সামাজিক অবক্ষয়ের বহি:প্রকাশ
একজন আদর্শ শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া। তিনি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া গার্লস স্কুলের ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক। গত সোমবার ভোরে তাহার বাসায় ঢুকিয়া পরিবার-পরিজন ও কোমলমতি প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের সম্মুখে ছুরিকাঘাত করিয়া হত্যা করে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক কিশোর। শিক্ষকের অপরাধ তিনি ঐ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে নকল করিতে বাধা প্রদান করেন। উল্লেখ্য, পরীক্ষার হলে ঐ শিক্ষার্থী শুরু হইতেই শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করিলেও এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আসিয়া বিষয়টি মীমাংসা করিবার চেষ্টা করেন।
কবি কাদের নেওয়াজের 'শিক্ষকের মর্যাদা' নামক একটি বহুল পঠিত কবিতা আছে যাহা স্কুলপাঠ্যও বটে। এই কবিতায় দেখা যায়, বাদশাহ আলমগীরের ছেলে শিক্ষকের পা ধৌত করিবার কাজে পানি ঢালিয়া সহযোগিতা করিতেছে। এই দেখিয়া বাদশাহ নামদার শিক্ষককে রাজদরবারে তলব করিলেন এবং কেন তাহার সন্তান নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধৌত করিয়া দিল না তাহার কৈফিয়ত চাহিলেন। সেখান হইতে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক আজ কতটা নিচে নামিয়া গিয়াছে তাহা সহজেই অনুমেয়। কেরানীগঞ্জের এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যে কোনো বিবেকবান মানুষ বলিতে পারেন যে, শিক্ষা ব্যবস্থায় নীতি-নৈতিকতাকে সর্বোচ্চ স্থান না দিলে শেষমেষ পরিণতি এমনই হয়। এইদিকে এই ঘটনার পর শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ নিহত শিক্ষকের লাশ দেখিতে মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে যান। তিনি নিহতের স্ত্রীর চাকুরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ঐ শিক্ষকের দুই অবুঝ শিশুসন্তান রহিয়াছে। এই বিবেচনায় মন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়াছেন। কিন্তু তিনি কতজনকে চাকুরী দিবেন? সমাজে এই ধরনের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য সবার আগে দরকার ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা। সেখানেই আমরা তিমির অন্ধকারে রহিয়াছি।
প্রিয় শিক্ষকের হত্যাকাণ্ডের পর সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করিয়াছেন, বিচারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করিয়াছেন। তাহারা ইহার বাহিরে আর কীইবা করিতে পারেন! যে সমাজে বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে, বিচারের জন্য বত্সরের পর বত্সর ও প্রজন্ম হইতে প্রজন্মান্তরে কোর্ট-কাছারিতে ঘুরিতে হয়, কাহারও মুখের দিকে চাহিয়া বা আদেশে-নির্দেশে, আকারে-ইঙ্গিতে অথবা পরিবেশ-পরিস্থিতিতে রায় দেওয়া হয়, সেখানে ইহার চাইতে বেশি কিছু দাবি করা যায় না। ইদানিং স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটিতে অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যোত্সাহী ব্যক্তির বদলে যাহাদের অন্তর্ভুক্ত করা হইতেছে তাহাদের পহেলা নম্বর কাজ কী তাহা আজ কাহারও অজানা নহে। প্রভাব বিস্তার এবং অনিয়ম ও দুর্নীতিকে কেন্দ্র করিয়া ক্ষমতার যে অশুভ বলয় তৈরি হইয়াছে শিক্ষাঙ্গনে, তাহাতে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়াছে বহুগুণ। তাই তাহারা এখন আপস বা মীমাংসা করিয়াও বাঁচিতে পারেন না।
শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক হত্যার মাধ্যমে সেই নিরাপত্তাহীনতায় একটি নূতন মাত্রা লাভ করিল। অতীতে ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পরীক্ষার হলে নকল করিতেন, তখনও শিক্ষকরা ছিলেন অসহায়। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখিলাম, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষকরা স্বয়ং নকল করিবার কাজে সহযোগিতা করিতেছেন। এমনকি খাতায় নিজেরাও লিখিয়া দিতেছেন। পরীক্ষার খাতা একেবারে সাদা রাখিলেও চাকুরী হারাইবার ভয়ে বড় বড় অধ্যাপকরা নিজেরাই লিখিয়া দিয়া এমবিবিএস ডিগ্রি দিয়াছেন এমন অভিযোগও আছে। রাজনৈতিক কারণে প্রথম শ্রেণী পাওয়াইয়া দেওয়া ও পরে শিক্ষক বানাইয়া শিক্ষক সমিতিতে ভোটার বাড়ানোর দৃষ্টান্তও কম নহে। ইহার প্রভাব যদি এতদিনে স্কুল-কলেজেও পড়িয়া থাকে, তাহা হইলে তাহাকে কি অস্বাভাবিক বলা যাইবে? একদিকে ক্ষমতার জোরে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা হইতেছে, অপমানিত ও অপদস্ত করা হইতেছে নানাভাবে, অন্যদিকে একজন স্কুলশিক্ষককেও প্রাণ দিতে হইল। ইহাতে আমরা মনেপ্রাণে আঘাত ও দুঃখ পাইলেও কিছুতেই অবাক হইতে পারিতেছি না।
