Wednesday, June 12, 2013

Great Man In Bangladesh.

স্বামী অভেদানন্দ

স্বামী অভেদানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম ছিল কালীপ্রসাদ চন্দ্র। তিনি ১৮৬৬ সালের ২ অক্টোবর উত্তর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[১] তাঁর পিতার নাম ছিল রসিকলাল চন্দ্র ও মাতার নাম ছিল নয়নতারা দেবী। ১৮৮৪ সালে আঠারো বছর বয়সে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার পূর্বে দক্ষিণেশ্বরে রামকৃষ্ণ পরমহংসেরসঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। ১৮৮৫ সালের এপ্রিল মাসে গৃহত্যাগ করে তিনি রামকৃষ্ণের কাছে চলে এসেছিলেন। প্রথমে শ্যামপুকুর ও পরে কাশীপুর উদ্যানবাটীতে রামকৃষ্ণের শেষ অসুস্থতার সময় কালীপ্রসাদ তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
১৮৮৬ সালে গুরুর মৃত্যুর পর কালীপ্রসাদ বরাহনগর মঠের একটি ঘরে নিজেকে আবদ্ধ করে ধ্যানে ডুবে থাকতে শুরু করেছিলেন। এই জন্য তাঁর গুরুভ্রাতারা তাঁকে "কালী তপস্বী" নাম দিয়েছিলেন।[১] রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তিনি স্বামী বিবেকানন্দ ও অন্যান্য গুরুভ্রাতাদের সঙ্গে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। সন্ন্যাস জীবনে তাঁর নাম হয়েছিল "স্বামী অভেদানন্দ"।
এরপর দশ বছর তিনি ভিক্ষোপজীবী সন্ন্যাসীর বেশে সমগ্র ভারত ভ্রমণ করেছিলেন। ভ্রমণকালে পওহারী বাবাত্রৈলঙ্গস্বামী ও স্বামী ভাস্করানন্দ প্রমুখ বিশিষ্ট সন্ন্যাসীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন অভেদানন্দ। গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী ভ্রমণ করে তিনি হিমালয়েও কিছুকাল সাধনা করেন।
আলমবাজার মঠ, ১৮৯৬ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রার পূর্বে স্বামী অভেদানন্দের বিদায়ী সম্ভাষণ) (বামদিক থেকে) দণ্ডায়মান: স্বামী অদ্ভুতানন্দ, যোগানন্দ, অভেদানন্দ, ত্রিগুণাতীতানন্দ, তূরীয়ানন্দ, নির্মলানন্দ, ও নিরঞ্জনানন্দ; উপবিষ্ট: সুবোধানন্দ, ব্রহ্মানন্দ (চেয়ারে), ওঅখণ্ডানন্দ
১৮৯৬ সালে লন্ডনে অবস্থানকালে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে পাশ্চাত্যে বেদান্তের বাণী প্রচারের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। ১৮৯৭ সালে অভেদানন্দ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেছিলেন। সেদেশে স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি নিউ ইয়র্ক বেদান্ত সোসাইটির ভার গ্রহণ করেছিলেন। এই সোসাইটির মাধ্যমে তিনি বেদান্ত ও রামকৃষ্ণ পরমহংসের বাণী প্রচার করতেন।[২]সুদীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, জাপান ও হংকং ভ্রমণ করে সফলভাবে বেদান্তের বাণী প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। অবশেষে ১৯২১ সালে হোনোলুলুতে প্যান-প্যাসিফিক এডুকেশন কনফারেন্সে যোগদানের পর তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন।[৩]
১৯২২ সালে অভেদানন্দ পদব্রজে হিমালয় পার হয়ে তিব্বতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বৌদ্ধ দর্শন ও লামাবাদ অধ্যয়ন করেছিলেন। হিমিস গুম্ফায় তিনি যিশুর অজ্ঞাত বছরগুলি সংক্রান্ত একটি পাণ্ডুলিপি আবিষ্কার করেছিলেন।[৪] এই পাণ্ডুলিপিটি রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ প্রকাশিত স্বামী অভেদানন্দ'স জার্নি ইনটু কাশ্মীর অ্যান্ড টিবেট গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
১৯২৩ সালে কলকাতায় তিনি "রামকৃষ্ণ বেদান্ত সোসাইটি" স্থাপন করেছিলেন। ১৯২৪ সালে তিনি দার্জিলিঙে স্থাপন করেছিলেন "রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ"। ১৯২৭ সালে তিনি রামকৃষ্ণ বেদান্ত সোসাইটির মুখপত্র বিশ্ববাণী পত্রিকাটি চালু করেছিলেন। ১৯২৭ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনিই এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করতেন।[৪] এই পত্রিকাটি আজও প্রকাশিত হয়ে থাকে। ১৯৩৬ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে তিনি কলকাতার টাউন হলে বিশ্বধর্মমহাসভার পৌরহিত্য করেছিলেন।[১]
১৯৩৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দার্জিলিঙের রামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠে অভেদানন্দ দেহরক্ষা করেন। মৃত্যুকালে তিনিই ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসের শেষ সাক্ষাৎশিষ্য।[৩]

No comments:

Post a Comment