পথিক বড্ড তৃষ্ণায় কাতর হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মশাই, একটু জল পাই কোথায়, বলতে পারেন?’ উত্তরদাতা চটজলদি উত্তর দিলেন, ‘জলপাই এখন কোথায় পাবেন? এ তো জলপাইয়ের সময় নয়। কাঁচা আম নিতে চান দিতে পারি...’
বোঝার ভুলে ঠাঠা রোদে একবুক তৃষ্ণা নিয়ে পথিককে রাস্তায় ঘুরতে হয় পানির জন্য। সুকুমার রায়ের এই অবাক জলপান নাটকে পথিককে পানি পান করতে শেষ অবধি নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছিল সেদিন।
এখন কিন্তু এমনটা হওয়ার জো নেই। চাইলেই বিশুদ্ধ পানি মেলে দোকানে। নিরাপদ পানির বোতলেও সহজে বহন করা যায়। এত সুযোগ থাকতেও আমরা কি প্রয়োজনীয় পানিটুকু পান করছি? পান না করলে কী ক্ষতি হতে পারে শরীরের, জেনে নেওয়া যাক।
মেয়েদের জন্য
রাস্তাঘাটে শৌচাগার কম, তাই পানি কম পান করব—এমন ভাবনা থেকেই মেয়েরা বের হওয়ার আগে পানি পান করেন না। এর ফলে শৌচাগারে যাওয়ার সাময়িক বিড়ম্বনা এড়ানো যায় হয়তো, কিন্তু শরীরের ক্ষতি হয়ে যায়। তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশনের মতো রোগে। নিয়ম করে পানি পান করলেই কিন্তু অনেকাংশে এড়ানো যাবে রোগটি। চিকিৎসকেরা মনে করেন, দিনে মেয়েদের অন্তত আট গ্লাস করে পানি পান করতে হবে। ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া অনেকটা প্রস্রাবের সঙ্গেই বেরিয়ে যায়। আর বেশি করে পানি পান করলে কিডনিও ভালো থাকবে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ ফ ম হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রয়োজনে সঙ্গেই বহন করতে হবে পানি। যেকোনো ধরনের পাত্রেই পানি বহন করা যাবে। পাত্রটিকে প্রতিদিনই গরম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। আর এক দিনের সংরক্ষিত পানি অন্য দিন পান করা যাবে না।
বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য
শরীরের সব অঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করতে পারে, যখন তার ভান্ডারে পানি থাকে পর্যাপ্ত। কিডনির সমস্যা, প্রস্রাবে সংক্রমণ ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগগুলো এড়ানো যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করেই। আ ফ ম হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রবীণ ব্যক্তিরা সাধারণত তাঁদের খাবারের প্রতি তেমন মনোযোগী থাকেন না। অন্য যেসব উৎস থেকে আমরা পানি পাই, তা হয়তো তিনি খান না। তাই তাঁদের পানি পান করানোর ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের যত্নবান হতে হবে। যাঁদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাঁদের জন্য পরিমাণমতো পানি পান করা খুব জরুরি। পানি শুধু শরীরের বর্জ্য ধুয়ে-মুছে বের করে নিয়ে যায়, তা নয়; প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন অংশে পৌঁছেও দেয়।’
শিশুর জন্য পানি
শিশু পানিশূন্যতায় ভুগলে তার আচরণগত পরিবর্তন থেকেই কিন্তু আঁচ করা যাবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী বললেন সে সম্পর্কে।
পানিশূন্যতায় ভোগা শিশু নিস্তেজ হতে থাকে।
স্বাভাবিকের তুলনায় শারীরিক নাড়াচাড়া কমে যায়।
শিশু কাঁদলে তার চোখ থেকে পানি ঝরবে খুব কম অথবা ঝরবেই না।
মুখের ভেতরের অংশ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
মুখে লালা তৈরির হার কমে যাবে।
অকারণেই শিশু কান্নাকাটি করবে।
অল্প বয়সী শিশুর মাথার তালু ভেতরে ঢুকে যেতে পারে।
শিশুর তীব্র আগ্রহ থাকবে পানি পানের জন্য।
পানিশূন্যতায় যা ঘটতে পারে
শারীরবৃত্তীয় কারণেই শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায় স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু যখন শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘাটতি আর পূরণ করা না হয়, তখনই দেখা দেয় নানা রকম সমস্যা।
গরমেও কম ঘামবে শরীর কিংবা ঘামবেই না।
দুর্বল হয়ে পড়বে শরীর।
মাথা ঘুরবে।
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাবে। এর রং হবে হলুদ।
অধিক পানিশূন্যতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে যে কেউ।
গায়ের চামড়া শুষ্ক হয়ে যাবে।
পানিশূন্যতা এড়াতে
নিজের জন্য ব্যাগে সংরক্ষণ করে রাখুন একটি পানির বোতল।
চা-কফির বিকল্প হিসেবে বাড়িতে তৈরি ফলের রস আনতে পারেন ফ্লাস্কে করে।
বড়-ছোট সবাই খেতে পারে স্যালাইন।
পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে যাঁদের উচ্চরক্তচাপ আছে, তাঁরা লবণ মেশাবেন না।
এ সময় যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁদের পানি পান করতে হবে আরও বেশি।
কোমল পানীয়, কফি, চা পান কমিয়ে দিন।
ডাবের পানি পানে পারেন।
বাড়িতে তৈরি করা শরবত খান নিয়ম করে।
শিশুদের পানি পানে উৎসাহিত করুন।