কবি কাদের নেওয়াজের 'শিক্ষকের মর্যাদা' নামক একটি বহুল পঠিত কবিতা আছে যাহা স্কুলপাঠ্যও বটে। এই কবিতায় দেখা যায়, বাদশাহ আলমগীরের ছেলে শিক্ষকের পা ধৌত করিবার কাজে পানি ঢালিয়া সহযোগিতা করিতেছে। এই দেখিয়া বাদশাহ নামদার শিক্ষককে রাজদরবারে তলব করিলেন এবং কেন তাহার সন্তান নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধৌত করিয়া দিল না তাহার কৈফিয়ত চাহিলেন। সেখান হইতে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক আজ কতটা নিচে নামিয়া গিয়াছে তাহা সহজেই অনুমেয়। কেরানীগঞ্জের এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যে কোনো বিবেকবান মানুষ বলিতে পারেন যে, শিক্ষা ব্যবস্থায় নীতি-নৈতিকতাকে সর্বোচ্চ স্থান না দিলে শেষমেষ পরিণতি এমনই হয়। এইদিকে এই ঘটনার পর শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ নিহত শিক্ষকের লাশ দেখিতে মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে যান। তিনি নিহতের স্ত্রীর চাকুরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ঐ শিক্ষকের দুই অবুঝ শিশুসন্তান রহিয়াছে। এই বিবেচনায় মন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়াছেন। কিন্তু তিনি কতজনকে চাকুরী দিবেন? সমাজে এই ধরনের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড বন্ধের জন্য সবার আগে দরকার ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা। সেখানেই আমরা তিমির অন্ধকারে রহিয়াছি।
প্রিয় শিক্ষকের হত্যাকাণ্ডের পর সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করিয়াছেন, বিচারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করিয়াছেন। তাহারা ইহার বাহিরে আর কীইবা করিতে পারেন! যে সমাজে বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে, বিচারের জন্য বত্সরের পর বত্সর ও প্রজন্ম হইতে প্রজন্মান্তরে কোর্ট-কাছারিতে ঘুরিতে হয়, কাহারও মুখের দিকে চাহিয়া বা আদেশে-নির্দেশে, আকারে-ইঙ্গিতে অথবা পরিবেশ-পরিস্থিতিতে রায় দেওয়া হয়, সেখানে ইহার চাইতে বেশি কিছু দাবি করা যায় না। ইদানিং স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটিতে অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যোত্সাহী ব্যক্তির বদলে যাহাদের অন্তর্ভুক্ত করা হইতেছে তাহাদের পহেলা নম্বর কাজ কী তাহা আজ কাহারও অজানা নহে। প্রভাব বিস্তার এবং অনিয়ম ও দুর্নীতিকে কেন্দ্র করিয়া ক্ষমতার যে অশুভ বলয় তৈরি হইয়াছে শিক্ষাঙ্গনে, তাহাতে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়াছে বহুগুণ। তাই তাহারা এখন আপস বা মীমাংসা করিয়াও বাঁচিতে পারেন না।
শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক হত্যার মাধ্যমে সেই নিরাপত্তাহীনতায় একটি নূতন মাত্রা লাভ করিল। অতীতে ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পরীক্ষার হলে নকল করিতেন, তখনও শিক্ষকরা ছিলেন অসহায়। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখিলাম, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষকরা স্বয়ং নকল করিবার কাজে সহযোগিতা করিতেছেন। এমনকি খাতায় নিজেরাও লিখিয়া দিতেছেন। পরীক্ষার খাতা একেবারে সাদা রাখিলেও চাকুরী হারাইবার ভয়ে বড় বড় অধ্যাপকরা নিজেরাই লিখিয়া দিয়া এমবিবিএস ডিগ্রি দিয়াছেন এমন অভিযোগও আছে। রাজনৈতিক কারণে প্রথম শ্রেণী পাওয়াইয়া দেওয়া ও পরে শিক্ষক বানাইয়া শিক্ষক সমিতিতে ভোটার বাড়ানোর দৃষ্টান্তও কম নহে। ইহার প্রভাব যদি এতদিনে স্কুল-কলেজেও পড়িয়া থাকে, তাহা হইলে তাহাকে কি অস্বাভাবিক বলা যাইবে? একদিকে ক্ষমতার জোরে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা হইতেছে, অপমানিত ও অপদস্ত করা হইতেছে নানাভাবে, অন্যদিকে একজন স্কুলশিক্ষককেও প্রাণ দিতে হইল। ইহাতে আমরা মনেপ্রাণে আঘাত ও দুঃখ পাইলেও কিছুতেই অবাক হইতে পারিতেছি না।
No comments:
Post a Comment