Thursday, June 13, 2013

  • নিপুণ
    নিপুণ
    ছবি: খালেদ সরকার
1 2
চলচ্চিত্রে এর মধ্যেই নিজের একটি অবস্থান গড়ে তুলেছেন তিনি। দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলুন ঘুরে আসি নিপুণের আপন ভুবন থেকে

নিপুণের জীবন অনেকটা যেন সিনেমার গল্পের মতোই। সিনেমায় বড় পর্দায় তিনি অভিনয় করবেন, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবেন, তা কোনো দিন স্বপ্নেও আসেনি। বরং ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’—বাক্যটি মেনে লেখাপড়া, বিয়ে। তারপর বিদেশ-বিভুঁইয়ে ভালো চাকরি জুটিয়ে নিতেও তেমন কষ্ট হয়নি। কিন্তু হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাত! বাংলা সিনেমায় যেমন অকস্মাৎ কোটিপতি বনে যায় গরিব নায়ক, তেমনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক পাস করা নিপুণও হুট করে হয়ে গেলেন সিনেমার নায়িকা! এমনকি চলচ্চিত্রের নারী অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে নিজের একটি আসনও গড়লেন। কীভাবে?
সেই গল্প বলার আগে এবার একটু মায়ানগর নামের চলচ্চিত্রে নিপুণ অভিনীত মায়া চরিত্রটির কথা বলে নেওয়া যাক। সেদিন গুলশানে আমরা যখন নিপুণের সঙ্গে কথা বলছি, তখন তিনি বসে আছেন মায়ানগর সিনেমার সেটে। মাত্র একটি দৃশ্যের শুটিং শেষ করলেন। একটু পরেই শুরু হবে আরেকটি দৃশ্যের কাজ। এই অবসরে আমরা শুনছি নিপুণের গল্প—তাঁর জীবনকাহিনির পাশাপাশি মায়ানগর চলচ্চিত্রে তাঁর চরিত্রটি সম্পর্কেও জানা গেল, ‘এখানে আমি বস্তি থেকে উঠে আসা এক মেয়ে, কপালগুণে হয়ে যাই ডাকসাইটে মডেল। এক লহমায় পাল্টে যায় আমার জীবন।’
সিনেমার এই কাহিনির মতো অভিনেত্রী নিপুণের জীবনও কি বদলে যায়নি?
প্রথম প্রশ্নেই নিপুণের মুখে হাসি। সঙ্গে সঙ্গে কবুলও করলেন আমাদের কথা। ‘হ্যাঁ, বদলে গেছে। উচ্চমাধ্যমিকের পর ১৯৯৯ সালে আমি দেশ ছাড়ি। মস্কোতে পড়ালেখা করি ২০০৪ পর্যন্ত। এর মধ্যে আমার বিয়ে হয়। সেই সূত্রে পাড়ি জমাই যুক্তরাষ্ট্রে। ওখানে আমি একটি ফার্মেসিতে চাকরি করতাম। ভালোই চলছিল জীবন। ২০০৬-এর দিকে দেশে বেড়াতে এলাম। দেশে এসেই সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব! আমার আগে আমার চৌদ্দগুষ্টির কেউই সিনেমায় অভিনয় করেননি। শখের বসেই অভিনয় করলাম। তবে মজার বিষয় হলো, প্রথম আমি যে সিনেমায় অভিনয় করি, রত্নগর্ভা মা নামের সেই ছবিটি আজও মুক্তি পায়নি! পিতার আসন আমার প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি।’
২০০৬-এ প্রথম ছবি মুক্তির পর ছয় মাস যুক্তরাষ্ট্র ছয় মাস বাংলাদেশ—নিপুণের জীবনে শুরু হয় দারুণ দৌড়ঝাঁপ। তখনো তিনি ‘শখের অভিনয়শিল্পী।’ 
‘প্রেক্ষাগৃহগুলোতে নিজের বড় বড় পোস্টার দেখি, ভালোই তো লাগে। মনে হয়, এই একটা ছবি করব তারপর আবার ফিরে যাব। কিন্তু জীবনের মোড় ঘুরে গেল ২০০৮ সালে। সাজঘর ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলাম। তারপর ২০০৯-এ চাঁদের মতো বউ সিনেমায় অভিনয় করে আরেকবার পেলাম এ পুরস্কার। এর পরই ভাবলাম, নাহ্, অন্য কিছু নয়, চলচ্চিত্রই হবে আমার গন্তব্য। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকাপাকিভাবে চলে এলাম ঢাকায়।’
নিপুণ কথা বলছেন। এ সময় একজন তাঁকে তাড়া দিয়ে গেলেন পরের দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য। তবে তাঁর মধ্যে কোনো তাড়াহুড়া নেই, যেন ‘নট নড়ন-চড়ন’ ভাব। কথায় পেয়ে বসেছে তাঁকে।
এনটিভিতে প্রচারিত হাস্যরসাত্মক রিয়ালিটি শো ‘হা show’-এর বিচারক ছিলেন আপনি...
কথা শেষ করতে পারলাম না, মুখের কথা কেড়ে নিলেন তিনি, ‘হ্যাঁ, এই প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে তেল-ঘি-মাখন ভালোই পেয়েছি।’
মানে?
‘হা show’-এর বিচারক হাসতে হাসতে জবাব দিলেন, ‘যখন প্রতিযোগিতাটি চলছিল, বিভিন্ন প্রতিযোগীর অভিভাবকেরা নানাভাবে আমাদের পেছনে তেল-ঘি ঢালার চেষ্টা করতেন। একটি ঘটনা বলি: কিছুক্ষণের মধ্যে প্রতিযোগিতার শুটিং শুরু হবে। বিচারকেরা এক ঘরে এবং প্রতিযোগীরা বসে আছে অন্য এক জায়গায়। হঠাৎ আমাদের ঘরে মেয়েকে নিয়ে প্রবেশ করলেন এক অভিভাবক। আমাকে দেখেই তিনি বললেন, “আমার মেয়ে খুব সুন্দর নাচতে পারে।” এরপর মেয়েকে বললেন, “এই নাচ দেখাও তো।” মেয়েটি নাচতে শুরু করল। এদিকে এই ঘটনায় আমি তো থ, তাঁদের যতই বলি, আপনারা এখন যান; কে শোনে কার কথা। একে একে নাচ-গান—মেয়েকে সবই দেখাতে বললেন তিনি। কিন্তু এতসব করেও কোনো লাভ হয়নি। তাঁদের তেল-ঘি-মাখন—সব বিফলে গেছে...হা হা হা।’
নিপুণের উচ্চ হাসির রেশ অন্যদেরও স্পর্শ করেছে। তবে আর বেশিক্ষণ হাসতে পারলেন না—তাঁর সামনে তখন দাঁড়িয়ে আছেন মায়ানগর ছবির পরিচালক। এখনই শট দিতে যেতে হবে তাঁকে। অগত্যা আড্ডাটিও গোটাতে হবে আমাদের। তবে আড্ডার শেষ কথা না বলেই চলে যাবেন নিপুণ, তা কি হয়! তাই যেতে যেতেই বললেন, ‘শিক্ষিত মানুষজন আমাদের চলচ্চিত্রে যত বেশি আসবেন, ততই উন্নত হবে চলচ্চিত্রমাধ্যম। চলচ্চিত্র নিয়ে আমার স্বপ্ন অনেক। অনেক দূর যেতে চাই আমি।’

No comments:

Post a Comment