ছোট শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান।
শিশুদের মৌসুমি ফল খাওয়াতে ভুলবেন না।
বোঝার ভুলে ঠাঠা রোদে একবুক তৃষ্ণা নিয়ে পথিককে রাস্তায় ঘুরতে হয় পানির জন্য। সুকুমার রায়ের এই অবাক জলপান নাটকে পথিককে পানি পান করতে শেষ অবধি নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছিল সেদিন।
এখন কিন্তু এমনটা হওয়ার জো নেই। চাইলেই বিশুদ্ধ পানি মেলে দোকানে। নিরাপদ পানির বোতলেও সহজে বহন করা যায়। এত সুযোগ থাকতেও আমরা কি প্রয়োজনীয় পানিটুকু পান করছি? পান না করলে কী ক্ষতি হতে পারে শরীরের, জেনে নেওয়া যাক।
মেয়েদের জন্য
রাস্তাঘাটে শৌচাগার কম, তাই পানি কম পান করব—এমন ভাবনা থেকেই মেয়েরা বের হওয়ার আগে পানি পান করেন না। এর ফলে শৌচাগারে যাওয়ার সাময়িক বিড়ম্বনা এড়ানো যায় হয়তো, কিন্তু শরীরের ক্ষতি হয়ে যায়। তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশনের মতো রোগে। নিয়ম করে পানি পান করলেই কিন্তু অনেকাংশে এড়ানো যাবে রোগটি। চিকিৎসকেরা মনে করেন, দিনে মেয়েদের অন্তত আট গ্লাস করে পানি পান করতে হবে। ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া অনেকটা প্রস্রাবের সঙ্গেই বেরিয়ে যায়। আর বেশি করে পানি পান করলে কিডনিও ভালো থাকবে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ ফ ম হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রয়োজনে সঙ্গেই বহন করতে হবে পানি। যেকোনো ধরনের পাত্রেই পানি বহন করা যাবে। পাত্রটিকে প্রতিদিনই গরম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। আর এক দিনের সংরক্ষিত পানি অন্য দিন পান করা যাবে না।
বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য
শরীরের সব অঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করতে পারে, যখন তার ভান্ডারে পানি থাকে পর্যাপ্ত। কিডনির সমস্যা, প্রস্রাবে সংক্রমণ ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগগুলো এড়ানো যায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করেই। আ ফ ম হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘প্রবীণ ব্যক্তিরা সাধারণত তাঁদের খাবারের প্রতি তেমন মনোযোগী থাকেন না। অন্য যেসব উৎস থেকে আমরা পানি পাই, তা হয়তো তিনি খান না। তাই তাঁদের পানি পান করানোর ব্যাপারে পরিবারের সদস্যদের যত্নবান হতে হবে। যাঁদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, তাঁদের জন্য পরিমাণমতো পানি পান করা খুব জরুরি। পানি শুধু শরীরের বর্জ্য ধুয়ে-মুছে বের করে নিয়ে যায়, তা নয়; প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন অংশে পৌঁছেও দেয়।’
শিশুর জন্য পানি
শিশু পানিশূন্যতায় ভুগলে তার আচরণগত পরিবর্তন থেকেই কিন্তু আঁচ করা যাবে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রণব কুমার চৌধুরী বললেন সে সম্পর্কে।
পানিশূন্যতায় ভোগা শিশু নিস্তেজ হতে থাকে।
স্বাভাবিকের তুলনায় শারীরিক নাড়াচাড়া কমে যায়।
শিশু কাঁদলে তার চোখ থেকে পানি ঝরবে খুব কম অথবা ঝরবেই না।
মুখের ভেতরের অংশ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
মুখে লালা তৈরির হার কমে যাবে।
অকারণেই শিশু কান্নাকাটি করবে।
অল্প বয়সী শিশুর মাথার তালু ভেতরে ঢুকে যেতে পারে।
শিশুর তীব্র আগ্রহ থাকবে পানি পানের জন্য।
পানিশূন্যতায় যা ঘটতে পারে
শারীরবৃত্তীয় কারণেই শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায় স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু যখন শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যাওয়ার পর ঘাটতি আর পূরণ করা না হয়, তখনই দেখা দেয় নানা রকম সমস্যা।
গরমেও কম ঘামবে শরীর কিংবা ঘামবেই না।
দুর্বল হয়ে পড়বে শরীর।
মাথা ঘুরবে।
প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাবে। এর রং হবে হলুদ।
অধিক পানিশূন্যতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে যে কেউ।
গায়ের চামড়া শুষ্ক হয়ে যাবে।
পানিশূন্যতা এড়াতে
নিজের জন্য ব্যাগে সংরক্ষণ করে রাখুন একটি পানির বোতল।
চা-কফির বিকল্প হিসেবে বাড়িতে তৈরি ফলের রস আনতে পারেন ফ্লাস্কে করে।
বড়-ছোট সবাই খেতে পারে স্যালাইন।
পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে যাঁদের উচ্চরক্তচাপ আছে, তাঁরা লবণ মেশাবেন না।
এ সময় যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁদের পানি পান করতে হবে আরও বেশি।
কোমল পানীয়, কফি, চা পান কমিয়ে দিন।
ডাবের পানি পানে পারেন।
বাড়িতে তৈরি করা শরবত খান নিয়ম করে।
শিশুদের পানি পানে উৎসাহিত করুন।
ছোট শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান।
শিশুদের মৌসুমি ফল খাওয়াতে ভুলবেন না।
No comments:
Post a Comment