Saturday, June 8, 2013

প্রথম পাতা :: এবার বাধ্যতামূলক অবসরের খড়গ

এবার বাধ্যতামূলক অবসরের খড়গ

এবার বাধ্যতামূলক অবসরের খড়গ নেমে আসছে প্রশাসনে। আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রশাসনে অসন্তোষ সৃষ্টি ও সরকারকে অসহযোগিতার পরিকল্পনার কারণে প্রশাসন ক্যাডারের ৩৩ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে অবসর দেওয়া হয়েছে গত সাড়ে চার বছর ওএসডি থাকা যুগ্ম সচিব ড. আবদুল মোমেনকে। তার আগে অবসর দেওয়া হয় অতিরিক্ত সচিব নাসিমুল গনি ও যুগ্ম সচিব শফিক উল্লাহকে। গণকর্মচারী (অবসর) আইন ১৯৪৭ ধারার ক্ষমতাবলে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার যে কাউকে অবসর দিতে পারে। 
সূত্র মতে, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি সরকার সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। সরকারের একাধিক মহল ও সংস্থা মনে করে, কট্টর জামায়াত ও বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা আগস্ট মাস থেকে সরকারকে অসহযোগিতা শুরু করবেন। এক্ষেত্রে সরকারের শেষ সময়ে অঙ্গীকার পূরণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হবে। এ কারণে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে প্রশাসনিক বিভিন্ন স্তরে। এ আশঙ্কায় সরকার মাঠ প্রশাসনের পাশাপাশি সচিবালয়ের দিকে দৃষ্টি রাখছে। সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুষ্ট রাখতে বাজেটে স্থায়ী বেতন ও চাকরি কমিশনের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। শেষ বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার কঠোর। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এ জন্য সচিবালয়ের পাশাপাশি কতিপয় কর্মচারী নেতা ও বিভিন্ন শিক্ষক সমিতির নেতাদের ওপর সরকারের নজরদারি রয়েছে। তারা যে কোনো জটিল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার জন্য নেওয়া হচ্ছে প্রস্তুতি। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার মনে করেন, সরকারের শেষ সময়ে সতর্কতা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে প্রশাসনে অতিরিক্ত খবরদারি কখনোই সুফল বয়ে আনবে না। সরকারের কাজের বিষয়ে আন্তরিকতা থাকবে না কর্মকর্তাদের। এক ধরনের ভয় কাজ করবে সর্বদাই। তিনি বলেন, আজকে সরকারকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে আগে থেকে চলে আসা দলীয়করণের কারণে। প্রশাসনে অতিরিক্ত দলীয়করণের কারণে কিছু কর্মকর্তা সব সময়ই নিজেদের স্বার্থ হাসিলে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর দ্বারা তাদের লাভবান হতেও দেখা যায়। এ ধরনের অপসংস্কৃতি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিপথে পরিচালিত করে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পরবর্তীতে সাবেক পিএসসি চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেন বলেন, বাধ্যতামূলক অবসর সরকারের হাতে শেষ অস্ত্র। এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করতে হলে বুঝেশুনে করতে হবে। এটি জনপ্রশাসনে বিরূপ ফলও নিয়ে আসতে পারে। শৃঙ্খলা রক্ষার পদক্ষেপ বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, কাজ চলছে না এমন কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার একটি নিয়ম আছে। কিন্তু নিছক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। অবশ্য পদবিহীন অস্বাভাবিক পদোন্নতির কারণেও অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমাদের দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়ার কারণেই পুলিশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যে যার মতো করে চলছে। শাসকরা নিজেদের মতো করে পুলিশকে ব্যবহার করছেন। পুলিশ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের 'টার্গেট' বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের চক্ষুশূল হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ওএসডি কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ছে। এখন বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হচ্ছে। তবে এভাবে চললে কখনো দেশের উন্নতি হবে না।

No comments:

Post a Comment