:

Post a Comment