Saturday, June 8, 2013

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
রাজধানীর বুকে আধুনিক গ্রাম
ইট, বালি, সুরকি ও কংক্রিটে গড়া রাজধানীর বুকে সবুজের শ্যামল চাদরে ঢাকা আধুনিক গ্রাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। যার চারপাশ রাজধানীর চাকচিক্য আর চরম ব্যস্ততা ঘিরে রাখলেও এ ক্যাম্পাসে দিনের প্রখর রোদে পাওয়া যায় সবুজ গাছের ছায়া। রাতের আঁধার ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার গান। আর বর্ষা এলে তো কথাই নেই, চারপাশ মাতিয়ে তুলে ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক। আর পিচঢালা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়বে সুবিশাল সবুজের মাঠ। যেখানে মৌসুমী শস্য উজ্জীবিত রাখে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরকে।

ক্যাম্পাসে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়বে শেকৃবির সুউচ্চ টাওয়ার। ১৯৭৯ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত কৃষি মেলার মূল আকর্ষণ ছিল এ টাওয়ার। পরে আর কৃষি মেলা না হলেও সিরামিক ইটের গাঁথুনিতে গড়া ৪৫ ফুট উঁচু লাল রঙের টাওয়ারটি ক্যাম্পাসের মূল আকর্ষণ হিসেবেই আছে। বিকাল হতেই শিক্ষার্থীদের আড্ডায় ও উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে টাওয়ার চত্বরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বর।

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ৮৬ একর জায়গা নিয়ে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানীর তেজগাঁও কৃষি গবেষণা সংলগ্ন ৩০০ একর জমিতে ১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা একে ফজলুল হক পূর্ব বাংলায় প্রথম কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। যার নাম দেওয়া হয় দি বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট। সর্বশেষ ২০০১ সালে ৯ জুলাই এ ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করা হয়। বর্তমনে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কৃষি অনুষদ, এগ্রিবিজনেজ ম্যানেজমেন্ট অনুষদ ও এনিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারী মেডিসিন অনুষদ নামে তিনটি অনুষদ আছে। তিনটি অনুষদে মোট ৩০টি বিভাগ, ১৭৮ জন শিক্ষকসহ মোট ২৮৩২ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। তার মধ্যে স্নাতকোত্তর ৯৪৬ জন ও পিএইচডি পর্যায়ে ২৪ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তিনটি ছাত্র হল ও ২টি ছাত্রী হল ও বিভিন্ন গবেষণার কাজে নিয়োজিত ৫টি ফার্ম রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস চত্বরে স্থাপন করা হয়েছে মিনি আবহাওয়া স্টেশন। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে গবেষণার কাজে ব্যবহার করতে পারবে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শহীদুর রশীদ ভঁূইয়ার তত্ত্বাবধানে সাউ সরিষা-১ ও সাউ সরিষা-২ নামে সরিষার দুটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়া উন্নত জাতের বাটন মাশরুম ও বিভিন্ন প্রজাতির ফুল উদ্ভাবনসহ কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই অবদান রেখে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর মো. শাদাত উল্লা তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, রাজধানী ঢাকার মাঝে আদর্শ একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ার জন্য আমরা সবাই একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদসহ যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের আধুনিক কৃষি শিক্ষামানে উন্নতি করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও সঠিক দায়িত্ব পালনই আমাদের এ পথচলাকে উজ্জ্বল ও গৌরবময় করে গড়ে তুলবে।

ছাত্রী হলের কাছে চোখে পড়বে চোখ ধাঁধানো সুউচ্চ বৃক্ষ নাগলিঙ্গম, যা ঢাকা শহরে দুর্লভ। ঘন সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত এসব গাছের ফল বড় ও বাদামি বর্ণের, দেখতে আকর্ষণীয়। নাগলিঙ্গম ছাড়াও কৃষি বনায়ন বিভাগের নিজস্ব সংগ্রহে আছে বিরল প্রজাতির ১৭৭টি ছোট গাছ, রয়েছে বিভিন্ন ওষুধি বৃক্ষ দাদমর্দন, উলটকম্বল, ছোট চাঁদ, গোড়া নিম, দেশি নিম, যষ্টিমধু, নিসিন্দা, পেস্তাবাদাম, শতমূল, বাসক, অশ্বগন্ধা ইত্যাদি।

নগরীর বুকে ছিমছাম, নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশ, মৌসুমী ফুল ও ফলের সৌন্দর্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর শুটিংয়ের অজস্র সম্ভার। আমবাগান, লিচু বাগান ও বটতলা, মন্দির, শহীদ মিনার এবং আরও কিছু বাড়তি আয়োজন। ঢাকার বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন ও ইংলিশ মিডিয়ামের কোমলমতি শিশুদের বাংলাদেশের বিভিন্ন শস্য, ফুল, ফল, বৃক্ষের সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে চলে আসতে পারেন কোলাহলমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ।

No comments:

Post a Comment